বুড়িগঙ্গার সীমানাখুঁটির ভেতরেই এমপির ডকইয়ার্ড
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪ ৮২ বার পড়া হয়েছে
বুড়িগঙ্গা নদীর সীমানাখুঁটির ভেতরেই এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে গড়ে উঠেছে ২৭টি ডকইয়ার্ড ও নৌযান মেরামত কারখানা। তবে এসব উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ। নদীর সীমানাখুঁটি পেরিয়ে ভেতরে ২৭টি নৌযান তৈরি ও মেরামত কারখানা গড়ে উঠেছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পার গেন্ডারিয়ার আপিস মাঠ এলাকায় একটি খাল বুড়িগঙ্গার সাথে মিশেছে। এটি শুভাঢ্যা খাল নামে পরিচিত। এ খাল ও নদীর মধ্যবর্তী তীরের চর কালীগঞ্জের তেলঘাট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে ২৭টি ডকইয়ার্ড ও নৌযান মেরামত কারখানা। তবে এসব ডকইয়ার্ড অবৈধভাবে নদীসীমার মধ্যে গড়ে উঠেছে। এমনটাই জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এসব ডকইয়ার্ড মালিকদের মধ্যে রয়েছেন এমপি, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ডকইয়ার্ডের মালিক হওয়ায় তা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। এসব ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে ডকইয়ার্ডগুলো টিকিয়ে রেখেছেন। যদিও নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, তার উদ্দেশ্য অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আপিস মাঠ এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ থেকে চর খেজুরবাগ হয়ে তেলঘাট পর্যন্ত শুভাঢ্যা খাল ও নদীর জায়গায় এসব ডকইয়ার্ড গড়ে তোলা হয়। নদীসীমার মধ্যে এতগুলো ডকইয়ার্ড গড়ে ওঠার কারণে আপিস মাঠ এলাকা থেকে তেলঘাট পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার প্রশস্ততা কমে এসেছে। নদীর পানি দূষিত হচ্ছে পোড়া তেলে ।
জানা গেছে, দুটি ডকইয়ার্ডের মালিক বরিশাল-৩ আসনের এমপি গোলাম কিবরিয়া (টিপু)। এছাড়া দু’টির মালিক শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন। একটি ডকইয়ার্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী একজন এমপির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যগুলোর মালিক রাজনীতিতে যুক্ত নন। রাজনীতিতে না হলেও তারাও প্রভাবশালী।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, শুভাঢ্যার ডকইয়ার্ডগুলো অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। ডকইয়ার্ডগুলো নদীর সীমানা পিলারের (খুঁটি) ভেতরে নদীর অংশে পড়েছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিআইডব্লিউটিএর সাথে এক বৈঠকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কেরানীগঞ্জ থেকে সব ডকইয়ার্ড সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে সাড়ে ৩ বছরেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা এ বিষয়ে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডকইয়ার্ডগুলো অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। পুনর্বাসন করে তাদের এখান থেকে উঠিয়ে দেয়া হবে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, দেড় কিলোমিটার নদীসীমার মধ্যে গড়ে ওঠা ২৭টি ডকইয়ার্ড অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। তবে চর মীরেরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন ভেঙে দিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চর মীরেরবাগ অংশের ৯ ও ১০ নম্বর পিলার ঘেঁষে নদীর জমিতে গড়ে উঠেছিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। ২০১৯ সালে ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়।