তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘন্টার অবরোধ চলছে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:০৫:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলাতে ৭২ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন শান্তিপূর্নভাবে চলছে। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও সব ধরনের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রোববার(২২শে সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি শহরের ভেতরে কিছু ব্যাটারিচালিত অটো, মোটর সাইকেল চলাচল করলেও আন্ত:জেলা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে গাড়ি চলছে না। শহরের ভেতরে দোকান-পাট খুললেও শহরের বাইরে বেশির ভাগ স্থানে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় অবকাশ কেন্দ্র রাঙামাটির সাজেকে কয়েকশ পর্যটক আটকে পড়েছেন। অবরোধের কারণে তারা ফিরতে পারছেন না।
অন্যদিকে, অবরোধের কারণে বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকায় জুম্ম ছাত্র জনতার সমাবেশ থেকে এই অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতা ও হত্যার প্রতিবাদে ৭২ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ চলমান অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার (২১শে সেপ্টেম্ব) সকাল থেকে এ সড়ক অবরোধ শুরু হয়। সড়ক অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। শহরের ভেতর কিছু হালকা যান চলাচল করলেও তা ছিলো অনেকটাই সীমিত। গতকাল শুক্রবার লক্ষ্মীছড়িতে এক সমাবেশ থেকে ইউপিডিএফ এ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
গত বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরে মোটর সার্কেল চুরির অভিযোগে মো: মামুনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে অপ্রীতিকর ঘটনায় ৩জন ও রাঙামাটিতে একজন নিহতসহ আরো কয়েকজন আহত হন। দীঘিনালায় পুড়িয়ে দেয়া হয় অর্ধশতাধিক দোকানপাট। বর্তমানে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। জেলা জুড়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অবরোধকে কেন্দ্র করে ৯টি উপজেলায় কোন ধরণের পিকেটিং বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে অবরোধে দূর পাল্লার কোন গাড়ি চলাচল চোখে পড়েনি। স্থানীয়ভাবে সিএনজি, মাহিন্দ্র, অটোরিকশা চলাচল করছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, চলমান অবরোধে মাটিরাঙ্গায় ঢাকা-খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর মোটর সাইকেল চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে খাগড়াছড়ি সদরে মামুন নামে এক যুবক নিহত হয়। এ ঘটনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালির মাঝে সংঘর্ষ, অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা অভিযোগ, গুলি ও পাল্টা গুলির ঘটনা ঘটে। এতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিদল খাগড়াছড়ি সফরে আসেন। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) আব্দুল হাফিজ।
প্রতিনিধি দলটি বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন।
প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সা¤প্রদায়িক হামলা, খুন ও বিহার-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিযেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)। এছাড়া দলটি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায়(রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ৭২ঘন্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিযেছে।