ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদারীপুরে হিন্দুদের জমি জোর করে সস্তায় কেনেন বেনজীর

মাদারীপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় প্রায় ৯০ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে সাবেক বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে। ১১৩টি দলিলে কেনা এসব জমির বেশির ভাগই ফসলি। এর অধিকাংশ জমির মালিক হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন। জমি খেকো বেনজীর যে এলাকায় জমিগুলো কিনেছেন ওই ইউনিয়নটি হিন্দু অধ্যুষিত। শতকরা ৯০ ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। ফলে ভয় দেখিয়ে জমিগুলো কিনে ফেলতে পেরেছেন সাবেক এই আইজিপি। এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন : বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি

এতো জমি কেনার টাকা জোগান দিতে দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা জানতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারকে হাজির হতে তলব করেছে দুদক।

এদিকে, এ সুযোগে নিজেদের জমি লিখে নেওয়ার বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন রাজৈরের ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ বেনজীর তার স্ত্রীর নামে জোর করে ফসলি জমি লিখে নিয়েছেন। আর এতে সহায়তা করেছেন তৈয়ব আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। জমি লিখে না দিলে নির্যাতনের শিকারও হতে হয় অনেককে। দু’দকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি ক্রোকের খবরে স্বস্তি ফিরলেও সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করা জমির মালিকদের আতঙ্ক শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন : বিদেশে বেনজীরের সম্পদের খোঁজে দুদক

স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকদের অভিযোগ, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজা, নটাখোলা ও বড়খোলা এলাকার ফসলি জমি ভয়ভীতি দেখিয়ে কমমূল্যে কিনে নেন বেনজীর আহম্মেদ।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় তৈয়ব আলীর মাধ্যমেই এসব জমি কেনাবেচা হয়েছে। রাজৈর সাব রেজিস্টার অফিসে ১১৩টি দলিলের মাধ্যমে জমি কেনা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে শিবচর ঠেঙ্গামারা মৌজায় ৫ কাঠা জমি কেনেন বেনজীর আহম্মেদের পরিবার।

রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন বলেন, আমাদের বংশীয় লোকদের ২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জম। এর সবটুকুই কমম দামে কিনে নেন সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। বিঘা প্রতি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। অথচ এই জমির দাম কয়েক গুন বেশি। ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় দুই বছর আগে এই জমি নেন বেনজীর আহম্মেদ।

সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের স্বরস্বতী রায়। ৭০ বছরের বৃদ্ধা। তিনি বলেন, আমরা জমি দিতে না চাইলে ভয় দেখিতে জমি লিখে নেন বেনজীর আহম্মেদ। আমরা হিন্দু বলেই জোর করে জমি নিতে পারছে।

আরও পড়ুন : স্ত্রী-সন্তা‌নসহ বেনজীরকে দুদকে তলব

বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যদের নামে কবলা দেয়া হয়েছে।

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হাসান বলেন, জোর করে কারো সম্পত্তি লিখে নেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারেন।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বাড়ি গোপালগঞ্জে। কিন্তু মাদারীপুরের রাজৈরের বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি কেনা আমাদের অবাক করেছে। জমির মূল্য দিলেও কাউকে ভয় দেখিতে ফসলি জমি লিখে নেয়াও চরম অন্যায় কাজ। এর বিচার হওয়া উচিৎ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মাদারীপুরে হিন্দুদের জমি জোর করে সস্তায় কেনেন বেনজীর

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় প্রায় ৯০ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে সাবেক বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে। ১১৩টি দলিলে কেনা এসব জমির বেশির ভাগই ফসলি। এর অধিকাংশ জমির মালিক হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন। জমি খেকো বেনজীর যে এলাকায় জমিগুলো কিনেছেন ওই ইউনিয়নটি হিন্দু অধ্যুষিত। শতকরা ৯০ ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। ফলে ভয় দেখিয়ে জমিগুলো কিনে ফেলতে পেরেছেন সাবেক এই আইজিপি। এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন : বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি

এতো জমি কেনার টাকা জোগান দিতে দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা জানতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারকে হাজির হতে তলব করেছে দুদক।

এদিকে, এ সুযোগে নিজেদের জমি লিখে নেওয়ার বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন রাজৈরের ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ বেনজীর তার স্ত্রীর নামে জোর করে ফসলি জমি লিখে নিয়েছেন। আর এতে সহায়তা করেছেন তৈয়ব আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। জমি লিখে না দিলে নির্যাতনের শিকারও হতে হয় অনেককে। দু’দকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি ক্রোকের খবরে স্বস্তি ফিরলেও সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করা জমির মালিকদের আতঙ্ক শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন : বিদেশে বেনজীরের সম্পদের খোঁজে দুদক

স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকদের অভিযোগ, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজা, নটাখোলা ও বড়খোলা এলাকার ফসলি জমি ভয়ভীতি দেখিয়ে কমমূল্যে কিনে নেন বেনজীর আহম্মেদ।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় তৈয়ব আলীর মাধ্যমেই এসব জমি কেনাবেচা হয়েছে। রাজৈর সাব রেজিস্টার অফিসে ১১৩টি দলিলের মাধ্যমে জমি কেনা হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে শিবচর ঠেঙ্গামারা মৌজায় ৫ কাঠা জমি কেনেন বেনজীর আহম্মেদের পরিবার।

রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন বলেন, আমাদের বংশীয় লোকদের ২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জম। এর সবটুকুই কমম দামে কিনে নেন সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। বিঘা প্রতি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। অথচ এই জমির দাম কয়েক গুন বেশি। ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় দুই বছর আগে এই জমি নেন বেনজীর আহম্মেদ।

সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের স্বরস্বতী রায়। ৭০ বছরের বৃদ্ধা। তিনি বলেন, আমরা জমি দিতে না চাইলে ভয় দেখিতে জমি লিখে নেন বেনজীর আহম্মেদ। আমরা হিন্দু বলেই জোর করে জমি নিতে পারছে।

আরও পড়ুন : স্ত্রী-সন্তা‌নসহ বেনজীরকে দুদকে তলব

বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যদের নামে কবলা দেয়া হয়েছে।

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হাসান বলেন, জোর করে কারো সম্পত্তি লিখে নেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারেন।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বাড়ি গোপালগঞ্জে। কিন্তু মাদারীপুরের রাজৈরের বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি কেনা আমাদের অবাক করেছে। জমির মূল্য দিলেও কাউকে ভয় দেখিতে ফসলি জমি লিখে নেয়াও চরম অন্যায় কাজ। এর বিচার হওয়া উচিৎ।