ঢাকার সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছেন মন্ত্রী-এমপিরা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
গণ আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর কোনো মন্ত্রী-এমপির কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকজন মন্ত্রিসভার সদস্যদের ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, দেশ জুড়ে সহিংসতার মধ্যেই অনেক মন্ত্রী-এমপি দেশ ছেড়েছেন। তবে কেউ কেউ ফিরেও এসেছিলেন। ১৪ জুলাই দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ দেখে বিদেশ থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেটে ঢাকা ছাড়েন অনেক প্রভাবশালী। ৫ আগস্ট (সোমবার) পর্যন্ত শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দেশ ছাছেন। এসব নেতারা রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন , থাইল্যান্ড ও দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন।
তবে, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সরকারের মন্ত্রীরা হতাশ ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে অনেকেই আত্মীয়স্বজন অথবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন এবং আত্মগোপনে রয়েছেন। ঘটনার গভীরতা আঁচ করতে পেরে অনেকেই সপরিবারে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এই অবস্থায় দেশত্যাগ করতে না অনেক নেতাই বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছেন।
দলের সভাপতি তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশ ত্যাগ করায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতারা এখন দিশেহারা। বেশিরভাগই গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
৫ আগস্ট (সোমবার) দুপুরে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছারেন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাদের ওপর শুর হয় হামলা। হামলা-ভাঙচুর করা হয় বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। শুধু রাজধানীতেই নয়, আওয়ামী লীগের শাখা, সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার সময় জুনাইদ আহমেদ পলককে আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদকেও আটকে দেয়া হয়।
এদিকে, গত রোববার এমপি-মন্ত্রী ও সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর অনেকে বিশেষ প্রটোকল চেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠি দেয়। এরমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিমানে দেশ ছাড়েন।
বিমানবন্দর সূত্রের তথ্যানুযায়ী, মন্ত্রীদের মধ্যে গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির,হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি পরিবারের ৪ সদস্যসহ মালয়েশিয়া, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান কানাডায় গেছেন।
এছাড়া কুমিল্লা-৮ আসনের এমপি আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৮ আসনের এমপি মাহমুদ হাসান সুমন, ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজল ভারত। ভোলা-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব দুবাই, সংরক্ষিত আসনের এমপি পারভীন জামান ব্যাংকক, চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র, কুমিল্লা-৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর আলম সিঙ্গাপুরে রয়েছেন।
এ ছাড়া সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, এমপি নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি হাবিব হাসান,সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক,ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে রয়েছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রিসভার সদস্য এখনো দেশের ভেতরেই রয়েছেন। নিরাপদে থেকেই অনেকে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
পালাতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গ্রেপ্তার হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মইনুল হাসান।
নিউমার্কেট থানার ওসি জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নকালে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নিউমার্কেট থানায় দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন আইনজীবী আনিসুল হক । এরপর ওই বারই তাকে আইনমন্ত্রী করা হয়। এরপর থেকে তিনি আইনমন্ত্রীর পদে ছিলেন।
সালমান এফ রহমান এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
সালমান এফ রহমান ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তাকে নিজের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।