গভীর রাতে তুলে নিয়ে শেয়ার কেড়ে নেয় বেনজীর ও নাফিজ, দাবি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যানের
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:২৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪ ১৭৮ বার পড়া হয়েছে
সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান এমপিকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার লিখে নেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। রাত ১টার দিকে সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে বাসা থেকে বেনজীরের কাছে নিয়ে যান নাফিজ সরাফাত।
আরও পড়ুন : মাদারীপুরে হিন্দুদের জমি জোর করে সস্তায় কেনেন বেনজীর
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) লিখিত বক্তব্যে এমনটাই দাবি করেন শফিকুর রহমান এমপি। সিনিয়র সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান চাঁদপুর- ৪ আসনের এমপি । ২০১৬- ১৭ এবং ২০১৭- ১৮ মেয়াদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সরকারের অনুমোদন পায় স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সিটিজেন টিভি । তবে এখনো এই টেলিভিশনটি সম্প্রচারে আসেনি ।
লিখিত বক্তব্যে মুহম্মদ শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান( মালিক) । প্রথমদিকে আমার কোন শেয়ারহোল্ডার ছিলো না । একা অনএয়ারে আসার মত টাকাও ছিল না । আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় রুট গ্রুপের মালিক রাজ্জাকুল হোসেন টুটুল অনুরোধ করেন, তাকে সাথে নিলে অনএয়ারে আসার জন্য বাড়িভাড়া, অফিস স্টাফসহ ৩০- ৪০ লাখ টাকা যা খরচ হয়, তা তিনি করবেন । আমি তার প্রস্তাবে রাজি হই এবং তাকে সাথে নিয়ে নেই । তবে আজকাল করে বছর চলে যায় । এরমধ্যে সরকারের অন্যান্য যা অনুমোদন দরকার তা করে ফেলি ।
আরও পড়ুন : বিদেশে বেনজীরের সম্পদের খোঁজে দুদক
তিনি বলেন, হঠাৎ একরাতে সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত নামে এক যুবক( আগে চিনতাম না) আমার বনানীর বাড়িতে আসেন । সিটিজেন টিভি স্পোর্টস দিয়ে শুরুর কথা বলে আমাকে তুলে নিয়ে ওয়েস্টিন হোটেলের নিচতলায় বেনজীরের কাছে নিয়ে যান । বেনজীর, নাফিজ সরাফাত, টুটুল ছাড়াও অচেনা চেহারার আরও দু’জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন । যাদের দেখে মনে হলো সশস্ত্র । বেনজীর একটা হলুদ কাগজ আমার হাতে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন । আমি কাগজের লেখা পড়তে শুরু করলে বেনজীর বাধা দিয়ে বলেন, সিটিজেন টিভি হবে স্পোর্টস ওরিয়েন্টেড । অচেনা দুই ব্যক্তিকে দেখিয়ে বলেন এরা স্পোর্টসের লোক । তাদের সাথে একটু চুক্তিতে আসতে হবে । এক পর্যায়ে তারা ধমকের সুরে কথা বলতে থাকে । রাত ২টার দিকে আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হই ।
আরও পড়ুন : স্ত্রী-সন্তানসহ বেনজীরকে দুদকে তলব
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, টেলিভিশন চালুর বিষয়ে টুটুলকে বারবার তাগাদা দিলে তিনি বলেন বেনজীর এবং নাফিজ সব করবেন । তার কাছে কিছু নেই । তখন আমি আরজেএসসিতে গিয়ে সিটিজেন টিভি এভাবে পাই যে, আমার নামে ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া বেনজীরের দুই মেয়ের নামে ১৫ শতাংশ করে ৩০ শতাংশ, নাফিজ সরাফাতের নামে ২৫ শতাংশ। আর টুটুলের নামে ১৫ শতাংশ শেয়ার । এই অবস্থায় ৪ থেকে ৫ বছর চলে যায় । আমি কিছু করতে পারছি না । ওরাও আইন অনুযায়ী আমাকে বাদ দিয়ে চালু করতে পারেননি । তাগাদা দিলে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন ।
আরও পড়ুন : বেনজীরের আলাদীনের চেরাগ দুদকে বন্দি
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বেশ কিছু শর্তে ২০১৭ সালের এপ্রিলে সরকারের অনুমোদন পায় সিটিজেন টিভি । ওই সময় র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ । সরকারি অনুমোদনের ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সম্প্রচারে আসেনি সিটিজেন টিভি । তবে এই টেলিভিশন চ্যানেলের নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে ২০২১ সালে একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট( এসএনডি) অ্যাকাউন্ট খোলা হয় । অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে এই চ্যানেলের রেজিস্ট্রেশন দেখানো হয় ২০১৭- ২০১৮ সালে । সেখানে টিভি চ্যানেলটির চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে মুহম্মদ শফিকুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও বেনজীরের ঘনিষ্ঠ চৌধুরী নাফিজ সরাফাত । এছাড়া পরিচালক হিসেবে নাম রয়েছে বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর । সিটিজেন টিভি অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিলো- এক বছরের মধ্যে সম্প্রচারে আসতে হবে । পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার আগে এবং পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার পর দু’বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, যে কাগজটিতে সই করেছি, সেটি যে শেয়ার হস্তান্তরের কাগজ, তা আমাকে বলা হয়নি । আমাকে ব্লাকমেইল করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমার সাথে মাস্তানি করেছে । ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাগজে টুটুলের নাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, যতোটুকু জানি টুটুলের শেয়ারও তারা নিয়ে নিয়েছে ।
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য নিতে বেনজীর আহমেদকে টেলিফোন করে পাওয়া যায়নি । বক্তব্যের জন্য চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে ফোন করা হলে তিনিও ধরেননি ।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দু’দকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে । দু’দকের অনুরোধে বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যাংকে তথ্য তলব করে চিঠি দেয় । দু’দকের তথ্যের ভিত্তিতে আদালত চলতি মাসের ২৩ মে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৩৪৫ বিঘা( ১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন । এরপর একই মাসের ২৬ মে ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন । এ ছাড়া দুবাই, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে তার কোন সম্পদ আছে কিনা গোয়েন্দা তথ্য চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ ।