ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওয়া ভবনেই হতো হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রশ্নফাঁসের টাকা পেতেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা!

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪ ১০২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে আলোচিত হাওয়া ভবন। তখন এ বাড়ি থেকেই একটি সিন্ডিকেট দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্মর জাল বিস্তার করে। ওয়ান ইলেভেনে অর্থাৎ ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ধরা পড়েন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রথম ৫০ সন্দেহভাজনের ‘দুর্নীতিবাজের’ তালিকায় নাম আসে তার।

বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ঘুষ গ্রহণ এবং পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি অর্জনের মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় ২০০৯ সালে মাহফুজকে ১৩ বছরের সাজা দেয় ঢাকার ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালত। আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নফাঁস চক্রে অভিযুক্ত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী গ্রেপ্তার হয়েছে। আর তার গুরু হলো অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।

দুর্নীতির কুখ্যাত ‘হাওয়া ভবন’-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন এই মাহফুজুর। তার গাড়িচালক হিসেবে প্রশ্নফাঁস চক্রের আরেক হোতা হিসেবে আবির্ভূত হন আবেদ আলী।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালে প্রশ্নফাঁস চক্রের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন মাহফুজ। এর ব্যাপকতা পায় ২৪তম বিসিএসে। হাওয়া ভবনে হয় হাজার হাজার কোটি টাকার প্রশ্ন বাণিজ্য গড়ে তোলেন মাহফুজ।

তখন সেই টাকার ভাগ পেতেন ওই সময়কার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা। টাকার ভাগ বাটোয়ারা হতো হাওয়া ভবনে বসেই। তারপর ঠিক হতো কারা চাকরি পাবে, আর কারা চাকরি পাবেন না। সেই তালিকা যেত পিএসপিতে। সেই অনুযায়ী হতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে ঢুকে যেতেন হাওয়া ভবনের তালিকাভুক্তরা।

প্রশ্নফাঁসে আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর আবারো ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ সেই মাহফুজুর রহমান। আবেদ আলী আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাহফুজের নাম উল্লেখ করে। সেখানে তিনি জানান, মাহফুজের গাড়িচালক হিসেবে বিএনপি সরকারের সময় কীভাবে তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত হন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আবেদ আলী জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পিএসসিতে প্রশ্নফাঁস শুরু হয়। আর এটা ২৪তম বিসিএসে। এরপর ২৫তম ব্যাচে প্রশ্নফাঁস বিষয়টি ধরা পড়ে। সে সময় পিএসসির সদস্য হিসেবে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মাহফুজ। তখন তার ড্রাইভার আবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি চক্র গড়ে ওঠে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সময় প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নেন মাহফুজুর রহমান। তবে দলীয় নেতাদের পাঠানো তালিকায়ও চাকরি দিতে হতো। সেখান থেকেও অর্থ আদায় করা হতো। কিন্তু এসব অর্থ মাহফুজ একা পেতেন না। বড় অঙ্ক চলে যেতো হাওয়া ভবনে। তারপর বাকী টাকা ভাগাভাগি হতো মাহফুজ ও গাড়ি চালক আবেদ আলী চক্রের মধ্যে। দুর্নীতির দায়ে দণ্ড পাওয়া মাহফুজুর রহমান এক সময় জামিনে ছাড়া পান। এরপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি।

এদিকে, রোববার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে ২৪তম বিসিএসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির আমলে চাকরি হতো কোনো পরীক্ষা দিয়ে নয়। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। আর ঢাকা কলেজের বিশেষ কামরায় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে তারা চাকরিকে ঢোকে। কিন্তু এ নিয়ে তখন কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। প্রশ্নফাঁস সেই থেকেই শুরু।

মাহফুজ ও আবেদ আলীর ফাঁস করা প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ থেকে শুরু করেছে একটি সংস্থা। সেসব ক্যাডারদের মধ্যে রয়েছে চিহ্নিত দলীয় ক্যাডাররা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

