ঢাকা ০২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাগলকাণ্ডের মতিউর বিদেশ যেতে চান

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান বিদেশ যাওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিটটি করেন তার আইনজীবী।

২১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে; মতিউর রহমান তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ওই দিন দু’দক উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন ফের তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কামিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ৬ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ দেওয়া আবশ্যক।

গত ১৮ আগস্ট কমিশনের পূর্বানুমোদনক্রমে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ৩১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে অবসরে পাঠানো হয়।

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর ও তার পরিবারের স্বজনরা ছিলেন বেপরোয়া। এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শতাংশ জমি, বহুতল ভবন, ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ২৩টি বিও হিসাব ক্রোক হয়েছে। তাদের আরো সম্পদের খোঁজ চলছে।

এর আগে মতিউর রহমানকে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৩০ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ক্রয় করা কোনো জমি আছে কি না, সেটি জানতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেয় দুদক।

জানা যায়, মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। কিন্তু প্রতিবারই নানা কৌশলে নানা প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মুছে ক্লিন শিট পেয়েছিলেন তিনি। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে।

ওই সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।

২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ, বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়, ক্লিন শিট পান মতিউর।

এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরো দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। ফলে আবারও ক্লিন শিট পান তিনি।

তবে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছে মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায় দুদক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ছাগলকাণ্ডের মতিউর বিদেশ যেতে চান

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান বিদেশ যাওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিটটি করেন তার আইনজীবী।

২১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে; মতিউর রহমান তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ওই দিন দু’দক উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন ফের তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কামিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ৬ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ দেওয়া আবশ্যক।

গত ১৮ আগস্ট কমিশনের পূর্বানুমোদনক্রমে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ৩১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে অবসরে পাঠানো হয়।

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর ও তার পরিবারের স্বজনরা ছিলেন বেপরোয়া। এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শতাংশ জমি, বহুতল ভবন, ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ২৩টি বিও হিসাব ক্রোক হয়েছে। তাদের আরো সম্পদের খোঁজ চলছে।

এর আগে মতিউর রহমানকে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৩০ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ক্রয় করা কোনো জমি আছে কি না, সেটি জানতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেয় দুদক।

জানা যায়, মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। কিন্তু প্রতিবারই নানা কৌশলে নানা প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মুছে ক্লিন শিট পেয়েছিলেন তিনি। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে।

ওই সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।

২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ, বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়, ক্লিন শিট পান মতিউর।

এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরো দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। ফলে আবারও ক্লিন শিট পান তিনি।

তবে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছে মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায় দুদক।