ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনের মাছ শিকারে বিএনপি নেতার আবদার, পরে হুমকি

আবু হানিফ, বাগেরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের আহরণ নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকার করতে দিতে প্রথমে আবদার ও পরে বন কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য বন কর্মকর্তার কাছে বিএনপির এই কেন্দ্রিয় নেতার অন্যায় আবদার ও বন কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় বন বিভাগের চলছে তোলপাড়।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন দখলে অভিযোগের নিয়ে প্রশ্ন উঠা পর এবার সুন্দরবনের পাশাপশি কেন্দ্রি এই বিএনপি নেতার লোকজনের বিরুদ্ধে মোংলা শিল্পাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারেও অভিযোগ উঠেছে।

কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের বাড়ী বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগরে।

বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক হওয়ায় তার এলাকায় জানান, দিতে এখানে সেখানে কিছু ফেষ্টুন লাগিয়ে দেয় হয়। গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই বিএনপি নেতা মোংলা ও রামপালে রাজনৈতিক একটি বলয় সৃষ্টি করতে থাকেন। যদিও গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচি করতে তাকে এলাকায় খুব একটা দেখা যায়নি। এখন মোংলায় শিল্প এলাকাসহ সুন্দরবনে আধিপত্য বিস্তার করতে তার কিছু অনুসারীদের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোংলার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাবুল নামে তার ঘনিষ্ঠ নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়া শুরু করেছে। প্রতিনিধি হিসেবে এমনকি এই বাবুলকে তার প্রতিনিধি হিসেবে থানা ও সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে পরিচয় করিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা শামীমের বিরুদ্ধে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড আহরণ নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের অনুসারীরা উঠেপড়ে লেগেছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মরাপশুর, নন্দবালা, আন্ধারমানিক, ঘাঘরামারী খাল ও টেংরার খালে বিএনপি নেতা শামীম তার লোকজনকে মাছ শিকারের জন্য একাধিকবার ফোন করেন বন কর্মকর্তাদের হুমকি দেন।

মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বোদ্ধমারী বাজারের বয়ার বাবুল ও দক্ষিণ হলদিবুনিয়ার মাসুম হাওলাদারসহ একাধিক লোকের জন্য সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য জোর সুপারিশ করেন বিএনপি নেতা শামীম।

বন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে শামীম বলেন, কেন দিবেন না, আপনারা সবই পারেন। যদি অনুমতি না দেন তাহলে আপনারদের প্রধান বন সংরক্ষক অনুমতি দিবেন। তখন ওই বন কর্মকর্তা বিএনপি নেতা শামীমকে বলেন, ইউনেস্কো ঘোষিত আহরণ নিষিদ্ধ খালে মাছ ধরার কখনোই কোন উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করবেন না, এমনকি বন উপদষ্টাও সুপারিশ করবেন না।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল করিম বলেন, আমাদের কাছে নৈতিক-অনৈতিক অনেক তদ্বির আসে। কখনো কখনো কর্মকর্তাদের হুমকিও দেয়া হয়। কোন অবস্থাতেই ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ খালে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হবেনা। কেউকে মাছ আহরণের অনুমতিও দেওয়া প্রশ্নই আসেনা।

বিএনপি নেতা শামীমের ঘনিষ্ঠ অনুসারী চিলা ইউনিয়নের বাবুল বলেন, কৃষিবিদ শামীম ভাই কেন আমাকে এতো ভালবাসেন তা জানিনা, সে আমাকে মোংলার ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা, বন কর্মকর্তা ও থানার ওসির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার (বাবুল) সাথে যোগাযোগ রাখতে বলে দিয়েছেন।

রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেসহ মোংলার বিভিন্ন শিল্প কারখানার একধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ আগস্টের পর নিয়মিত ভাবে বিএনপি নেতা শামীম সাহেব আমাদের ফোন করে আসছেন, বুঝেন তো আমাদের এখন তাদের সাথে লিয়াজো করে চলতে হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য কোন বন কর্মকর্তাকে ফোন করিনি। বিষ দিয়ে মাছ শিকার করার অপরাধে কয়েকজন জেলে আটক হলে তাদেরকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। আমার সন্মানে তারা জেলেদের ছেড়ে দিয়েছেন। আর রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে চাঁদাবাজি ও ব্যবসার ভাগ চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মোংলা-রামপালে সংসদ নির্বাচন করবো এজন্য কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সুন্দরবনের মাছ শিকারে বিএনপি নেতার আবদার, পরে হুমকি