হাওয়া ভবনেই হতো হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রশ্নফাঁসের টাকা পেতেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে আলোচিত হাওয়া ভবন। তখন এ বাড়ি থেকেই একটি সিন্ডিকেট দেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্মর জাল বিস্তার করে। ওয়ান ইলেভেনে অর্থাৎ ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ধরা পড়েন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রথম ৫০ সন্দেহভাজনের ‘দুর্নীতিবাজের’ তালিকায় নাম আসে তার।

বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ঘুষ গ্রহণ এবং পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি অর্জনের মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলায় ২০০৯ সালে মাহফুজকে ১৩ বছরের সাজা দেয় ঢাকার ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালত। আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নফাঁস চক্রে অভিযুক্ত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী গ্রেপ্তার হয়েছে। আর তার গুরু হলো অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।

দুর্নীতির কুখ্যাত ‘হাওয়া ভবন’-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন এই মাহফুজুর। তার গাড়িচালক হিসেবে প্রশ্নফাঁস চক্রের আরেক হোতা হিসেবে আবির্ভূত হন আবেদ আলী।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালে প্রশ্নফাঁস চক্রের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন মাহফুজ। এর ব্যাপকতা পায় ২৪তম বিসিএসে। হাওয়া ভবনে হয় হাজার হাজার কোটি টাকার প্রশ্ন বাণিজ্য গড়ে তোলেন মাহফুজ।

তখন সেই টাকার ভাগ পেতেন ওই সময়কার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা। টাকার ভাগ বাটোয়ারা হতো হাওয়া ভবনে বসেই। তারপর ঠিক হতো কারা চাকরি পাবে, আর কারা চাকরি পাবেন না। সেই তালিকা যেত পিএসপিতে। সেই অনুযায়ী হতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে ঢুকে যেতেন হাওয়া ভবনের তালিকাভুক্তরা।

প্রশ্নফাঁসে আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর আবারো ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ সেই মাহফুজুর রহমান। আবেদ আলী আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাহফুজের নাম উল্লেখ করে। সেখানে তিনি জানান, মাহফুজের গাড়িচালক হিসেবে বিএনপি সরকারের সময় কীভাবে তিনি প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত হন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আবেদ আলী জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পিএসসিতে প্রশ্নফাঁস শুরু হয়। আর এটা ২৪তম বিসিএসে। এরপর ২৫তম ব্যাচে প্রশ্নফাঁস বিষয়টি ধরা পড়ে। সে সময় পিএসসির সদস্য হিসেবে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মাহফুজ। তখন তার ড্রাইভার আবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি চক্র গড়ে ওঠে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সময় প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নেন মাহফুজুর রহমান। তবে দলীয় নেতাদের পাঠানো তালিকায়ও চাকরি দিতে হতো। সেখান থেকেও অর্থ আদায় করা হতো। কিন্তু এসব অর্থ মাহফুজ একা পেতেন না। বড় অঙ্ক চলে যেতো হাওয়া ভবনে। তারপর বাকী টাকা ভাগাভাগি হতো মাহফুজ ও গাড়ি চালক আবেদ আলী চক্রের মধ্যে। দুর্নীতির দায়ে দণ্ড পাওয়া মাহফুজুর রহমান এক সময় জামিনে ছাড়া পান। এরপর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি।

এদিকে, রোববার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে ২৪তম বিসিএসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির আমলে চাকরি হতো কোনো পরীক্ষা দিয়ে নয়। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। আর ঢাকা কলেজের বিশেষ কামরায় পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে তারা চাকরিকে ঢোকে। কিন্তু এ নিয়ে তখন কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। প্রশ্নফাঁস সেই থেকেই শুরু।

মাহফুজ ও আবেদ আলীর ফাঁস করা প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ থেকে শুরু করেছে একটি সংস্থা। সেসব ক্যাডারদের মধ্যে রয়েছে চিহ্নিত দলীয় ক্যাডাররা।