ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রী বেশি বরিশালে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৩২:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৯৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

টানা তাপদাহ, গ্রাম-গঞ্জের পুকুর শুকিয়ে যাওয়া, নলকূপে পানি না ওঠার কারনে বরিশাল অঞ্চলে ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া ছড়িয়ে পড়ছে। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে উঠে যাওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই নানা ধরনের পেটের পীড়া ছাড়াও ডায়রিয়ার প্রকোপে সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

এ অঞ্চলের শুধু সরকারী হাসপাতালগুলোতেই প্রতিদিন সাড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৭শ রোগী ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া নিয়ে চিকিৎসকদের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। বছরের প্রথম সাড়ে ৩ মাসেই বরিশালের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া সহ পেটের নানা পীড়া নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন।

এসময়ে আরও অন্তত ১০ হাজার নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিলেও মৃত্যু হয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক রোগীর। তবে মার্চের মধ্যভাগের পরে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেলেও চলতি তাপদাহে ঘামিয়ে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগী বাড়ছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলেও জানুয়ারীতে ৫ জন এবং ফেব্রুয়ারী ও মার্চে একজন করে এবং চলতি মাসেও আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু জ¦রে। গত বছরের মধ্যভাগ থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৩৯ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও ২১৮ জনের মৃত্যুর কথা বলেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।

গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশালে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়া নিয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২১ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা নেয়ার পরে গত ৪ দিনে আরো ৪ সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এরমধ্যে গত ১৬ এপ্রিলই ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া নিয়ে সাড়ে ৬শ রোগী সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের স্মরনাপন্ন হন।

গত জানুয়ারী মাসে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার, ফেব্রæয়ারীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং মার্চে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরে চলতি মাসের শুরু থেকে ব্যপকহারে ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া ছড়িয়ে পড়েছে বরিশালে।

এছাড়া গত বছর বরিশাল অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যে সংখ্যাটা আগের বছর ছিল ৭৭ হাজারেরও বেশী। আর ২০২১ সালে করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংক্রমনের মধ্যেই ডায়রিয়া নিয়ে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়েছিলেন প্রায় ৮০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, সরকারী হাসপাতালের বাইরে আরো অন্তত তিন গুন রোগী ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া নিয়ে বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

তবে বরিশালে ডায়রিয়ার সাথে নানা ধরনের পেটের পীড়ার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের মতে বরিশাল মহানগরীসহ এ অঞ্চল জুড়ে পথ খাবারের দোকানের খাবার ডায়রিয়ার সাথে নানামুখি পেটের পীড়াকে অনেকটা মহামারিতে পরিণত করছে। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হয়ে এসব পথ খাবার পরিহারেরও পারামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য প্রশাসন।

এদিকে, অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী নিয়ে ধুকতে থাকা বরিশাল অঞ্চলের সব সরকারী হাসপাতালগুলোতে সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থা যখন বিপর্যস্ত। তারই মধ্যে ডায়রিয়া এবং পেটের পীড়া চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানামুখি বিড়ম্বনা তৈরী করছে। তবে সব সরকারী হাসপাতালেই পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন ও খাবার স্যালাইন সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী মজুতের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। সব চিকিৎসকই তাদের ডিউটি আওয়ারের বাইরেও হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

গত কয়েক বছর ধরেই বরিশালে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডায়রিয়া ভীতি ছড়ালেও এখন সরকারী হাসপাতালগুলোতে বছরব্যাপী এ ধরনের রোগীদের আগমন অব্যাহত থাকছে। অপরদিকে সদ্য সমাপ্ত শীত মৌসুমে বরিশালে সাম্প্রতিককালের সর্বাধিক সংখ্যক নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগী শনাক্ত হয়। যার একটি অংশ সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যে সংখ্যাটা ছিল ৭৭ হাজারেরও বেশী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রী বেশি বরিশালে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৩২:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

টানা তাপদাহ, গ্রাম-গঞ্জের পুকুর শুকিয়ে যাওয়া, নলকূপে পানি না ওঠার কারনে বরিশাল অঞ্চলে ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া ছড়িয়ে পড়ছে। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে উঠে যাওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই নানা ধরনের পেটের পীড়া ছাড়াও ডায়রিয়ার প্রকোপে সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

এ অঞ্চলের শুধু সরকারী হাসপাতালগুলোতেই প্রতিদিন সাড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৭শ রোগী ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া নিয়ে চিকিৎসকদের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। বছরের প্রথম সাড়ে ৩ মাসেই বরিশালের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া সহ পেটের নানা পীড়া নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন।

এসময়ে আরও অন্তত ১০ হাজার নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিলেও মৃত্যু হয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক রোগীর। তবে মার্চের মধ্যভাগের পরে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেলেও চলতি তাপদাহে ঘামিয়ে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগী বাড়ছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলেও জানুয়ারীতে ৫ জন এবং ফেব্রুয়ারী ও মার্চে একজন করে এবং চলতি মাসেও আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু জ¦রে। গত বছরের মধ্যভাগ থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৩৯ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও ২১৮ জনের মৃত্যুর কথা বলেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।

গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশালে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়া নিয়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২১ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা নেয়ার পরে গত ৪ দিনে আরো ৪ সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এরমধ্যে গত ১৬ এপ্রিলই ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া নিয়ে সাড়ে ৬শ রোগী সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের স্মরনাপন্ন হন।

গত জানুয়ারী মাসে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার, ফেব্রæয়ারীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং মার্চে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরে চলতি মাসের শুরু থেকে ব্যপকহারে ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া ছড়িয়ে পড়েছে বরিশালে।

এছাড়া গত বছর বরিশাল অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যে সংখ্যাটা আগের বছর ছিল ৭৭ হাজারেরও বেশী। আর ২০২১ সালে করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংক্রমনের মধ্যেই ডায়রিয়া নিয়ে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়েছিলেন প্রায় ৮০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, সরকারী হাসপাতালের বাইরে আরো অন্তত তিন গুন রোগী ডায়রিয়া ও পেটের পীড়া নিয়ে বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

তবে বরিশালে ডায়রিয়ার সাথে নানা ধরনের পেটের পীড়ার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের মতে বরিশাল মহানগরীসহ এ অঞ্চল জুড়ে পথ খাবারের দোকানের খাবার ডায়রিয়ার সাথে নানামুখি পেটের পীড়াকে অনেকটা মহামারিতে পরিণত করছে। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হয়ে এসব পথ খাবার পরিহারেরও পারামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য প্রশাসন।

এদিকে, অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী নিয়ে ধুকতে থাকা বরিশাল অঞ্চলের সব সরকারী হাসপাতালগুলোতে সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থা যখন বিপর্যস্ত। তারই মধ্যে ডায়রিয়া এবং পেটের পীড়া চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানামুখি বিড়ম্বনা তৈরী করছে। তবে সব সরকারী হাসপাতালেই পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন ও খাবার স্যালাইন সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী মজুতের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। সব চিকিৎসকই তাদের ডিউটি আওয়ারের বাইরেও হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

গত কয়েক বছর ধরেই বরিশালে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডায়রিয়া ভীতি ছড়ালেও এখন সরকারী হাসপাতালগুলোতে বছরব্যাপী এ ধরনের রোগীদের আগমন অব্যাহত থাকছে। অপরদিকে সদ্য সমাপ্ত শীত মৌসুমে বরিশালে সাম্প্রতিককালের সর্বাধিক সংখ্যক নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগী শনাক্ত হয়। যার একটি অংশ সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যে সংখ্যাটা ছিল ৭৭ হাজারেরও বেশী।