ফলোআপ/ বাথরুমে নিয়ে চাপাতি দিয়ে ৪ টুকরা করা হয় সৌরভকে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪ ১১৯ বার পড়া হয়েছে
ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সৌরভ হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত মূলহোতা সৌরভের আপন চাচা, চাচার শ্যালক ও মরদেহ বহনকারী গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন : সেতুর নিচে ব্রীফকেসে চার টুকরা মরদেহ, পাটক্ষেতে মাথা, জানা গেলো পরিচয়
মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভুইয়া জানিয়েছেন, ময়মনসিংহে মনতলা এলাকায় সেতুর নীচ থেকে উদ্বার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভের হত্যায় জড়িত ছিলো তার আপন চাচা। আর চাচাকে হত্যায় সহায়তা করেছে চাচার শ্যালক। হত্যার পর মরদেহ নিয়ে ফেলা হয় ময়মনসিংহ সদরের মনতলা সেতুর নীচে সুতিয়া নদীতে। পুলিশ এ ঘটনায় চাচা ইলিয়াছ, তার শ্যালক ফারুক ও প্রাইভেটকারের চালক হান্নানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সোমবার (৩ জুন) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিফ্রিংয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, চাচা ইলিয়াছের মেয়ে ইভার সাথে প্রেম ছিলো প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভাতিজা সৌরভের। কিন্তু ইভারও তিন বছর আগে বিয়ে হয় কানাডা প্রবাসী আবরাহাম নামে এক ছেলের সাথে। আবরাহমের বাবা ডা. আমিনুল ইসলাম ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। কিন্তু তিন বছর আগে কানাডা প্রবাসীর সাথে বিয়ে হলেও ইভা আবারো গোপনে সৌরভকে বিয়ে করে। তাদের বিয়ে হয় কিছু দিন আগে ঢাকায় এক বন্ধর বাসায়। সেই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি ইভার বাবা ইলিয়াছ। এ নিয়ে ইলিয়াছ ও সৌরভের পিতা ইউসুফের সাথে চরম বিরোধ চলছিলো। ইলিয়াছ হুমকী দেয় সৌরভকে মেরে ফেলার। এরপর ১ জুন সৌরভকে বাসায় ডেকে আনে চাচাতো ভাই মৃদুল। সৌরভ ফোন পেয়ে নগরীর গোহাইলকান্দিতে চাচা ইলিয়াছের বাসায় আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী সৌরভকে মাথায় আঘাত করে খুন করে চাচা ইলিয়াছ ও তার শ্যালক ফারুক।
আরও পড়ুন : সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৩ কালো হাত
এরপর মরদেহ বাথরুমে নিয়ে হ্যান্ড গ্লাভস হাতে লাগয়ে চাপাতি দিয়ে মাথা আলাদা করে চার টুকরা করা হয়। মরদেহ যেন শনাক্ত না করা যায় সে জন্যে চাকু দিয়ে খুচিয়ে লাশের আঙ্গুলের মাথা নষ্ট করে দেয়। যেন ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে মরদেহ শনাক্ত করতে না পারে। মরদেহ শনাক্ত করতে পারলে আসামী শনাক্ত করা যাবে। পরে নগরীরর গাঙ্গিনাপাড়ের একটি দোকান থেকে ট্রলি লাগেজ কিনে এনে মরদেহের টুকরাগুলো লাগেজে ঢুকিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে লাগেজ ভর্তি মরদেহ ফেলে আসা হয় মনতলা সেতুর নীচে সুতিয়া নদীতে। সেই ট্রলি কেনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে।
খবর পেয়ে ২ জুন (রোববার) সকালে মনতলা সেতুর নীচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে জেলা ডিবি পুলিশ ও কোতোয়ালী পুলিশ। পুলিশ দ্রুত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে। পরে সৌরভের বাবা বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ হত্যার রহস্য ও হত্যাকারীদের সর্ম্পকের তথ্য সংগ্রহ করে।
আরও পড়ুন : এমপি আনার হত্যা/ সিয়াম নেপালে গ্রেপ্তার, জানালেন ডিবির হারুন
এরপর ডিবি ও কোতোয়ালী পুলিশ আসামী ধরতে মাঠে নামে। কোতয়ালী মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যাকারীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মরদেহ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়ার কথা ছিলো। মাঝপথে গাড়ীর চালক অনিহা প্রকাশ করলে গাড়ি নিয়ে ফিরে এসে মনতলায় সুতিয়া নদীর সেতুর নিচে ফেলে দেয়।
এরপর সোমবার (৩ জুন) প্রথমে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইলিয়াছের শ্যালক ফারুক (৩০) কে। এরপর মূল হত্যাকারী ইলিয়াছ উদ্দিনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয় ধোবাউড়া থেকে। এরপর মরদেহ বহনকারী প্রাইভেটকারের চালক হান্নানকে(৬৫) গ্রেপ্তার করা হয় ময়মনসিংহ থেকে।
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁইয়া আরও বলেন, হত্যার কারন তারা জানা গেছে। হত্যায় জড়িতদের তারা গ্রেপ্তার করতেও সক্ষম হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন : মোদী ম্যাজিকে ধস, এক দশক পর একদলীয় শাসনের ইতি!
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত কি না তা তদন্তের পর জানা যাবে। প্রসঙ্গত, ইভা বর্তমানে কানাডায় রয়েছে। সৌরভের স্বজনরা জানায়, চলতি মাসের ১ তারিখ ঢাকা থেকে সৌরভ ময়মনসিংহে আসে ইভার সাথে তার বিয়ের ব্যাপারে বর্তমানে কানাডা প্রবাসী ইভার আগের স্বামীর বাবা ডা. আমিনুলের সাথে কথা বলতে। তার সাথে কথা বলে ফিরে যাওয়ার সময় তার চাচা ইলিয়াছ জানতে পারে সৌরভ ময়মনসিংহে এসেছে। পরে কৌশলে ইলিয়াছ তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে দিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলে বিকেলে সৌরভকে তার বাসায় ডেকে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাক ইউনিয়নের তাড়াটি গ্রামে।