সোনা পাচারে যুক্ত ছিলো এমপি আনার, ‘সোনার আনার’ বলে ডাকতো
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৩২:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার সীমান্ত পেরিয়ে সোনা পাচারের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। আর এ কারণে তাকে অনেকে ‘সোনার আনার’ বলেও ডাকেন। তিনি পাচার চক্রেরও মূলহোতা ছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র দাবি করেছে, চিকিৎসার নাম করে গত কয়েক বছর ধরে কয়েকজন বাংলাদেশি বিপুল টাকা ভারতে নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন সোনা পাচারের কারবারে। এমনকি সেই টাকার একাংশ অপরাধ জগতেও লগ্নি করা হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। কলকাতায় চিকিৎসার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের পিছনেও কাজ করতো এমপি আজিম ।
সম্প্রতি, কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে নৃশংস ভাবে হত্যার শিকার হন ঝিনাইদহ-৪ অঅসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। এখন পর্যন্ত তার দেহ বা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র পাওয়া যায়নি। শুধু আটক কসাই জিহাদ হাওলাদার খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। হত্যার অভিযোগ উঠেছে আজিমের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের বিরুদ্ধে।
তদন্তকারীদের দাবি, শাহিনও সোনা পাচারে যুক্ত ছিলো এবং সে এমপি আজিমের কাছে ১৫ কোটি টাকা পেতো। সেই টাকা আজিম দিতে গড়িমসি করার কারণেই তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদের জন্য বিশেষ ‘মেডিক্যাল ভিসা’-র বন্দোবস্ত করে দিল্লি। করোনার পর একটা সময় সাধারণ ভিসা দেয়া বন্ধ থাকলেও ‘মেডিক্যাল ভিসা’ দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের তথ্য, বাংলাদেশি রোগীরা কলকাতা ছাড়াও হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি ও মুম্বইয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভারতীয়দের চিকিৎসার পুরো খরচ নগদে দেয়ার সুযোগ না থাকলেও, বাংলাদেশিদের সেই সুযোগ দেয়া আছে। কারণ, সে দেশের অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা ভারতে অচল। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা গত কয়েক বছর থেকে চিকিৎসার অজুহাতে কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এনেছে।
শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের কোনো কোনো নাগরিক হাসপাতালে এসে কোনো একটি শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ চান। স্বভাবতই চিকিৎসক তাকে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। সেই ‘প্রেসক্রিপশন’ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিছুটা সময় চেয়ে ফিরে যান বাংলাদেশে। কিছু দিন পর সাথে প্রচুর নগদ অর্থ নিয়ে তিনি আবার ভারতে ঢোকেন।
সীমান্তে তাকে আটকালে তিনি ‘প্রেসক্রিপশন’ দেখিয়ে জানান, চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি ওই টাকা সাথে করে নিয়ে আসছেন। উল্লেখ্য, ভারতের যে কোনো প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ কত নগদের প্রয়োজন, তা আগে থেকে নির্ধারণ করা যায় না। ফলে, বিনা বাধায় সেই নগদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চলে আসতে পারেন ভারতে।
অভিযোগ, সেই টাকা পরে চলে যায় সোনা পাচারে। এসব কারণে সম্প্রতি মেডিক্যাল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করেছে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন। করোনাকালে দেয়া বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি মেডিক্যাল ভিসা মেয়াদ ফুরোনোর আগেই বাতিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এমপি আজিমও চলতি বছরের এপ্রিলে কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তার মালপত্রের মধ্যে থেকে সেই প্রেসক্রিপশন পেয়েছেন সিআইডির তদন্তকারীরা। সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও তদন্তকারীরা খোঁজ-খবর করেছেন। -খবর আনন্দবাজার