ঢাকা ১০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবনায় গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ উৎপাদনে ব্যাপক সারা 

পাবনা প্রতিনিধি 
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাবনার ঈশ্বরদীতে এবারে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২০০ মন। কম খরচে এবং কম সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে এলাকার কৃষকের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ বছরে তিনবার চাষ করা যায়। তবে শীতকালীন মৌসুমে মুড়ি কাটা এবং চারা পেঁয়াজ উৎপাদন করলে বা এই জাতের বীজ ও চারা তৈরি করলে এই পেঁয়াজ দুইবার আবাদ হয়। 

শীতকালে কৃষকরা বারি পেঁয়াজ-৫ জাতের পেঁয়াজের বীজ ও চারা উৎপাদন করলে বীজ এবং চারা নিয়ে কৃষকদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। তাছাড়া বীজ ও চারা বিক্রি করেও বিপুল টাকা উপার্জন হয়। দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে বেলে দোআঁশ যুক্ত উঁচু জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 

ব্যাপক ভিত্তিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ হলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে সময় প্রায় ৯০ দিন। চারা উৎপাদনে ৪০ থেকে ৪৫ দিন। এক কেজি বীজে ১ বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়। 

একটি পেঁয়াজের আকার অনেক বড় অর্থাৎ ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়। রাসায়নিক সারের সাথে জৈব সার ব্যবহার করলে পেঁয়াজের আকৃতি সুন্দর এবং অনেক বড় হয়।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলী বাদশা এবারে কুতুবপুর গ্রামে প্রায় ৮ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ জাতের আবাদ করেছেন। তিনি বিঘায় ফলন পেয়েছেন ২০০ মণ। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশে গড়মকালে তেমন পেঁয়াজ আবাদ হয় না । বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ নামে একটি জাত বের করেছে। এবারে এই পেঁয়াজ আবাদ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছে। যদি এভাবে ফলন পাওয়া যায় তাহলে দেশে যেসব উঁচু এলাকা রয়েছে, 

সেখানে বর্ষাকালে এই পেঁয়াজ আবাদ করলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণের পর বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তবে দেশে পেঁয়াজের বীজের ঘাটতি রয়েছে। পেঁয়াজ চাষিদের বেশী দামে বীজ কিনতে হয়। 

পেঁয়াজের বীজ ও চারা উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, নির্ধারিত মূল্যে মানসম্মত সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।  

মহাদেবপুর গ্রামের শাহিনুজ্জামান এবারে আড়াই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছিলেন। 

তিনি বলেন, এক একটি পেঁয়াজের ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। সংকট সময়ে পেঁয়াজ উঠে যাওয়ায় প্রথম দিকে তিনি ১৪০ টাকা কেজি দরে ৬০ মন পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। 

মসলা গবেষণা কেন্দ্র বিএডিসি’র মাধ্যমে বীজ সরবরাহ করেছেন বলে জানান তিনি। শাহীন বলেন, বীজ কিনে আবাদ করলে বছরে তিনবার এই পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না মৌসুমে ১০০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এবছর ১ আগস্টও ২২ সেপ্টেম্বর এই পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে। 

মুড়িকাটা পেঁয়াজের আগেই এ পেঁয়াজ হয়েছে। প্রতি বছর যদি এই পেঁয়াজ আমরা চাষাবাদ করতে পারি তাহলে সংকট সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবে। কৃষক জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার-গোবর 

সার ব্যবহার করে তাহলে পেঁয়াজের বাল্ব ভালো এবং এক বিঘা জমিতে ২০০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে। এতে কৃষক লাভবান হওয়ার সাথে সাথে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দূর হবে। আমরা কৃষি অফিস থেকে বীজ সরবরাহের চেষ্টা করছি।  

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পাবনায় গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ উৎপাদনে ব্যাপক সারা 

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পাবনার ঈশ্বরদীতে এবারে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমিতে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২০০ মন। কম খরচে এবং কম সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে এলাকার কৃষকের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ বছরে তিনবার চাষ করা যায়। তবে শীতকালীন মৌসুমে মুড়ি কাটা এবং চারা পেঁয়াজ উৎপাদন করলে বা এই জাতের বীজ ও চারা তৈরি করলে এই পেঁয়াজ দুইবার আবাদ হয়। 

শীতকালে কৃষকরা বারি পেঁয়াজ-৫ জাতের পেঁয়াজের বীজ ও চারা উৎপাদন করলে বীজ এবং চারা নিয়ে কৃষকদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। তাছাড়া বীজ ও চারা বিক্রি করেও বিপুল টাকা উপার্জন হয়। দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে বেলে দোআঁশ যুক্ত উঁচু জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 

ব্যাপক ভিত্তিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ হলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে সময় প্রায় ৯০ দিন। চারা উৎপাদনে ৪০ থেকে ৪৫ দিন। এক কেজি বীজে ১ বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়। 

একটি পেঁয়াজের আকার অনেক বড় অর্থাৎ ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়। রাসায়নিক সারের সাথে জৈব সার ব্যবহার করলে পেঁয়াজের আকৃতি সুন্দর এবং অনেক বড় হয়।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলী বাদশা এবারে কুতুবপুর গ্রামে প্রায় ৮ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ জাতের আবাদ করেছেন। তিনি বিঘায় ফলন পেয়েছেন ২০০ মণ। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশে গড়মকালে তেমন পেঁয়াজ আবাদ হয় না । বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ নামে একটি জাত বের করেছে। এবারে এই পেঁয়াজ আবাদ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছে। যদি এভাবে ফলন পাওয়া যায় তাহলে দেশে যেসব উঁচু এলাকা রয়েছে, 

সেখানে বর্ষাকালে এই পেঁয়াজ আবাদ করলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণের পর বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তবে দেশে পেঁয়াজের বীজের ঘাটতি রয়েছে। পেঁয়াজ চাষিদের বেশী দামে বীজ কিনতে হয়। 

পেঁয়াজের বীজ ও চারা উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, নির্ধারিত মূল্যে মানসম্মত সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।  

মহাদেবপুর গ্রামের শাহিনুজ্জামান এবারে আড়াই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছিলেন। 

তিনি বলেন, এক একটি পেঁয়াজের ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। সংকট সময়ে পেঁয়াজ উঠে যাওয়ায় প্রথম দিকে তিনি ১৪০ টাকা কেজি দরে ৬০ মন পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। 

মসলা গবেষণা কেন্দ্র বিএডিসি’র মাধ্যমে বীজ সরবরাহ করেছেন বলে জানান তিনি। শাহীন বলেন, বীজ কিনে আবাদ করলে বছরে তিনবার এই পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না মৌসুমে ১০০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এবছর ১ আগস্টও ২২ সেপ্টেম্বর এই পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে। 

মুড়িকাটা পেঁয়াজের আগেই এ পেঁয়াজ হয়েছে। প্রতি বছর যদি এই পেঁয়াজ আমরা চাষাবাদ করতে পারি তাহলে সংকট সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবে। কৃষক জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার-গোবর 

সার ব্যবহার করে তাহলে পেঁয়াজের বাল্ব ভালো এবং এক বিঘা জমিতে ২০০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে। এতে কৃষক লাভবান হওয়ার সাথে সাথে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দূর হবে। আমরা কৃষি অফিস থেকে বীজ সরবরাহের চেষ্টা করছি।