ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে দখলে নিলো বিএনপি নেতা

মাদারীপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটেবাড়ি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার একটি ঘরে একাধিক ছবি, বই ও আসবাব ভাঙচুর করে ফেলে দেন তিনি। পরে ওই ঘরে ওএমএসের চাল মজুত করা হয়।

অভিযুক্ত ওই বিএনপি নেতার নাম সোহেল হাওলাদার। তিনি বিএনপির ডাসার উপজেলা কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি একই উপজেলার কাজীবাকাই এলাকায়।

বর্তমানে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ শূন্য রয়েছে। তাই এই বিষয়ে কালকিনির ইউএনও উত্তম কুমার দাশ বলেন, সোহেল হাওলাদার নামের বিএনপির এক নেতা লেখকের ঘর দখলে নিয়ে ওএমএসের ডিলারের চাল রেখেছিলেন। আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তিনি ওই চাল সরিয়ে ফেলেছেন। ওই দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডাসার ও কালকিনি উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলা ভেঙ্গে নব গঠিত ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মৌজায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৭ একর ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে ২ একর ৯৭ শতাংশ জমি সরকারের খাসজমি হিসেবে রেকর্ড। গত শনিবার দুপুরে লেখকের পৈতৃক ভিটার একটি টিনশেড ঘরের (সুনীল স্মৃতি পাঠাগার) তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার ও তার লোকজন। পরে তারা লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, বই, আসবাব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ একাধিক ছবি ভাঙচুর করেন। এরপর তারা ওই ঘরে ওএমএসের প্রায় এক ট্রাক চাল রেখে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া লেখকের বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসক কর্তৃক লাগানো একটি সাইনবোর্ডও ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়।

লেখকের পৈতৃক ভিটা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকেই সোহেল হাওলাদার লোকজন নিয়ে লেখকের জমি তার নিজের বলে দাবি করেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী সমর্থক তার সমালোচনা করলে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালান সোহেল ও তার লোকজন। রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তন হওয়ায় এখন ভয়ে গ্রামের কেউ কথা বলছেন না। এই সুযোগে সোহেল তার লোকজন নিয়ে এখানকার টিনশেড ঘরের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই ঘরে আবার ওএমএসের চাল রাখেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই জানে। কিন্তু গত কার্যত বাড়ি উদ্ধারে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে এখনো দেখা যায়নি।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়িতে থাকা একটি টিনশেড লাইব্রেরী ঘরের তালা ভেঙে এক ব্যক্তি দখলে নেওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা বেদখল হওয়ায় ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীরা। তাদের দাবি, দখলদারদের শাস্তি নিশ্চিত করে লেখকের ভিটা দখলমুক্ত করে তা সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে হবে।

কথাসাহিত্যিক মাসুদ সুমন বলেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও আমাদের প্রিয় লেখকের শেষ স্মৃতিচিহ্নটি তার পৈতৃক ভিটা। যেটা দখলের কথা শুনে আমাদের হৃদয় ব্যথিত করেছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এদিকে, সুনীলের স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৫ সালে মাদারীপুরে সুনীল সাহিত্য ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ চালু করা হয়। সেই পুরস্কার প্রাপ্ত গল্পকার রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জীবিত থাকা অবস্থায় তার ৭৫তম জন্মদিন পূর্ব মাইজপাড়ার বাড়িতে আমরা উদযাপন করেছিলাম। তখন সপ্তাহব্যাপী সুনীল মেলারও আয়োজন করা হয়েছিল ওই বাড়িতে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে তার ভিটেবাড়ি দখল হয়ে যাওয়াটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক।

উল্লেখ্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে দখলে নিলো বিএনপি নেতা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটেবাড়ি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার একটি ঘরে একাধিক ছবি, বই ও আসবাব ভাঙচুর করে ফেলে দেন তিনি। পরে ওই ঘরে ওএমএসের চাল মজুত করা হয়।

অভিযুক্ত ওই বিএনপি নেতার নাম সোহেল হাওলাদার। তিনি বিএনপির ডাসার উপজেলা কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি একই উপজেলার কাজীবাকাই এলাকায়।

বর্তমানে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ শূন্য রয়েছে। তাই এই বিষয়ে কালকিনির ইউএনও উত্তম কুমার দাশ বলেন, সোহেল হাওলাদার নামের বিএনপির এক নেতা লেখকের ঘর দখলে নিয়ে ওএমএসের ডিলারের চাল রেখেছিলেন। আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তিনি ওই চাল সরিয়ে ফেলেছেন। ওই দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডাসার ও কালকিনি উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলা ভেঙ্গে নব গঠিত ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মৌজায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৭ একর ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে ২ একর ৯৭ শতাংশ জমি সরকারের খাসজমি হিসেবে রেকর্ড। গত শনিবার দুপুরে লেখকের পৈতৃক ভিটার একটি টিনশেড ঘরের (সুনীল স্মৃতি পাঠাগার) তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার ও তার লোকজন। পরে তারা লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, বই, আসবাব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ একাধিক ছবি ভাঙচুর করেন। এরপর তারা ওই ঘরে ওএমএসের প্রায় এক ট্রাক চাল রেখে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া লেখকের বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসক কর্তৃক লাগানো একটি সাইনবোর্ডও ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়।

লেখকের পৈতৃক ভিটা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি বলেন, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকেই সোহেল হাওলাদার লোকজন নিয়ে লেখকের জমি তার নিজের বলে দাবি করেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী সমর্থক তার সমালোচনা করলে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালান সোহেল ও তার লোকজন। রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তন হওয়ায় এখন ভয়ে গ্রামের কেউ কথা বলছেন না। এই সুযোগে সোহেল তার লোকজন নিয়ে এখানকার টিনশেড ঘরের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই ঘরে আবার ওএমএসের চাল রাখেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই জানে। কিন্তু গত কার্যত বাড়ি উদ্ধারে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে এখনো দেখা যায়নি।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়িতে থাকা একটি টিনশেড লাইব্রেরী ঘরের তালা ভেঙে এক ব্যক্তি দখলে নেওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা বেদখল হওয়ায় ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাহিত্যপ্রেমীরা। তাদের দাবি, দখলদারদের শাস্তি নিশ্চিত করে লেখকের ভিটা দখলমুক্ত করে তা সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে হবে।

কথাসাহিত্যিক মাসুদ সুমন বলেন, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও আমাদের প্রিয় লেখকের শেষ স্মৃতিচিহ্নটি তার পৈতৃক ভিটা। যেটা দখলের কথা শুনে আমাদের হৃদয় ব্যথিত করেছে। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এদিকে, সুনীলের স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৫ সালে মাদারীপুরে সুনীল সাহিত্য ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ চালু করা হয়। সেই পুরস্কার প্রাপ্ত গল্পকার রিপনচন্দ্র মল্লিক বলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জীবিত থাকা অবস্থায় তার ৭৫তম জন্মদিন পূর্ব মাইজপাড়ার বাড়িতে আমরা উদযাপন করেছিলাম। তখন সপ্তাহব্যাপী সুনীল মেলারও আয়োজন করা হয়েছিল ওই বাড়িতে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে তার ভিটেবাড়ি দখল হয়ে যাওয়াটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক।

উল্লেখ্য, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান।