পদোন্নতি চান বঞ্চিত উপসচিবরা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:৫৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
পদোন্নতির দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের। ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের উপসচিবরা শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তনের পর তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছে। বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বিশেষজ্ঞ ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের উপসচিবদের পদোন্নতির দাবি জনানানো হয়েছে। এরমধ্যে ২০০ উপসচিব বিভিন্ন দাবি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য মেধাভিত্তিক দক্ষ জনসম্পদ তৈরি ও ব্যবস্থাপনা। কিন্তু মন্ত্রণালয়টি কার্যত ‘প্রশাসন’ নামক একটি ক্যাডারের স্বার্থ রক্ষার মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সরকারের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুলিপি প্রদান করা হলেও এর কোনো প্রতিকার মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একীভূত হওয়ার কারণে এই এসএসবি ইকোনমিক নামক একটি টেকনিক্যাল ক্যাডারকে (যারা মাত্র ৫০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে এসেছে) সরকারের পুলভুক্ত পদসমূহে রাতারাতি পদোন্নতি প্রদান করেছে। যেমন, ২০২০ সালে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে সাবেক ইকোনমিক ক্যাডার একীভূতকালে ফিডার পদে কাজ না করে, মাঠপ্রশাসনে কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ না দিয়েই সরকারের পুলে স্ব স্ব ব্যাচের সাথে সবাইকে রাতারাতি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করা হয়।
অনেকেই ফিডার পদে একদিনও কাজ না করে পরপর তিন দিনে একাদিক্রমে তিনটি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। এ একীভূতকরণের আগে সরকারের পুলে আসা অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা, যাদের জ্যেষ্ঠতা হরণ করে পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের স্ব স্ব ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতার সমতা নিশ্চিত করে পদোন্নতি দেওয়া উচিত ছিল। অথচ বাস্তবতা হলো, ইকোনমিক ক্যাডার সরকারের পুলের সঙ্গে মার্জ হয়নি, মার্জ হয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে। তারা প্রশাসন ক্যাডারের পদ পেতে পারে, কিন্তু সরকারের পুলভুক্ত উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদসমূহ তাদের প্রদান করে এসএসবি সব আইন-কানুন লঙ্ঘন করেছে এবং সরকারের পুলভুক্ত অন্য কর্মকর্তাদের অধিকার হরণ করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২৫টি বিশেষজ্ঞ ক্যাডার থেকে সম্পূর্ণ মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগত উপসচিবগদের পদোন্নতিবঞ্চিত করে প্রকারান্তরে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে পেশাভিত্তিক ও দক্ষ জনবলের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আবার তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে একদিকে সচিবালয়েও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। অন্যদিকে স্ব স্ব ক্যাডারও তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ভুল নীতি ও কর্মকাণ্ডের কারণে মেধাহীন, কোটারি, জুনিয়রদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারের সচিবালয় বা প্রশাসন ব্যবস্থা। চিঠিতে বলা হয়, আবার যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির সময় চিত্রটি আবার একদম বিপরীত হয়ে যায়। সম্পূর্ণ মেধা এবং পেশাভিত্তিক বিশেষঞ্জ ক্যাডার হতে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকে তাদের স্ব স্ব প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচের সঙ্গে এক শতাংশকেও পদোন্নতি দেওয়া হয় না। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের যে ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়, সেই ব্যাচের অন্য ২৫টি ক্যাডারের দুই-এক জন ছাড়া কাউকেই পদোন্নতি দেওয়া হয় না। অথচ তারা মেধাতালিকার অন্তর্ভুক্ত। সর্বশেষ যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির আদেশে ২৫ ক্যাডারের সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে-যারা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক সিনিয়র এবং বহু আগেই যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও বারবার পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে অবশেষে দৈবচক্রে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু ১৩ থেকে ২২ ব্যাচের ৯০ শতাংশ কর্মকর্তাগণকে এখনো পদোন্নতির জন্য বিবেচনায়ই আনা হচ্ছে না। অথচ এখন প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে।
উল্লেখ্য, অন্যান্য ক্যাডার থেকে পুলভুক্ত উপসচিবগদের পরবর্তী পদসমূহে পদোন্নতির হার আগে ছিল ৩০ শতাংশ যা কমাতে কমাতে এখন ১০শতাংশে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোটা প্রশাসনকে কোটানির্ভর, মেধাহীন, বৈষম্যপূর্ণ ও সিনিয়র নিষ্পেষণের হাতিয়ার বানানো হয়েছে।