ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্ণফুলীতে চোরাই তেলের রমরমা বাণিজ্য, সক্রিয় অর্ধশত চক্র

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ ১১৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অর্ধশত তেল চোর চক্র সক্রিয়। এ চক্রের সদস্যরা প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকার জ্বালানি তেল লোপাট করছে। চোরাই এসব তেল খালাস হয় আটটি পয়েন্টে। চোর চক্র মাটির নিচে নিজস্ব গোপন ডিপোতে ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। পরে সুবিধাজনক সময় স্থানীয় পেট্রোল পাম্প, ইঞ্জিনচালিত বোট এবং লাইটার জাহাজে বাংকারিং করা হয়।

এদিকে নৌ-থানার পুলিশ, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না এই তেল চুরি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়, জব্দ করে চোরাই তেল। এতে দু’একদিন চুরি বন্ধ বা কমলেও আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। চলতে থাকে তেল চুরি। তেল চুরির কারণে একদিকে যেমন জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

সম্প্রতি আহমেদ মাহি রাসেল ও অলি শহীদের গ্লোবাল এনার্জি-১ নামের তেলের ট্যাঙ্কার থেকে চোরাই তেল ও বিদেশি মদ জব্দ নৌ বাহিনী। পরে পতেঙ্গা থানা পুলিশকে হন্তান্তর করা হয়।

সূত্রমতে, প্রতিদিন কর্ণফুলী নদীতে চোরাই তেলের ব্যবসা হয়। এসব তেলের মূল বিক্রেতা বিদেশি জাহাজ, দেশি কার্গো ভ্যাসেল, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জাহাজ, ব্যক্তিমালিকানাধীন ফিশিং ট্রলার ও নৌকা। তেল চোর চক্রের সদস্যরা জাহাজ থেকে প্রতি লিটার তেল কম দামে কিনে পরে সেই তেল পাইকারদের বেশি টাকায় বিক্রি করে।

সূত্র আরও জানায়, জাহাজ থেকে চোরাই তেল কেনার পর তা কর্ণফুলী নদীর কমপক্ষে ৮ পয়েন্টে খালাস হয়। এরমধ্যে ১৪ নম্বর কালুমাঝির ঘাট, ১২ নম্বর টেইগ্যার ঘাট, ১৩ নম্বর ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, অভয় মিত্র ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট ইত্যাদি। আর এসব তেল চোর চক্রে রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি।

এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আহমেদ মাহি রাসেল, অলি শহীদ, জাফর ইকবাল,পতেঙ্গার বার্মা ইউসুফ, জিয়া, জসিমসহ একাধিক ব্যক্তি। এই চোরাই তেল ঘিরে কর্ণফুলী ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অবৈধ ডিপো। জাহাজ থেকে চোরাই এসব তেল চলে আসে চক্রের ডিপোয়। পরে এসব তেল স্থানীয় বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও জাহাজে বাংকারিং করা হয়।

জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল রাসেল-শহীদের ট্যাঙ্কার থেকে চোরাই তেল ও বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। ৪০ টন পানি মেশানো ব্লাজ অয়েলের একটি ট্যাঙ্কার ও ৪০ বোটল বিদেশি বিয়ার জব্দ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা না গেলেও জব্দ হওয়া ট্যাঙ্কারের মালিক আহমেদ মাহি রাসেল ও অলি শহিদ নামের দুই ব্যক্তি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম বলেছিলেন, রাত ২টা ৪০ মিনিটে পতেঙ্গার আউটার অ্যাঙ্করেজ-বি এলাকার কাছে ওটি গ্লোবাল এনার্জি-১ নামের তেলের ট্যাংকারটি নৌবাহিনীর টহলরত অবস্থায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেছিলেন, ট্যাংকারটি ৪০ টন পানি মেশানো ব্লাজ অয়েল বহন করছিল। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য নৌবাহিনী জাহাজটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

কর্ণফুলীতে চোরাই তেলের রমরমা বাণিজ্য, সক্রিয় অর্ধশত চক্র

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অর্ধশত তেল চোর চক্র সক্রিয়। এ চক্রের সদস্যরা প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকার জ্বালানি তেল লোপাট করছে। চোরাই এসব তেল খালাস হয় আটটি পয়েন্টে। চোর চক্র মাটির নিচে নিজস্ব গোপন ডিপোতে ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। পরে সুবিধাজনক সময় স্থানীয় পেট্রোল পাম্প, ইঞ্জিনচালিত বোট এবং লাইটার জাহাজে বাংকারিং করা হয়।

এদিকে নৌ-থানার পুলিশ, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না এই তেল চুরি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়, জব্দ করে চোরাই তেল। এতে দু’একদিন চুরি বন্ধ বা কমলেও আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। চলতে থাকে তেল চুরি। তেল চুরির কারণে একদিকে যেমন জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

সম্প্রতি আহমেদ মাহি রাসেল ও অলি শহীদের গ্লোবাল এনার্জি-১ নামের তেলের ট্যাঙ্কার থেকে চোরাই তেল ও বিদেশি মদ জব্দ নৌ বাহিনী। পরে পতেঙ্গা থানা পুলিশকে হন্তান্তর করা হয়।

সূত্রমতে, প্রতিদিন কর্ণফুলী নদীতে চোরাই তেলের ব্যবসা হয়। এসব তেলের মূল বিক্রেতা বিদেশি জাহাজ, দেশি কার্গো ভ্যাসেল, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জাহাজ, ব্যক্তিমালিকানাধীন ফিশিং ট্রলার ও নৌকা। তেল চোর চক্রের সদস্যরা জাহাজ থেকে প্রতি লিটার তেল কম দামে কিনে পরে সেই তেল পাইকারদের বেশি টাকায় বিক্রি করে।

সূত্র আরও জানায়, জাহাজ থেকে চোরাই তেল কেনার পর তা কর্ণফুলী নদীর কমপক্ষে ৮ পয়েন্টে খালাস হয়। এরমধ্যে ১৪ নম্বর কালুমাঝির ঘাট, ১২ নম্বর টেইগ্যার ঘাট, ১৩ নম্বর ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, অভয় মিত্র ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট ইত্যাদি। আর এসব তেল চোর চক্রে রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি।

এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আহমেদ মাহি রাসেল, অলি শহীদ, জাফর ইকবাল,পতেঙ্গার বার্মা ইউসুফ, জিয়া, জসিমসহ একাধিক ব্যক্তি। এই চোরাই তেল ঘিরে কর্ণফুলী ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অবৈধ ডিপো। জাহাজ থেকে চোরাই এসব তেল চলে আসে চক্রের ডিপোয়। পরে এসব তেল স্থানীয় বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও জাহাজে বাংকারিং করা হয়।

জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল রাসেল-শহীদের ট্যাঙ্কার থেকে চোরাই তেল ও বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। ৪০ টন পানি মেশানো ব্লাজ অয়েলের একটি ট্যাঙ্কার ও ৪০ বোটল বিদেশি বিয়ার জব্দ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা না গেলেও জব্দ হওয়া ট্যাঙ্কারের মালিক আহমেদ মাহি রাসেল ও অলি শহিদ নামের দুই ব্যক্তি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম বলেছিলেন, রাত ২টা ৪০ মিনিটে পতেঙ্গার আউটার অ্যাঙ্করেজ-বি এলাকার কাছে ওটি গ্লোবাল এনার্জি-১ নামের তেলের ট্যাংকারটি নৌবাহিনীর টহলরত অবস্থায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেছিলেন, ট্যাংকারটি ৪০ টন পানি মেশানো ব্লাজ অয়েল বহন করছিল। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য নৌবাহিনী জাহাজটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।