রাজাকাররা ১৮০ জনকে হত্যা করে বিলে ফেলে রাখে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:২৮:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪ ১২৮ বার পড়া হয়েছে
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষিখালী গ্রামে শ্রীধাম গোপালচাদ সাধু ঠাকুরের সেবাশ্রমে ৭১ সালে রাজাকাররা ১৮০ জনকে গুলি ও জবাই করে গণহত্যা চালিয়েছিলো। সেদিনের স্মৃতি আজও কাঁদিয়ে বেড়ায়। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আজ শহীদদের স্মৃতিতে বদ্যভূমি সংরক্ষন হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ঐতিয্য আগামি প্রজন্মকে জানাতে বদ্ধভূমি সংরক্ষনের দাবি। রাজাকারের প্রতিরোধে দীর্ঘ ২ ঘন্টা যুদ্ধ করেও বাঁচাতে পারলামনা গোটা গ্রামসহ দেড়শতাধিক মানুষের প্রাণ। এ কথাগুলো অশ্রুসজল চোখে বললেন, সেদিনের লক্ষীখালী গ্রামে রাজাকারের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারি যুবক লক্ষীখালী ধামের গোপাল সাধু ঠাকুরের প্রো-পৌত্র পুতিন ননী গোপাল সাধু ঠাকুর। আরও একজন যুদ্ধে অংশ নেয়া একই গ্রামের দুলাল শিকদার, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বাংলা চৈত্র মাসের সোমবার ভোরবেলা সুর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সিমান্তবর্তী জেলার মোংলা উপজেলার সাহেবের মেঠ এলাকায় আগেরদিন রাতে অবস্থান নেয়া বাগেরহাট জেলার রাজাকার বাহিনীর পিস কমিটির প্রধান রজ্জবালির নেতৃত্ব এক ১০০/১৫০ জন রাজাকাররা লক্ষীখালী গ্রামে প্রবেশ করে চারদিক থেকে আক্রমন করে। প্রতিরক্ষায় আমরা গ্রামের এক সতাধিকের উর্দ্ধে লোকজন ঢাল সুরকি ও ৭টি বন্ধুক নিয়ে রাজাকারদের প্রতিরোধের চেষ্টা করি। ওরা সংখ্যা বেশী রাজাকারদেও কাছে আধুকায়ন ভাড়ি অস্ত্র থাকায় দেড় ঘন্টা তাদেওর সঙ্গে যুদ্ধ করে পিছু হটি। অল্প সময়ের মধ্যেও গ্রামকে জুড়ে গ্রাম ৪শ’ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারপিট ও কুপিয়ে পরবর্তীতে গুলি করে হত্যা করে ১৮০ জন মানুষকে হত্যা করে ঠাকুরবাড়ির সামনে বনজঙ্গল মাঠের মধ্যে ফেলে রাখে।
গোপাল ঠাকুরের তৎকালিণ গদি ঘরে ভক্ত হিরামন ঘোষাই, মনো ঘোষাই, ধোনা ঘোষাইকে কুপিয়ে দ্বিখন্ডিত করে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় রাজাকারেরা লক্ষিখালী গ্রামের মুকুন্দ শিকদার, মনোয়ার শিকদার, নিশিকান্ত মন্ডল, জগনাথ ঢালী, দোনা চার্য মন্ডল। পাশ্ববর্তী সুরেন্দ ঢালী, অতুল বৈরাগী, দুলাল ভৈরাগী, গনেশ শিকাদার, কাকরাতলী গ্রামের তৎকালিন মেম্বার বর্তমান চেয়ারম্যানের চাচা ইয়াকুব আলী সাহা হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে গিয়ে তাকেও গুলি করে হত্যাকরে রাজাকারেরা। এভাবে নাম জানা বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঠাকুর বাড়িতে আসা ভক্তবৃন্দ আশ্রয় নেয়া দেড়শতাধিক মানুকে সেদিনকে ওরা গণহত্যা করেছিল।
স্থানীয় বিশ্বজিৎ হালদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাওলাদার, পরিমল মন্ডল, দুলাল শিকদার, অনিল কৃষ্ণ মন্ডল, বিধান বসু, বীর মক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক শেখ সহ অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রতিবছর এ দিনেটি আসলে অস্থায়ী ভিত্তিতে কালো কাপড় দিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি আধুনিকায়ন বদ্যভূমি সংরক্ষন ও স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের।
শ্রীঘাম লক্ষীখালী গোপাল চাঁদ সেবাশ্রমের বর্তমান গদিনশিন বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সাগর সাধু ঠাকুর বলেন, লক্ষীখালীর গণহত্যায় শহিদদের স্মৃতিতে বদ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিনের এ অঞ্চলের মানুষের দাবি ছিল। ইতোপূর্বে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের দায়িত্বশীল উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকেও লিখিতভাবে আবেদনও করা হয়েছিল। বদ্যভূমির সংরক্ষণের কাজ হবে শুনে আসছি। অদ্যবদী পর্যন্ত কাজের কোন আলোর মুখ দেখতে পারছে না এলাকাবাসি।
সুন্দরবন সাব-সেক্টরের যুদ্ধকালিন স্টুডেন্ট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত আলী খান বলেন, লক্ষীখালী ঠাকুরবাড়িতে রাজাকার ও পাকসেনারা ২৪ মার্চ ভোর রাত থেকে নারকীয় তান্ডব চালিয়ে কয়েক গ্রামে অগ্নিসংযোগ গুলি ও জবাই করে ১৮০ জন মানুষকে গণহত্যা করেছিল। ঠাকুরবাড়ি বিলে এনে তাদেরকে মাটিচাপা দিয়ে তাদেরকে গণদাফন করা হয়েছিল। এ ছাড়াও একই দিনে চন্ডিপুর গ্রামে ২৭ জন, শাখারীকাঠি গ্রামে ৩০ জন, তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামে ৩ জন ও দৈবজ্ঞহাটিতে ১১ জন শহীদ হয়েছিলেন। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধার চেতনার সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এ বদ্যভূমিগুলোকে আধুনিকায়ন সংরক্ষন ও স্মৃতিফলক অতি শ্রীঘ্রই বাস্তবায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান বলেন, সরকার সারাদেশে বদ্যভূমি সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। এই উপজেলার লক্ষীখালীতে ১৯৭১ সালে গনহত্যা হয়েছিল, এই গুরুত্বপূর্ন বধ্যভূমিটি সংরক্ষনের জন্য একটি প্রপোজল পাঠানো হবে।