ঢাকা ০৯:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিবরণ ছাড়াই সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ দেখালেন ইউএনও

নওগাঁ প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪ ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিবরণ (বাবদ) ছাড়াই নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর মহিলা কলেজের ফান্ড থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ কলেজের বিগত দুই অধ্যক্ষের সময় এই খরচ দেখিয়েছেন। কলেজের সভাপতির দায়িত্বরত সময় তিনি ক্ষমতার ব্যবহার দেখিয়ে এমন কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বিষয়টি সুরাহার পূর্বেই তার বদলি হয়ে যান বগুড়ার আদমদীঘিতে।

জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেছিলেন রুমানা আফরোজ। এরপর নিয়ম অনুযায়ী উপজেলার নজিপুর মহিলা কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব ইউএনও’র। কিন্তু নজিপুর মহিলা কলেজে তিনি সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রথম দফায় খরচ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। যখন ওই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন নূর উদ্দিন। দ্বিতীয় দফায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব যখন সাবিনা ইয়াসমিন ছিলেন, তখন ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আর এভাবেই বাবদ ছাড়াই কলেজের ফান্ড থেকে ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন। যে খরচে রেজুলেশনে নেই কোনো বাবদ। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট খরচের ভাউচার বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

অপরদিকে, ঘটনাটি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অশ্বিনী কুমারের মাধ্যমে জানার পর খরচের বাবদ না থাকায় রেজুলেশনের অনুমোদন দেননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার। তিনিও গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বদলি হয়েছেন। এতে করে কয়েকমাস শিক্ষকদের বেতন ভাতা সহ মাসিক খরচ আটকে ছিলো। আর এমন খরচ নিয়ে উঠে প্রশ্ন?

এদিকে, পত্নীতলা থেকে রুমানা আফরোজ বদলির পূর্বে সরকারি খরচে ক্রয় করা ইউএনও’র বাসভবনে লাগানো বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নিয়েছেন, এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ৷

বাবদ ছাড়া ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নজিপুর মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাবিনা ইয়াসমিন মুঠোফোনে বলেন, বাবদ ছাড়া কোনোদিন খরচ হয়না। আপনাকে যে বলেছে সে ভুল বলেছে। এক টাকা খরচ হলেও সেটার ভাউচার ও বাবদ থাকে। এছাড়া এই খরচের বিষয়ে অডিট হয়েছে এবং মিটিং এ পাশ হয়েছে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে সাবেক অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন অবসরে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমান নজিপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অশ্বিনী কুমার জানান, ২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে আমি এই কলেজের দায়িত্ব পেয়েছি। রেজুলেশনে দুই দফায় খরচ দেখানো আছে, কিন্তু আমার জানামতে সেখানে বাবদ নেই। ওই রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষরও দেইনি৷ টাকা উত্তোলনের নিয়ম জানতে চাইলে তিনি জানান, সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে টাকা তুলতে হয়।

কলেজের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সভাপতি রুমানা আফরোজ কলেজে গিয়ে প্রশাসন এবং বর্তমান ইউএনও’র সাথে কথা বলতে বলেন। সিসি ক্যামেরা খূলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা কখনও কোনো ইউএনও খুলে নিয়ে আসেনা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অসংগতি দেখে অনুমোদন না দেওয়া আরেক সাবেক পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার জানান, এখানে আসার পর কলেজের বিষয়টি জানতে পারি। রেজুলেশনটি আমার কাছে অসংগতি মনে হয়েছে। সেজন্য আমি স্বাক্ষর দেইনি। আমি গত সপ্তাহে বদলি হয়ে চলে এসেছি। বিস্তারিত জানতে কলেজে গিয়ে তদন্ত করতে বলেন তিনি।

আর বাবদ ছাড়া কলেজের খরচের বিষয়ে কিছু জানেন না সদ্য যোগদানকৃত পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পপি খাতুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বিবরণ ছাড়াই সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ দেখালেন ইউএনও

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

বিবরণ (বাবদ) ছাড়াই নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর মহিলা কলেজের ফান্ড থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ কলেজের বিগত দুই অধ্যক্ষের সময় এই খরচ দেখিয়েছেন। কলেজের সভাপতির দায়িত্বরত সময় তিনি ক্ষমতার ব্যবহার দেখিয়ে এমন কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বিষয়টি সুরাহার পূর্বেই তার বদলি হয়ে যান বগুড়ার আদমদীঘিতে।

জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেছিলেন রুমানা আফরোজ। এরপর নিয়ম অনুযায়ী উপজেলার নজিপুর মহিলা কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব ইউএনও’র। কিন্তু নজিপুর মহিলা কলেজে তিনি সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রথম দফায় খরচ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। যখন ওই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন নূর উদ্দিন। দ্বিতীয় দফায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব যখন সাবিনা ইয়াসমিন ছিলেন, তখন ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আর এভাবেই বাবদ ছাড়াই কলেজের ফান্ড থেকে ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন। যে খরচে রেজুলেশনে নেই কোনো বাবদ। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট খরচের ভাউচার বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

অপরদিকে, ঘটনাটি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অশ্বিনী কুমারের মাধ্যমে জানার পর খরচের বাবদ না থাকায় রেজুলেশনের অনুমোদন দেননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার। তিনিও গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বদলি হয়েছেন। এতে করে কয়েকমাস শিক্ষকদের বেতন ভাতা সহ মাসিক খরচ আটকে ছিলো। আর এমন খরচ নিয়ে উঠে প্রশ্ন?

এদিকে, পত্নীতলা থেকে রুমানা আফরোজ বদলির পূর্বে সরকারি খরচে ক্রয় করা ইউএনও’র বাসভবনে লাগানো বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নিয়েছেন, এমন অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ৷

বাবদ ছাড়া ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নজিপুর মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাবিনা ইয়াসমিন মুঠোফোনে বলেন, বাবদ ছাড়া কোনোদিন খরচ হয়না। আপনাকে যে বলেছে সে ভুল বলেছে। এক টাকা খরচ হলেও সেটার ভাউচার ও বাবদ থাকে। এছাড়া এই খরচের বিষয়ে অডিট হয়েছে এবং মিটিং এ পাশ হয়েছে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে সাবেক অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন অবসরে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমান নজিপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অশ্বিনী কুমার জানান, ২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে আমি এই কলেজের দায়িত্ব পেয়েছি। রেজুলেশনে দুই দফায় খরচ দেখানো আছে, কিন্তু আমার জানামতে সেখানে বাবদ নেই। ওই রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষরও দেইনি৷ টাকা উত্তোলনের নিয়ম জানতে চাইলে তিনি জানান, সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে টাকা তুলতে হয়।

কলেজের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সভাপতি রুমানা আফরোজ কলেজে গিয়ে প্রশাসন এবং বর্তমান ইউএনও’র সাথে কথা বলতে বলেন। সিসি ক্যামেরা খূলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা কখনও কোনো ইউএনও খুলে নিয়ে আসেনা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অসংগতি দেখে অনুমোদন না দেওয়া আরেক সাবেক পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার জানান, এখানে আসার পর কলেজের বিষয়টি জানতে পারি। রেজুলেশনটি আমার কাছে অসংগতি মনে হয়েছে। সেজন্য আমি স্বাক্ষর দেইনি। আমি গত সপ্তাহে বদলি হয়ে চলে এসেছি। বিস্তারিত জানতে কলেজে গিয়ে তদন্ত করতে বলেন তিনি।

আর বাবদ ছাড়া কলেজের খরচের বিষয়ে কিছু জানেন না সদ্য যোগদানকৃত পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পপি খাতুন।