ঢাকা ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না শেখ হাসিনা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


গণ আন্দোলনের ৫ আগস্ট( সোমবার) পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তার এ অবস্থানিয়ে নানা জল্পনা- কল্পনা তৈরি হয়েছে । সরকারের তরফে এখনো কিছু বলা হয়নি । শেখ হাসিনাও এই বিষয়ে নিশ্চুপ । তবে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, ৪ আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনা জানতে পারেন- ছাত্র আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব ।

তারপরও শেখ হাসিনা কোনো অবস্থাতেই পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না । বরং তিনি আরো কঠোরভাবে আন্দোলন দমানোর পক্ষে ছিলেন অনড় । পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হলে ছোটবোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হন । একপর্যায়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে । শুরুতে জয় ছিলেন ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত । নিরাপত্তাবাহিনীর অনড় ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত জয় তার মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে সায় দেন । উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনা অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন ।

মানবজমিনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ৪ আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় । কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি ছিলেন না । দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা, পদত্যাগে সম্মতি আদায় এবং সর্বশেষ পদত্যাগপত্র প্রস্তুতিতে দ্রুত সময় ফুরিয়ে যায় । পরিস্থিতির বিষয়ে শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল মর্মে অভিযোগ উঠেছে । এজন্য বিভিন্ন মাধ্যম নানাজনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে । সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে ৪ জনের একটি চক্র বা ‘ গ্যাং অব ফোর’- দায়ী বলে আওয়ামী লীগের এক নেতার বরাতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে । যা নিয়ে ঢাকায় রীতিমতো তোলপাড় চলছে ।

এছাড়া বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে তাৎক্ষণিক দেশি- বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর রটে ৫ আগস্ট আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতের আগরতলা গেছেন, পরে দিল্লি । দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি । ওইদিন সকালে ছোটবোনকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বলেও খবর রটে । এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে চেষ্টা চলছে । হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলেছে । এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না । শেখ হাসিনাকে ধারাবাহিকভাবে দেশের অবস্থা সম্পর্কে নানাভাবে জানানো হচ্ছিল । তিনি কারও কথাই কানে তুলছিলেন না বলেও জানা যায় ।

পদত্যাগ করতে শেখ হাসিনার সময়ক্ষেপণই জাতির জন্য কাল হয় । অন্যথায় গণভবনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে মানুষের ক্ষোভের থাবা কিছুটা কম হতো । ৫ আগস্টের পরিস্থিতি শেখ হাসিনার বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য মোটেই অনুকূল ছিল না । জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরাপত্তাবাহিনীর পরামর্শে সেদিন দুপুরে তিনি গণভবনে বসেই তার পদত্যাগপত্রে সই করেন । যা দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পৌঁছানো হয় ।

এদিকে হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়েননি । এমনকি আগরতলায়ও যাননি । সম্প্রতি বিমান বাহিনীর ফ্লিটে যুক্ত হওয়া সি-১৩০-জে সুপার হারকিউলেস এয়ারক্রাফ্‌ট- এ চড়ে শেখ হাসিনা সরাসরি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন । তার আগে গণভবন থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় তাকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে নেওয়া হয় । সেখানে প্রস্তুত ছিল বৃটিশ এয়ারফোর্সে ব্যবহৃত হওয়া আমেরিকান কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ড ডগলাসের তৈরি সি- ১৩০ জে উড়োজাহাজ । যা আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলেও জানা যায় ।

ফ্লাইটে শেখ হাসিনার একমাত্র সফরসঙ্গী ছিলেন তার ছোটবোন শেখ রেহানা । তাদের বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ননস্টপ ফ্লাই করে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে । সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তাদের রিসিভ করেন । বাংলাদেশের তৎকালীন প্রশাসন দ্রুত ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স পাওয়াসহ শেখ হাসিনাকে গ্রহণের অন্যান্য প্রস্তুতিতে প্রধানত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছিল বলেও জানা যায় ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না শেখ হাসিনা!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪


গণ আন্দোলনের ৫ আগস্ট( সোমবার) পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তার এ অবস্থানিয়ে নানা জল্পনা- কল্পনা তৈরি হয়েছে । সরকারের তরফে এখনো কিছু বলা হয়নি । শেখ হাসিনাও এই বিষয়ে নিশ্চুপ । তবে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, ৪ আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনা জানতে পারেন- ছাত্র আন্দোলন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব ।

তারপরও শেখ হাসিনা কোনো অবস্থাতেই পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না । বরং তিনি আরো কঠোরভাবে আন্দোলন দমানোর পক্ষে ছিলেন অনড় । পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হলে ছোটবোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হন । একপর্যায়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে । শুরুতে জয় ছিলেন ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত । নিরাপত্তাবাহিনীর অনড় ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত জয় তার মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে সায় দেন । উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনা অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন ।

মানবজমিনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ৪ আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় । কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি ছিলেন না । দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা, পদত্যাগে সম্মতি আদায় এবং সর্বশেষ পদত্যাগপত্র প্রস্তুতিতে দ্রুত সময় ফুরিয়ে যায় । পরিস্থিতির বিষয়ে শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল মর্মে অভিযোগ উঠেছে । এজন্য বিভিন্ন মাধ্যম নানাজনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে । সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে ৪ জনের একটি চক্র বা ‘ গ্যাং অব ফোর’- দায়ী বলে আওয়ামী লীগের এক নেতার বরাতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে । যা নিয়ে ঢাকায় রীতিমতো তোলপাড় চলছে ।

এছাড়া বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে তাৎক্ষণিক দেশি- বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর রটে ৫ আগস্ট আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতের আগরতলা গেছেন, পরে দিল্লি । দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি । ওইদিন সকালে ছোটবোনকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বলেও খবর রটে । এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে চেষ্টা চলছে । হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলেছে । এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না । শেখ হাসিনাকে ধারাবাহিকভাবে দেশের অবস্থা সম্পর্কে নানাভাবে জানানো হচ্ছিল । তিনি কারও কথাই কানে তুলছিলেন না বলেও জানা যায় ।

পদত্যাগ করতে শেখ হাসিনার সময়ক্ষেপণই জাতির জন্য কাল হয় । অন্যথায় গণভবনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে মানুষের ক্ষোভের থাবা কিছুটা কম হতো । ৫ আগস্টের পরিস্থিতি শেখ হাসিনার বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য মোটেই অনুকূল ছিল না । জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরাপত্তাবাহিনীর পরামর্শে সেদিন দুপুরে তিনি গণভবনে বসেই তার পদত্যাগপত্রে সই করেন । যা দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পৌঁছানো হয় ।

এদিকে হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়েননি । এমনকি আগরতলায়ও যাননি । সম্প্রতি বিমান বাহিনীর ফ্লিটে যুক্ত হওয়া সি-১৩০-জে সুপার হারকিউলেস এয়ারক্রাফ্‌ট- এ চড়ে শেখ হাসিনা সরাসরি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন । তার আগে গণভবন থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় তাকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে নেওয়া হয় । সেখানে প্রস্তুত ছিল বৃটিশ এয়ারফোর্সে ব্যবহৃত হওয়া আমেরিকান কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ড ডগলাসের তৈরি সি- ১৩০ জে উড়োজাহাজ । যা আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলেও জানা যায় ।

ফ্লাইটে শেখ হাসিনার একমাত্র সফরসঙ্গী ছিলেন তার ছোটবোন শেখ রেহানা । তাদের বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ননস্টপ ফ্লাই করে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে । সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তাদের রিসিভ করেন । বাংলাদেশের তৎকালীন প্রশাসন দ্রুত ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স পাওয়াসহ শেখ হাসিনাকে গ্রহণের অন্যান্য প্রস্তুতিতে প্রধানত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছিল বলেও জানা যায় ।