ঢাকা ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাঙ্গনে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ১৪টি বন অফিস, জামতলা সী-বিচ

ছোট হয়ে আসছে সুন্দরবন

আবু হানিফ, বাগেরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪ ৩০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগের পর এবার তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড সুন্দরবন। ইতিমধ্যেই স্থলভাগে তীব্র ভাঙ্গনে দেখা দেয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের সমুদ্র ও বড় বড় নদী তীরবর্তী বন বিভাগের ১৪টি বন অফিসের সব স্থাপনা।

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ভাঙ্গন এতাটাই ভয়াবহ অবস্থা ধারন করে কয়েটি বন অভিসের মাত্র কয়েক হাত কাছাকাছি চলে এসেছে। এমনকি বঙ্গোপসাগরের তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সুন্দরবনের এক জায়গায় বসে সূর্যোদয়- সূর্যাস্ত দেখার নয়নাভিরাম প্রাকৃতির লীলাভূমি ‘জামতলা সী-বিচ’ এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবনে সাগর নদীর তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়া বন অফিসগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দূবলার অস্থায়ী শুটকি পল্লী, শ্যালারচর, আলোরকোল, কোকিলমুনি, বগী, শরণখোলা, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাড়ী, চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া, হারবাড়ীয়া এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র। ভয়াবহ এই ভাঙ্গনের ফলে ছোট হয়ে আসছে সুন্দরবনের স্থল ভাগের আয়তন। সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

জীববৈচিত্র্যের আধার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিাটার। এরমধ্যে স্থল ভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার, আর জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমটার। সুন্দরবন সঙলগ্ন সমুদ্র এলাকার পরিমান ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২বর্গ কিলোমিটার।

বিশ্বের এই বৃহৎ জলাভুমিও আন্তজাতিক ভাবে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবির বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনে রয়েছে ১৮৪ প্রজাতির গাছপালা, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রানী ও ২৯২ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ। সাগর নদীর তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়ে এখন অস্তিস্ব সংকটে পড়েছে সুযন্দনবন। এই অবস্থায় দ্রত ভাঙ্গন মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বের্ডের সহয়তা চেয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

সরেজমিনে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমুনি, বগী, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাড়ী ও , চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া টহল ফাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাগর সংলগ্ন এসব বন অফিসের অনেক এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝাপসি টহল ফাড়ির বনকর্মী জানান, আমাদের অফিসের মাত্র কয়েক হাত দুরেই নদী চলে এসেছে। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র ভাঙ্গনে অফিস সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অত্যন্ত ঝুকির মধ্যে রয়েছি যে কোন সময়ে আমাদের টহল ফাড়িটি নদীগর্ভে নিপাতিত হতে পারে। একই অবস্থা কটকা ফরেষ্ট স্টেশনের এখানকার দায়িত্বরত স্টেশন কর্মকর্তা সুরজিত চেীধূরী বলেন গত এক মাস ধরেই তীব্র ভাঙ্গনের মুখে আমরা রয়েছি। দিনকে দিন ভাঙ্গনে বেড়েই চলেছে।

শরণখোলা বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, সাগর সংলগ্ন নদীর পাড়ে এমন ভাঙ্গন ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। আমরা আতংকিত অবস্থায় দিন যাপন করছি। প্রতিদিন অফিস সংলগ্ন বনের এলাকা পানির তোড়ে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হলে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, শরণখোলা রেঞ্জের মধ্যে ৯টি বন অফিস ও টহল ফাড়িসহ জামতলা সী-বিচ মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সাগর ও নদী ভাঙ্গন এতাটাই ভয়াবহ অবস্থা ধারন করে কয়েটি বন অভিস ভাঙ্গনের মাত্র কয়েক হাত কাছাকাছি চলে এসেছে। এসব বন অফিসের সব অবকাঠামো যে কেন মুহুর্তে নদী ও সমুদ্রে তলিয়ে যেওত পাবে। বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষতে অবহিত করেছি।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, সুন্দরবনের স্থল ভাগ সমুদ্র ও নদী ভঙ্গনের স্থানে আমরা ভাঙ্গা নৌকা ডুবিয়ে রেখে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এরমধ্যে দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। বন বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষেকে ভাঙ্গনের বিষয়টি জানানোর পর তারাও আন্ত:মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলে সুন্দরবনের স্থল ভাগের এই ভাঙ্গন দ্রুত প্রতিরোধে বিষয়ে আলোচনা চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ভাঙ্গনে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ১৪টি বন অফিস, জামতলা সী-বিচ

