ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার কারাগারে বাংলাদেশি বন্দী নির্যাতন, অসুস্থ হলে ওষুধও দেয়া হতো না

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:০১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ৮৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিয়ানমার থেকে কারাভোগ করে আসা কক্সবাজারের মহেশখালীর বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ (৪৫) বলেন, সিথুয়ের কারাগারে প্রতিদিন তাদের দুপুরে এক বেলা করে খাবার দেওয়া হতো। ভাতের সঙ্গে দেয়া হতো সবজি। মাছ-মাংস মাসে একবারও খাওয়া হতো না। সকাল ও রাতে দেয়া হতো চিনি-রুটি। সারা দিন কারাগারে ভারি কাজে ব্যস্ত রাখতো। কাজ না করলে বর্বর নিযাতন চালাতো। অসুস্থ হলে ওষুধও দেয়া হতো না। আড়াই বছর পর বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

মোস্তাক বলেন, মায়ানমারের কারাগার থেকে দেশে ফিরতে পারব, এই আশা কখনও করিনি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে ফিরেছি।

কক্সবাজার বিআইডব্লটিএ জেটিঘাট থেকে বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ছাড়া পান মহেশখালীর কুতুবজোমের গোলাম সুলতানের পুত্র মোস্তাক আহমেদ। তার পরনে ছিল লাল গেঞ্জি, মুখে দাঁড়ি। পরিবারের সদস্যদের আলিঙ্গন করে মোস্তাক কান্নাকাটি শুরু করেন। এরপর মায়ানমার কারাগারে থাকাকালীন নিযাতনের ঘটনাগুলো বর্ণনা দেন।

এ সময় তিনি বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে তিনিসহ টেকনাফ, রামু ও মহেশখালীর প্রায় ৫০ জন সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াতে রওনা দেন। দালালেরা মাথাপিছু ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভালো চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়নি। উল্টো আড়াই বছর মায়ানমারের সিথুয়ে কারাগারে বন্দী জীবন কাটাতে হলো।

মোস্তাকের পর ছাড়া পান মহেশখালীর কালারমার ছড়ার সিরাজুল ইসলাম। তিনি একই ট্রলারে মালয়েশিয়ার যাত্রী ছিলেন।

তিনি বলেন, দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তাকে আড়াই বছর কারাভোগ করতে হয়েছে। বাড়িতে পৌঁছে তিনি দালালদের বিরুদ্ধে লড়বেন। যেন আর কেউ দালালের খপ্পরে না পড়েন।

মোস্তাক আহমেদ ও সিরাজুল ইসলাম এর ভাষ্যমতে, টেকনাফ সমুদ্র উপকূল দিয়ে ট্রলারে করে ভালো চাকরির আশায় মালয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাগরের মাঝপথে ট্রলারটি ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় তিনিসহ ট্রলারের প্রায় ৫০ জন যাত্রী সাগরে ভাসছিলেন। ৫ দিন পর ট্রলারটি মায়ানমার নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এরপর কপালে জোটে কারাভোগ। দীর্ঘ আড়াই বছর কারাভোগের পর গেল বুধবার বিকেলে মায়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজে কক্সবাজার ফিরে আসেন মোস্তাকসহ আরও ১৭৩ বাংলাদেশী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, মায়ানমারের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া ১৭৩ জন বাংলাদেশিকে বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে দেশটির নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে কক্সবাজার আনা হয়। তাদের প্রথমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পুলিশ ইমিগ্রেশনসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ১৭৩ জনের মধ্যে কক্সবাজার জেলার ১২৯ জন, বান্দরবানের ৩০ জন, রাঙামাটির ৭ জন, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে আরও ৭ জন রয়েছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, ফেরত আসা ১৭৩ বাংলাদেশিকে বিজিবি গ্রহণ করে পুলিশকে হস্তান্তর করে। যাচাই-বাছাই শেষে ১৭৩ জনের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তাদের জেটিঘাটে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্টদের নিজ নিজ থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মিয়ানমার কারাগারে বাংলাদেশি বন্দী নির্যাতন, অসুস্থ হলে ওষুধও দেয়া হতো না

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:০১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

মিয়ানমার থেকে কারাভোগ করে আসা কক্সবাজারের মহেশখালীর বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ (৪৫) বলেন, সিথুয়ের কারাগারে প্রতিদিন তাদের দুপুরে এক বেলা করে খাবার দেওয়া হতো। ভাতের সঙ্গে দেয়া হতো সবজি। মাছ-মাংস মাসে একবারও খাওয়া হতো না। সকাল ও রাতে দেয়া হতো চিনি-রুটি। সারা দিন কারাগারে ভারি কাজে ব্যস্ত রাখতো। কাজ না করলে বর্বর নিযাতন চালাতো। অসুস্থ হলে ওষুধও দেয়া হতো না। আড়াই বছর পর বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

মোস্তাক বলেন, মায়ানমারের কারাগার থেকে দেশে ফিরতে পারব, এই আশা কখনও করিনি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে ফিরেছি।

কক্সবাজার বিআইডব্লটিএ জেটিঘাট থেকে বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ছাড়া পান মহেশখালীর কুতুবজোমের গোলাম সুলতানের পুত্র মোস্তাক আহমেদ। তার পরনে ছিল লাল গেঞ্জি, মুখে দাঁড়ি। পরিবারের সদস্যদের আলিঙ্গন করে মোস্তাক কান্নাকাটি শুরু করেন। এরপর মায়ানমার কারাগারে থাকাকালীন নিযাতনের ঘটনাগুলো বর্ণনা দেন।

এ সময় তিনি বলেন, দালালের খপ্পরে পড়ে তিনিসহ টেকনাফ, রামু ও মহেশখালীর প্রায় ৫০ জন সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াতে রওনা দেন। দালালেরা মাথাপিছু ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভালো চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়নি। উল্টো আড়াই বছর মায়ানমারের সিথুয়ে কারাগারে বন্দী জীবন কাটাতে হলো।

মোস্তাকের পর ছাড়া পান মহেশখালীর কালারমার ছড়ার সিরাজুল ইসলাম। তিনি একই ট্রলারে মালয়েশিয়ার যাত্রী ছিলেন।

তিনি বলেন, দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তাকে আড়াই বছর কারাভোগ করতে হয়েছে। বাড়িতে পৌঁছে তিনি দালালদের বিরুদ্ধে লড়বেন। যেন আর কেউ দালালের খপ্পরে না পড়েন।

মোস্তাক আহমেদ ও সিরাজুল ইসলাম এর ভাষ্যমতে, টেকনাফ সমুদ্র উপকূল দিয়ে ট্রলারে করে ভালো চাকরির আশায় মালয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাগরের মাঝপথে ট্রলারটি ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় তিনিসহ ট্রলারের প্রায় ৫০ জন যাত্রী সাগরে ভাসছিলেন। ৫ দিন পর ট্রলারটি মায়ানমার নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এরপর কপালে জোটে কারাভোগ। দীর্ঘ আড়াই বছর কারাভোগের পর গেল বুধবার বিকেলে মায়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজে কক্সবাজার ফিরে আসেন মোস্তাকসহ আরও ১৭৩ বাংলাদেশী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, মায়ানমারের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া ১৭৩ জন বাংলাদেশিকে বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে দেশটির নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে কক্সবাজার আনা হয়। তাদের প্রথমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পুলিশ ইমিগ্রেশনসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ১৭৩ জনের মধ্যে কক্সবাজার জেলার ১২৯ জন, বান্দরবানের ৩০ জন, রাঙামাটির ৭ জন, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে আরও ৭ জন রয়েছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, ফেরত আসা ১৭৩ বাংলাদেশিকে বিজিবি গ্রহণ করে পুলিশকে হস্তান্তর করে। যাচাই-বাছাই শেষে ১৭৩ জনের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, তাদের জেটিঘাটে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্টদের নিজ নিজ থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।