ঢাকা ১২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিক্ষা করে জমানো ‘৯৩ হাজার টাকা’ নিয়ে পালালো প্রতারক

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ ৮২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্ধ মেয়ে সাবানাকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাব ক্যাম্প, থানা পুলিশ ও ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছেন। দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত পাবার আশায়। প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা খোয়া যাওয়ার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন ৭০ বয়সী নুরজাহান বেগম।

স্বামী হারা নুরজাহান প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ভিক্ষা করে ৯৩ হাজার টাকা জমান। সেই টাকা ভবিষ্যৎ এর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সঞ্চয় করার জন্য শহরের বড়বাজারে অগ্রণী ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখায় যান। সেখানে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হয়ে যান এক নিমিষে।

স্বামীহারা নুরজাহান বেগমের বাড়ি হরিশংকরপুর চাউলের বর্ডার এলাকার আব্দুল জলিল সড়কে। দুই ছেলে-এক মেয়ের সংসার। ছেলেরা আলাদা থাকেন। মেয়ে সাবানা অন্ধ। নুরজাহান এক সময় মানুষের বাসায় কাজ-কর্ম করলেও এখন শরীরে শক্তি নেই। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। লাঠি নিয়ে চলাফেরা করেন ধীরে ধীরে।

গত এক যুগ ধরে অন্ধ মেয়ে সাবানাকে নিয়ে ভিক্ষা করেন নুরজাহান বেগম। মেয়ের বাড়িতেই ছোট্ট একটি টিনের ঘরে আশ্রয় জুটেছে তার। সেখানে থাকেন রাতে।

সরেজমিন দেখা যায়, আব্দুল জলিল সড়কে একটি ছোট্ট টিনের ঘরে তার জায়গা হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তিনি র‌্যাব ক্যাম্পে গেছেন। র‌্যাব ক্যাম্পে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। কথা বলা শুরু করলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি টাকা ফেরত চান, বিচার চান।

নুরজাহান বেগম জানান, রোববার সকাল ১০টায় মেয়ে সাবানাকে সঙ্গে নিয়ে বড়বাজারে অগ্রণী ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখায় যান। মেয়ে ভিক্ষা করে আগে থেকেই সেখানে টাকা জমিয়ে রাখত। সকাল ১০টার কয়েক মিনিট আগে ব্যাংকে যান তিনি। ব্যাংকের বাইরে থেকে তার পিছু নেয় অপরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি ব্যাংকের লোক পরিচয় দেন তাদের।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ভেতরে গিয়ে ওই লোক নুরজাহানকে খালা বলে পরিচয় দেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে। এতে ব্যাংকের লোক আর কোনো সন্দেহ করেননি।

এরপর ওই পরিচিত ব্যক্তি সাহায্যের কথা বলে কাগজপত্র সব ঠিক করে দিলে অ্যাকাউন্ট নম্বর খোলা হয়। এরপর ক্যাশে জমা দেওয়ার জন্য টাকা চান। সাবানা তার ব্যাগে থাকা ৯৩ হাজার টাকা তুলে দেন ওই ব্যক্তির হাতে। টাকা নিয়ে লাইনেও দাঁড়ান তিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে উকি-ঝুঁকি দিতে থাকেন চারিদিকে। এরপর কয়েক মিনিট পর ওই ব্যক্তি লাইন থেকে টাকা জমা না দিয়ে দ্রুত চলে যায়। এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যাংকের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান নুরজাহান বেগম। এরপর সুস্থ হলে বাড়ি ফিরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নুরজাহান সোমবার সকালে মেয়ে ও নাতীকে নিয়ে প্রথমে থানায় পরে র‌্যাব ক্যাম্পে যান। দুপুরে পুলিশের একজন এসআই তাকে নিয়ে ব্যাংক পরিদর্শন করেন। এ সময় ম্যানেজারও সেখানে ছিলেন।

ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, নুরজাহান বেগমের মেয়ে সাবানার আগে থেকেই লেনদেন আছে। আমরা সবাই তাকে চিনি। আমরা তাকে সহযোগিতা করে আসছি সব সময়। রোববার তাদের সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এসেছিল। আমরা এ কারণে সন্দেহ করিনি। পরে জানতে পারি ওই ব্যক্তি নুরজাহানের কিছু হয় না। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে গেছে। আমাদের বললে আমরাই তাকে সহযোগিতা করতে পারতাম।

নুরজাহান বলেন, স্বামী নেই, মেয়ে অন্ধ। আমার নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। ৯৩ হাজার টাকা খেয়ে না খেয়ে ভিক্ষা করে এক জায়গায় করেছিলাম। তাও খোয়া গেল। ভবিষ্যৎ এর কথা মাথায় রেখে ছেলে-মেয়েদের নমিনি করে ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য গিয়েছিলাম। সেখানেও কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা অসহায়। এখন আমার কি হবে। টাকা হারিয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

বিষয়টি তদন্ত করছে র‌্যাব ও পুলিশ। প্রতারক একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যাংকে এসেছিল। সে কালো জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় ছিল। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সিহাবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। নুরজাহান অসহায় নারী। তার টাকা উদ্ধারের জন্য সব প্রচেষ্টা চলছে। আমরা প্রতারককে খুঁজে পাব বলে আশা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ভিক্ষা করে জমানো ‘৯৩ হাজার টাকা’ নিয়ে পালালো প্রতারক

