ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাবার পানির সংগ্রহে লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪ ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরা উপক‚লে বেড়েছে লবণাক্ততা। মিষ্টি পানির উৎস নষ্ট হয়ে সুপেয় পানির সংকট দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে। পরিবারের বড়রা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় পানি সংগ্রহ করতে হয় শিশুদের। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে যেয়ে স্কুলের সময় পার হয়ে যায় তাদের।

সুপেয় পানির সংকটে সাতক্ষীরা উপক‚লের এমন হাজারো শিশুকে প্রতিদিনই স্কুল বাদ দিয়ে যেতে হচ্ছে পানির সন্ধানে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিশু শিক্ষার ওপর। ফলে অনেকেই ঝরে পড়ছে প্রাথমিকের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় হয়ে পড়ছে অনিয়মিত। সাতক্ষীরা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষার্থী আয়েশা খাতুন জানায়, আমি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। দুই বছর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

শিক্ষার্থী আয়েশা আরও বলেন, আম্মু পানি আনতে আসবে কখন? আর রান্না করবে কখন। সেজন্য আমিই পানি নিতে আসি। এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে হয়। পানি নিতে এসে অনেক দেরি হয়ে যায়। ১টা-২টা বেজে যায়। সেই পরিস্থিতির জন্য আমি পড়াশুনা করতে পারিনি। এমনকি দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে পারলেই পানির চাহিদা মেটে উপক‚লের মানুষের। সেটা সম্ভব না হলে বাধ্য হয়ে পান করতে হয় পুকুরের পানিও।

সাতক্ষীরা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের শিক্ষার্থীর অভিভাবক রোজিনা বেগম বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলে খাবার পানির খুবই সমস্যা। এই অঞ্চলের পানি লোনা। দুই কিলোমিটার দুরে পানি আনতে যেতে হয়। মহসিন সাহেবের পানির কলে। সে কারণে মেয়ের লেখাপড়া হলো না। পড়াশুনা না করলে আমরা বেঁচে থাকতে পারি, কিন্তু পানি না হলে বেঁচে থাকতে পারি না। যার কারণে মেয়েটার লেখাপড়া আজ বন্ধ হয়ে গেছে।

সুপেয় পানির কিনতে হলে আয়েরও একটি বড় অংশ ব্যয় করতে হবে উপক‚লের পরিবারগুলোকে। অনেকেরই নেই সে সামর্থ্য। অন্যদিকে, বিনামূল্যের পানি সংগ্রহে ব্যয় হয় দিনের বড় একটা সময়। সন্তানকে স্কুলে না পাঠিয়ে পানি সংগ্রহ করতে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা।

বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের শ্যামনগর উপজেলার প্রোগ্রাম অফিসার নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশ। বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই সব শিশুরা ঝরে যাচ্ছে। এই এলাকার শিশু এবং নারীরা পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশি সময় দেয়।

শ্যামনগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম রাতুল বলেন, সুপেয় পানি প্রাপ্তি বৃদ্ধির জন্য সরকারি নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন প্রকৃতিক আগে যে সাদু পানির জলাশয়গুলো ছিলো খনন করে সেগুলোর ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে নলকুপের মাধ্যমে স্বাদু পানি পাওয়া যায় সেখানে নলক‚প প্রদান করা। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রতিবছর অনেক পরিবারের মাঝে পানির ট্যাংক বিতরণ করা হয়ে থাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

খাবার পানির সংগ্রহে লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাতক্ষীরা উপক‚লে বেড়েছে লবণাক্ততা। মিষ্টি পানির উৎস নষ্ট হয়ে সুপেয় পানির সংকট দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে। পরিবারের বড়রা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় পানি সংগ্রহ করতে হয় শিশুদের। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে যেয়ে স্কুলের সময় পার হয়ে যায় তাদের।

সুপেয় পানির সংকটে সাতক্ষীরা উপক‚লের এমন হাজারো শিশুকে প্রতিদিনই স্কুল বাদ দিয়ে যেতে হচ্ছে পানির সন্ধানে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিশু শিক্ষার ওপর। ফলে অনেকেই ঝরে পড়ছে প্রাথমিকের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় হয়ে পড়ছে অনিয়মিত। সাতক্ষীরা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষার্থী আয়েশা খাতুন জানায়, আমি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। দুই বছর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

শিক্ষার্থী আয়েশা আরও বলেন, আম্মু পানি আনতে আসবে কখন? আর রান্না করবে কখন। সেজন্য আমিই পানি নিতে আসি। এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে হয়। পানি নিতে এসে অনেক দেরি হয়ে যায়। ১টা-২টা বেজে যায়। সেই পরিস্থিতির জন্য আমি পড়াশুনা করতে পারিনি। এমনকি দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে পারলেই পানির চাহিদা মেটে উপক‚লের মানুষের। সেটা সম্ভব না হলে বাধ্য হয়ে পান করতে হয় পুকুরের পানিও।

সাতক্ষীরা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের শিক্ষার্থীর অভিভাবক রোজিনা বেগম বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলে খাবার পানির খুবই সমস্যা। এই অঞ্চলের পানি লোনা। দুই কিলোমিটার দুরে পানি আনতে যেতে হয়। মহসিন সাহেবের পানির কলে। সে কারণে মেয়ের লেখাপড়া হলো না। পড়াশুনা না করলে আমরা বেঁচে থাকতে পারি, কিন্তু পানি না হলে বেঁচে থাকতে পারি না। যার কারণে মেয়েটার লেখাপড়া আজ বন্ধ হয়ে গেছে।

সুপেয় পানির কিনতে হলে আয়েরও একটি বড় অংশ ব্যয় করতে হবে উপক‚লের পরিবারগুলোকে। অনেকেরই নেই সে সামর্থ্য। অন্যদিকে, বিনামূল্যের পানি সংগ্রহে ব্যয় হয় দিনের বড় একটা সময়। সন্তানকে স্কুলে না পাঠিয়ে পানি সংগ্রহ করতে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা।

বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের শ্যামনগর উপজেলার প্রোগ্রাম অফিসার নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশ। বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই সব শিশুরা ঝরে যাচ্ছে। এই এলাকার শিশু এবং নারীরা পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশি সময় দেয়।

শ্যামনগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম রাতুল বলেন, সুপেয় পানি প্রাপ্তি বৃদ্ধির জন্য সরকারি নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন প্রকৃতিক আগে যে সাদু পানির জলাশয়গুলো ছিলো খনন করে সেগুলোর ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে নলকুপের মাধ্যমে স্বাদু পানি পাওয়া যায় সেখানে নলক‚প প্রদান করা। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রতিবছর অনেক পরিবারের মাঝে পানির ট্যাংক বিতরণ করা হয়ে থাকে।