ছোট হয়ে আসছে সুন্দরবন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগের পর এবার তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড সুন্দরবন। ইতিমধ্যেই স্থলভাগে তীব্র ভাঙ্গনে দেখা দেয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের সমুদ্র ও বড় বড় নদী তীরবর্তী বন বিভাগের ১৪টি বন অফিসের সব স্থাপনা।

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ভাঙ্গন এতাটাই ভয়াবহ অবস্থা ধারন করে কয়েটি বন অভিসের মাত্র কয়েক হাত কাছাকাছি চলে এসেছে। এমনকি বঙ্গোপসাগরের তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সুন্দরবনের এক জায়গায় বসে সূর্যোদয়- সূর্যাস্ত দেখার নয়নাভিরাম প্রাকৃতির লীলাভূমি ‘জামতলা সী-বিচ’ এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবনে সাগর নদীর তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়া বন অফিসগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দূবলার অস্থায়ী শুটকি পল্লী, শ্যালারচর, আলোরকোল, কোকিলমুনি, বগী, শরণখোলা, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাড়ী, চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া, হারবাড়ীয়া এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র। ভয়াবহ এই ভাঙ্গনের ফলে ছোট হয়ে আসছে সুন্দরবনের স্থল ভাগের আয়তন। সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

জীববৈচিত্র্যের আধার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিাটার। এরমধ্যে স্থল ভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার, আর জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমটার। সুন্দরবন সঙলগ্ন সমুদ্র এলাকার পরিমান ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২বর্গ কিলোমিটার।

বিশ্বের এই বৃহৎ জলাভুমিও আন্তজাতিক ভাবে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবির বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনে রয়েছে ১৮৪ প্রজাতির গাছপালা, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রানী ও ২৯২ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ। সাগর নদীর তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়ে এখন অস্তিস্ব সংকটে পড়েছে সুযন্দনবন। এই অবস্থায় দ্রত ভাঙ্গন মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বের্ডের সহয়তা চেয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

সরেজমিনে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমুনি, বগী, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাড়ী ও , চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া টহল ফাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাগর সংলগ্ন এসব বন অফিসের অনেক এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝাপসি টহল ফাড়ির বনকর্মী জানান, আমাদের অফিসের মাত্র কয়েক হাত দুরেই নদী চলে এসেছে। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র ভাঙ্গনে অফিস সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অত্যন্ত ঝুকির মধ্যে রয়েছি যে কোন সময়ে আমাদের টহল ফাড়িটি নদীগর্ভে নিপাতিত হতে পারে। একই অবস্থা কটকা ফরেষ্ট স্টেশনের এখানকার দায়িত্বরত স্টেশন কর্মকর্তা সুরজিত চেীধূরী বলেন গত এক মাস ধরেই তীব্র ভাঙ্গনের মুখে আমরা রয়েছি। দিনকে দিন ভাঙ্গনে বেড়েই চলেছে।

শরণখোলা বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, সাগর সংলগ্ন নদীর পাড়ে এমন ভাঙ্গন ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। আমরা আতংকিত অবস্থায় দিন যাপন করছি। প্রতিদিন অফিস সংলগ্ন বনের এলাকা পানির তোড়ে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হলে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, শরণখোলা রেঞ্জের মধ্যে ৯টি বন অফিস ও টহল ফাড়িসহ জামতলা সী-বিচ মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সাগর ও নদী ভাঙ্গন এতাটাই ভয়াবহ অবস্থা ধারন করে কয়েটি বন অভিস ভাঙ্গনের মাত্র কয়েক হাত কাছাকাছি চলে এসেছে। এসব বন অফিসের সব অবকাঠামো যে কেন মুহুর্তে নদী ও সমুদ্রে তলিয়ে যেওত পাবে। বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষতে অবহিত করেছি।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, সুন্দরবনের স্থল ভাগ সমুদ্র ও নদী ভঙ্গনের স্থানে আমরা ভাঙ্গা নৌকা ডুবিয়ে রেখে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এরমধ্যে দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। বন বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষেকে ভাঙ্গনের বিষয়টি জানানোর পর তারাও আন্ত:মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলে সুন্দরবনের স্থল ভাগের এই ভাঙ্গন দ্রুত প্রতিরোধে বিষয়ে আলোচনা চলছে।