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

অন্ধ মেয়ে সাবানাকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাব ক্যাম্প, থানা পুলিশ ও ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছেন। দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত পাবার আশায়। প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা খোয়া যাওয়ার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন ৭০ বয়সী নুরজাহান বেগম।

স্বামী হারা নুরজাহান প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ভিক্ষা করে ৯৩ হাজার টাকা জমান। সেই টাকা ভবিষ্যৎ এর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সঞ্চয় করার জন্য শহরের বড়বাজারে অগ্রণী ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখায় যান। সেখানে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হয়ে যান এক নিমিষে।

স্বামীহারা নুরজাহান বেগমের বাড়ি হরিশংকরপুর চাউলের বর্ডার এলাকার আব্দুল জলিল সড়কে। দুই ছেলে-এক মেয়ের সংসার। ছেলেরা আলাদা থাকেন। মেয়ে সাবানা অন্ধ। নুরজাহান এক সময় মানুষের বাসায় কাজ-কর্ম করলেও এখন শরীরে শক্তি নেই। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। লাঠি নিয়ে চলাফেরা করেন ধীরে ধীরে।

গত এক যুগ ধরে অন্ধ মেয়ে সাবানাকে নিয়ে ভিক্ষা করেন নুরজাহান বেগম। মেয়ের বাড়িতেই ছোট্ট একটি টিনের ঘরে আশ্রয় জুটেছে তার। সেখানে থাকেন রাতে।

সরেজমিন দেখা যায়, আব্দুল জলিল সড়কে একটি ছোট্ট টিনের ঘরে তার জায়গা হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তিনি র‌্যাব ক্যাম্পে গেছেন। র‌্যাব ক্যাম্পে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। কথা বলা শুরু করলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি টাকা ফেরত চান, বিচার চান।

নুরজাহান বেগম জানান, রোববার সকাল ১০টায় মেয়ে সাবানাকে সঙ্গে নিয়ে বড়বাজারে অগ্রণী ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখায় যান। মেয়ে ভিক্ষা করে আগে থেকেই সেখানে টাকা জমিয়ে রাখত। সকাল ১০টার কয়েক মিনিট আগে ব্যাংকে যান তিনি। ব্যাংকের বাইরে থেকে তার পিছু নেয় অপরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি ব্যাংকের লোক পরিচয় দেন তাদের।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ভেতরে গিয়ে ওই লোক নুরজাহানকে খালা বলে পরিচয় দেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে। এতে ব্যাংকের লোক আর কোনো সন্দেহ করেননি।

এরপর ওই পরিচিত ব্যক্তি সাহায্যের কথা বলে কাগজপত্র সব ঠিক করে দিলে অ্যাকাউন্ট নম্বর খোলা হয়। এরপর ক্যাশে জমা দেওয়ার জন্য টাকা চান। সাবানা তার ব্যাগে থাকা ৯৩ হাজার টাকা তুলে দেন ওই ব্যক্তির হাতে। টাকা নিয়ে লাইনেও দাঁড়ান তিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে উকি-ঝুঁকি দিতে থাকেন চারিদিকে। এরপর কয়েক মিনিট পর ওই ব্যক্তি লাইন থেকে টাকা জমা না দিয়ে দ্রুত চলে যায়। এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যাংকের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান নুরজাহান বেগম। এরপর সুস্থ হলে বাড়ি ফিরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নুরজাহান সোমবার সকালে মেয়ে ও নাতীকে নিয়ে প্রথমে থানায় পরে র‌্যাব ক্যাম্পে যান। দুপুরে পুলিশের একজন এসআই তাকে নিয়ে ব্যাংক পরিদর্শন করেন। এ সময় ম্যানেজারও সেখানে ছিলেন।

ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, নুরজাহান বেগমের মেয়ে সাবানার আগে থেকেই লেনদেন আছে। আমরা সবাই তাকে চিনি। আমরা তাকে সহযোগিতা করে আসছি সব সময়। রোববার তাদের সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এসেছিল। আমরা এ কারণে সন্দেহ করিনি। পরে জানতে পারি ওই ব্যক্তি নুরজাহানের কিছু হয় না। অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে গেছে। আমাদের বললে আমরাই তাকে সহযোগিতা করতে পারতাম।

নুরজাহান বলেন, স্বামী নেই, মেয়ে অন্ধ। আমার নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। ৯৩ হাজার টাকা খেয়ে না খেয়ে ভিক্ষা করে এক জায়গায় করেছিলাম। তাও খোয়া গেল। ভবিষ্যৎ এর কথা মাথায় রেখে ছেলে-মেয়েদের নমিনি করে ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য গিয়েছিলাম। সেখানেও কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা অসহায়। এখন আমার কি হবে। টাকা হারিয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

বিষয়টি তদন্ত করছে র‌্যাব ও পুলিশ। প্রতারক একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যাংকে এসেছিল। সে কালো জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় ছিল। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সিহাবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। নুরজাহান অসহায় নারী। তার টাকা উদ্ধারের জন্য সব প্রচেষ্টা চলছে। আমরা প্রতারককে খুঁজে পাব বলে আশা করছি।