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের আহরণ নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকার করতে দিতে প্রথমে আবদার ও পরে বন কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য বন কর্মকর্তার কাছে বিএনপির এই কেন্দ্রিয় নেতার অন্যায় আবদার ও বন কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় বন বিভাগের চলছে তোলপাড়।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন দখলে অভিযোগের নিয়ে প্রশ্ন উঠা পর এবার সুন্দরবনের পাশাপশি কেন্দ্রি এই বিএনপি নেতার লোকজনের বিরুদ্ধে মোংলা শিল্পাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারেও অভিযোগ উঠেছে।

কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের বাড়ী বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগরে।

বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক হওয়ায় তার এলাকায় জানান, দিতে এখানে সেখানে কিছু ফেষ্টুন লাগিয়ে দেয় হয়। গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই বিএনপি নেতা মোংলা ও রামপালে রাজনৈতিক একটি বলয় সৃষ্টি করতে থাকেন। যদিও গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী কোন কর্মসূচি করতে তাকে এলাকায় খুব একটা দেখা যায়নি। এখন মোংলায় শিল্প এলাকাসহ সুন্দরবনে আধিপত্য বিস্তার করতে তার কিছু অনুসারীদের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোংলার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাবুল নামে তার ঘনিষ্ঠ নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়া শুরু করেছে। প্রতিনিধি হিসেবে এমনকি এই বাবুলকে তার প্রতিনিধি হিসেবে থানা ও সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে পরিচয় করিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা শামীমের বিরুদ্ধে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড আহরণ নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের অনুসারীরা উঠেপড়ে লেগেছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মরাপশুর, নন্দবালা, আন্ধারমানিক, ঘাঘরামারী খাল ও টেংরার খালে বিএনপি নেতা শামীম তার লোকজনকে মাছ শিকারের জন্য একাধিকবার ফোন করেন বন কর্মকর্তাদের হুমকি দেন।

মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বোদ্ধমারী বাজারের বয়ার বাবুল ও দক্ষিণ হলদিবুনিয়ার মাসুম হাওলাদারসহ একাধিক লোকের জন্য সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য জোর সুপারিশ করেন বিএনপি নেতা শামীম।

বন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে শামীম বলেন, কেন দিবেন না, আপনারা সবই পারেন। যদি অনুমতি না দেন তাহলে আপনারদের প্রধান বন সংরক্ষক অনুমতি দিবেন। তখন ওই বন কর্মকর্তা বিএনপি নেতা শামীমকে বলেন, ইউনেস্কো ঘোষিত আহরণ নিষিদ্ধ খালে মাছ ধরার কখনোই কোন উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করবেন না, এমনকি বন উপদষ্টাও সুপারিশ করবেন না।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল করিম বলেন, আমাদের কাছে নৈতিক-অনৈতিক অনেক তদ্বির আসে। কখনো কখনো কর্মকর্তাদের হুমকিও দেয়া হয়। কোন অবস্থাতেই ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ খালে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হবেনা। কেউকে মাছ আহরণের অনুমতিও দেওয়া প্রশ্নই আসেনা।

বিএনপি নেতা শামীমের ঘনিষ্ঠ অনুসারী চিলা ইউনিয়নের বাবুল বলেন, কৃষিবিদ শামীম ভাই কেন আমাকে এতো ভালবাসেন তা জানিনা, সে আমাকে মোংলার ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা, বন কর্মকর্তা ও থানার ওসির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার (বাবুল) সাথে যোগাযোগ রাখতে বলে দিয়েছেন।

রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেসহ মোংলার বিভিন্ন শিল্প কারখানার একধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ আগস্টের পর নিয়মিত ভাবে বিএনপি নেতা শামীম সাহেব আমাদের ফোন করে আসছেন, বুঝেন তো আমাদের এখন তাদের সাথে লিয়াজো করে চলতে হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুন্দরবনের নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের জন্য কোন বন কর্মকর্তাকে ফোন করিনি। বিষ দিয়ে মাছ শিকার করার অপরাধে কয়েকজন জেলে আটক হলে তাদেরকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনেছি। আমার সন্মানে তারা জেলেদের ছেড়ে দিয়েছেন। আর রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে চাঁদাবাজি ও ব্যবসার ভাগ চাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মোংলা-রামপালে সংসদ নির্বাচন করবো এজন্য কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।