ন্যাশনাল ব্যাংক ১৮ কোটি জনগণের ব্যাংক
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০২:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪ ২৩১ বার পড়া হয়েছে
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ব্যাংকটির হারানো গৌরব আবার ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যাংক নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আবারো পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক । চলতি বছরের ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংক খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয় । দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব খলিলুর রহমান দেশের অন্যতম ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান । এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির( সিএমসিসিআই) সভাপতি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের( বিআইসিডিএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সিআর কয়েল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের( বিসিআরসিএমইএ) চেয়ারম্যান ।
দীর্ঘ ব্যাবসায়িক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের হারানো গৌরব ফেরানোর কথা উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেছেন, ব্যবসায়ী হিসেবে জানি ব্যাংকটিকে কিভাবে লাভজনক করতে হয় । ১৯৮৩ সালে আমরা এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি । আমি জানি, ব্যাংকের কোথায় কী আছে, কী কী সমস্যা আছে, কারণগুলো আমাদের জানা । এই ব্যাংক ২০১২ সাল পর্যন্ত এক নম্বর কাতারে ছিল । বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ফার্স্ট জেনারেশনের ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক । তখন আমাদের যাঁরা পরিচালক ছিলেন সবাই ব্যবসায়ী ছিলেন । তাঁদের ব্যবসার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল । ওই অভিজ্ঞতা দিয়ে আমরা ব্যাংকটি করেছিলাম ।
নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, যারা প্রকৃত ব্যবসা করেন, দেশে বিনিয়োগ করেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন তাদের যথেষ্ট সুযোগ দেব । এটি আমার ব্যাংক কখনো বলি না । আমরা বলি, ন্যাশনাল ব্যাংক জনগণের ব্যাংক, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ব্যাংক ।
তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি আপনারা জানেন । ব্যাংক কার দ্বারা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিভাবে টাকা নিয়েছে তা সবাই সব জানেন । একসময়ের সফল একটি ব্যাংককে রক্ষা করতে, বাঁচাতে আমরা একত্র হয়েছি । বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি, আমরা একীভূত হব না । আমরা নিজেরা চালাব । আমরা কষ্ট করে চালাব । পরিশ্রম, সততা থাকলে, কষ্ট করলে এগিয়ে নিতে পারব । পাওনা উসুল করব । যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের বোঝাব, আইন প্রয়োগ করে টাকা ফেরত আনব । ডিপোজিট আনব । ডিপোজিট দিয়ে ব্যবসা করব । একসময় গ্রাহকদের আমরা বেশি লভ্যাংশ দিয়েছি । ইচ্ছা করলে আমরা উন্নত করে এগিয়ে নিতে পারব । ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো গৌরব আবারও ফিরিয়ে আনতে পারব ইনশাআল্লাহ । এটা আমার বিশ্বাস । ৪ বছরে আমরা একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছতে পারব ।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছি । বাংলাদেশ ব্যাংক যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে । যারা ঋণ নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে আদায় করবই । আমরা খেলাপি ঋণ আদায়ের চেষ্টা করব । প্রকৃত ব্যবসায়ী ঋণ নিলে খেলাপি হতে পারেন না । অ্যাসেসমেন্ট করে ঋণ দেওয়া হয়নি । মনিটরিং করা হয়নি । বড় খেলাপিদের সঙ্গে কথা বলেছি । তাঁরা ভুল স্বীকার করেছেন, টাকা পরিশোধে ইচ্ছুক । বড় ব্যবসায়ীদের টাকা খেলাপি হবে না । ব্যবসা করে ক্ষতি পুষিয়ে নেব । যাঁরা ব্যবসায়ী না হয়ে ঋণ নিয়েছেন, তাঁরাই সমস্যা । অন্তত ৫০ শতাংশ আদায়ে আমরা আশাবাদী ।
বর্তমান সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক এককভাবে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা রাখে কি না, জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ব্যাংকটি একীভূত করার বিষয়ে চাপ থাকার বিষয়টি সত্যিকার অর্থে সঠিক নয় । আমরা যখন শুনেছি ব্যাংকটিকে একীভূত করার কথা চলছে, তখনই আমরা আগের পর্ষদ সভা করে সিদ্ধান্ত দিই, যে ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে যাচ্ছে তার চেয়ে আমাদের ব্যাংকের ভিত্তি শক্ত বেশি । আমরা কেন একীভূত হবো? আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করি । আমরা পর্ষদ থেকে সিদ্ধান্ত দিলাম, আমরা একীভূত হতে রাজি নই । আমাদের ব্যাংক আমরা চালাব । দরকার হলে নতুন পর্ষদ গঠন করব । অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে অনেক লোকের চাকরি হারানোর শঙ্কা ছিল । কারণ অনেক জায়গায় দুটি ব্যাংকেরই শাখা রয়েছে । সে বিষয়টিও আমরা ভেবেছি ।
ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, আমরা যখন চার কোটি টাকায় এই ব্যাংকের উদ্যোগ নিয়েছিলাম তখন বেসরকারি ব্যাংক ছিলআ না । আমরা বন্ধুবান্ধবকে ধরে এনে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে এনেছি । ব্যাংকের পরিচালক হলে টাকা ফেরত পাবে কি না, তখন চিন্তা কেতো । আমি বলেছি, তুমি টাকা দাও, টাকা ফেরত না পেলে আমি দিয়ে দেবো । এভাবে বলে রাজি করিয়েছি ।
এই শিল্পোদ্যোক্তা বলেন, ব্যাংক ব্যবসা বুঝতে হবে । ব্যাংক ম্যানেজার ব্যবসা বুঝলে ঋণ দিতে পারেন । যাকে ঋণ দেবেন, তার বিনিয়োগ মনিটর করতে হবে । নিয়মিত পরিশোধ করছে কি না, দেখতে হবে । বড় ঋণ ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক, বার্ষিক রিশিডিউল করা হবে । মনিটরিং থাকলে টাকা খেলাপি হয় না । খেলাপির কারণে বিশ্বাস কমে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের । প্রকৃত ব্যবসায়ী ব্যাংকের টাকা মেরে খাবেন না । ব্যবসায়ীদের মুখের কথার দাম আছে ।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন প্রয়োজন হলে তাদের জামানত হিসেবে দেয়া বাড়ি, জমি বিক্রি করে দেবো । দেশে আইন আছে, ব্যাংকের টাকা দিতে না পারলে সম্পদ বিক্রি করে দেয়া যায় ।
নতুন পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটিতে ৩ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে । এই আমানত কার কাছ থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক’দিন আগেও শেয়ারের দাম সাড়ে ৪ টাকা ছিলো, এখন ৭ টাকা হয়েছে । ডিপোজিট দিন দিন বাড়ছে । এজন্য বন্ধু, ব্যবসায়ীদের কাছে যাবো । ডিপোজিট খাটিয়ে আমানতকারীকে লাভ দিতে হবে । আমাদের মালয়েশিয়ায় ১১টি, মালদ্বীপে তিনটি, সিঙ্গাপুরে দুটিসহ বিভিন্ন দেশে শাখা আছে । এসব শাখার মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করব । আশা করি, চার বছরেই আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবো ।