ডিসি নিয়োগে ৩ কোটির ক্যাশ চেক! তদন্ত কমিটি গঠন
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৩১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
একটি দৈনিকে প্রকাশিত ‘তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!’ শীর্ষক প্রতিবেদন’র বিষয়ে তদন্তের জন্য এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ কমিটি চেকের সত্যতা যাচাই করবে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল করিম মাকসুদ জাহেদীকে এ কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ কমিটিকে চেকের সত্যতা যাচাই করে আগামী ৩ দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লিয়াকত আলী সেখ এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন।
প্রসঙ্গত, তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হয়েছে। সেখানে নওগাঁর নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল এর নাম পাওয়া যায়।
গণ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জনপ্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষা ক্যাডারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদগুলোতে পরিবর্তন আসছে। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ২ দিনে ৫৯টি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেয়া হয়। এরমধ্যে ৮ জেলা প্রশাসকের নিয়োগের আদেশ বাতিল করেছে সরকার। এসব জেলায় এখন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
সচিবালয় ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সম্প্রতি ডিসি নিয়োগের ঘটনায় আলোচনায় আসা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের (এপিডি) কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়। পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্ম সচিবকে চেকটি দেন এক ব্যবসায়ী। তবে কাঙ্ক্ষিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেননি ডিসি। অন্যদিকে সব কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চেকদাতা ওই ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, এবারের ডিসি নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ডিসি ফিটলিস্ট তৈরির আগেই এসব অর্থের লেনদেন হয়। এতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৩ দিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার চেক উদ্ধার করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সাথে চেকদাতার এনআইডির ফটোকপিসহ ডিসি নিয়োগ-সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র এবং চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। যেখানে ডিসি নিয়োগ সম্পর্কিত ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের নানা আলামত পেয়েছেন তারা। সচিবালয়ে ড. জিয়ার কক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কিছু চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে একটি চিরকুটে ৫ জন কর্মকর্তার নাম এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত জেলাগুলোর নামও লেখা রয়েছে। মূলত বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অংশ হিসেবেই তাদের নাম চিরকুটে লেখা হয়। যে নামগুলো ডিসির জন্য তৈরি করা ফিটলিস্টে রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ডিসি হিসেবে পদায়নও পান। আর পদায়ন পাওয়া উত্তরাঞ্চলের একজন ডিসির কাছ থেকেই ৩ কোটি টাকার চেক নেয়া হয়। যিনি আবার দুর্নীতি দমন কমিশনেই (দুদক) কর্মরত ছিলেন। তবে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ওই কর্মকর্তার পক্ষে মো. মীর্জা সবেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী এই চেকটি প্রদান করেন। পদ্মা ব্যাংকের লক্ষ্মীবাজার উপশাখা থেকে দেওয়া এই চেকের গ্রাহক কুড়িগ্রাম জেলার স্থায়ী বাসিন্দা।
তবে নিয়োগ পাওয়ার পর ৩ কোটি টাকা নগদায়ন না করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের পর প্রত্যাহার হওয়ার আশঙ্কায় বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
সূত্রগুলো আরও জানায়, শুধু আর্থিক লেনদেনের চুক্তি হওয়া ডিসি প্রার্থী পাঁচ কর্মকর্তার কাছ থেকেই এভাবে অন্তত ১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। চুক্তির আগে শুধু পদায়ন পর্যন্তই দায়িত্ব নেন জনপ্রশাসনের প্রভাবশালী ওই দুই কর্মকর্তা। এরপর কোনো কারণে মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হওয়া অথবা প্রত্যাহার হয়ে গেলে তার দায় নিতে রাজি নন বলে তারা প্রার্থীদের জানিয়ে দেন।