ভারতের এমপিরা বিনামূল্যে ভ্রমণ করতে পারেন বিমান, পেয়ে থাকেন পেনশনও
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২৬:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪ ১০৩ বার পড়া হয়েছে
অনেকেই মনে করেন, বিকল্প জীবিকার সন্ধানেই অনেকে অন্য পেশা ছেড়ে দেশের সংসদে যেতে চান। জনমানসে কৌতূহল রয়েছে সাংসদদের বেতন, প্রাপ্য সুযোগসুবিধা নিয়েও। এই বিষয়ে রটনাও অনেক রয়েছে।
ভারতে সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ জন সাংসদকে নির্বাচিত করেছে জনতা। ভোটের ফল অনুযায়ী, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় জাদুসংখ্যার অনেকটা আগেই থামতে হয়েছে বিজেপিকে।
তবে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-র শরিক দললোকে সাথে নিয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে পদ্মশিবির। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর টিডিপি। এনডিএ পেয়েছে ২৯৩টি আসন। আর বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩২ আসন।
এই লোকসভা ভোটে যেমন বহু তারকা প্রার্থী জিতেছেন। তেমন হারের মুখও দেখেছেন অনেকে। ইদানীং অনেকে অন্য পেশা বাদ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসা এবং ভোটে দাঁড়ানোর ঘটনা বেড়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, বিকল্প জীবিকার তাগিদে অনেকে অন্য পেশা ছেড়ে দেশের এমপি যেতে চান। জনমনে কৌতূহল রয়েছে এসব এমপিদের বেতন কতো। পেয়ে থাকেন কি কি সুযোগ-সুবিধা। তবে এই বিষয়ে রটনা যতো বেশি। ঘটনা ততটাও নয়।
একজন এমপির মাসে বেতন এক লাখ টাকা। তবে কয়েক বছর আগ পর্যন্তও লাখের অঙ্কে বেতন পেতেন না দেশের ভারতের এমপিরা।
২০১৮ সালে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্যদের মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির কারণ হিসাবে মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছিলো।
তবে এমপিরা মূল বেতনের পাশাপাশি একাধিক ভাতা পান। লোকসভার এমপিরা তাদের সংসদীয় এলাকায় পরিষেবা দেয়ার জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা ভাতা পান।
মূলত নিজের সংসদীয় এলাকায় অফিস খোলা এবং সেখানে নিযুক্ত কর্মীদের বেতন দেয়ার জন্যই ওই ভাতা পেয়ে থাকেন একজন এমপি। এমপির দফতরের কাজ সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনা এবং প্রয়োজনে তার সমাধান করা।
এ ছাড়াও একজন এমপি নিজস্ব অফিস চালানোর জন্য প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। এই টাকায় তিনি নিজের দফতরে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। এই কর্মীরা মূলত এমপির অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন জরুরি ফোন ধরার কাজ করেন।এমনকি দফতরটিকে পরিচালনা করেন।
সংসদের অধিবেশন চলাকালীন কিংবা কোনো সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়, তখন উপস্থিতির জন্য এমপিরা দিনে দুই হাজার টাকা করে ভাতা পান। মূলত রাজধানীতে থাকা-খাওয়া সমেত দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে এই টাকা দেয়া হয়ে থাকে।
একজন এমপি দেশের মধ্যে বছরে ৩৪ বার বিনামূল্যে বিমান ভ্রমণ করতে পারেন। বিনামূল্যের বিমান ভ্রমণে এমপির সাথে থাকতে পারেন তার নিকটাত্মীয়রাও।
এছাড়াও বছরে বিনামূল্যে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরার সওয়ারি হতে পারেন এমপিরা। ব্যক্তিগত কাজে কোথাও গেলে বিনামূল্যে ট্রেন পরিষেবা পাওয়া যায়। নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গাড়ি নিয়ে ঘুরলে জ্বালানি তেলের খরচও দেওয়া হয়।
সংসদে উপস্থিত থাকার জন্য দিল্লিতে থাকতে হয় এমপিদের। এজন্য প্রত্যেক এমপিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ৫ বছরের জন্য বাংলো বাড়ি দেয়া হয়। বাড়িটির আকার, অবস্থান কেমন হবে, তা কেবল নির্ভর করে একজন এমপি কতোবার নির্বাচিত হয়েছেন, তার উপরে।
প্রথমবার সংসদে যাওয়া সংসদদের তুলনায় একাধিক বার জয়লাভ করা এমপির বাংলো বাড়ির আকার বৃদ্ধি পায়। দিল্লির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকার সুযোগ পান প্রবীণ এমপিরা।
কোনো কারণে যারা সরকারি বাংলো কিংবা হস্টেলে থাকতে চান না, তাদের বাড়িভাড়া বাবদ মাসে দুই লাখ টাকা দেয়া হয়।
একজন এমপি এবং তার নিকটাত্মীয়রা সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের দেশের যে কোনো সরকারি হাসপাতাল এবং প্রকল্পের আওতাধীন নির্দিষ্ট কিছু বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়।
বছরে শুধু ফোন খরচ বাবদ একজন এমপিকে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়। এছাড়াও এমপি তার বাড়ি এবং দফতরে বিনামূল্যে উচ্চ গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়ে থাকেন।
ভারতের একজন এমপি বছরে ৫০ হাজার ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পান। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে বিনামূল্যে চার হাজার কিলোলিটার পানি পেয়ে থাকেন একজন এমপি।
প্রাক্তন এমপিরা প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা পেনশন হিসাবে পেয়ে থাকেন। তবে সাংসদের কার্যকালের মেয়াদ এক বছরের জন্য বাড়লেও পেনশনের পরিমাণ মাসে দুই হাজার টাকা করে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।