সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ওয়ান- ইলেভেনের কথা তো আমরা ভুলতে পারি না
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪ ৫১ বার পড়া হয়েছে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, ওয়ান- ইলেভেনের মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা হচ্ছে । তারা এখনো এক- এগারোর কথা ভুলে যাননি । তাই আবার যখন ওই চেহারাগুলো সামনে আসে, তখন যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায় । একই সঙ্গে নির্বাচন প্রশ্নে অতিদ্রুত সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি ।
বুধবার( ২৮ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন । এ সময় জামায়াতের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব ।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে । আবারো এক- এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে বিরাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা থেকে এ কাজগুলো করা হচ্ছে ।
২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত এক- এগারো সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা তো ভুলে যাইনি এক- এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনৈতিকীকরণের । এমনকি ওই সময় আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল । এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না । আমার গণতন্ত্রের জন্য, আমার রাজনীতির জন্য, আমার দেশের কল্যাণের জন্য এ কথাগুলো আমার মনে রাখতে হবে ।
বর্তমান সরকারের মধ্যে বিরাজনৈতিকীকরণের কোনো লক্ষণ দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এমন লক্ষণ দেখছি না । আমি সতর্ক করছি । কিছু চেহারা আছে তো? এ চেহারাগুলো দেখলে আমরা ভয় পাই ।
তিনি আরও বলেন, যাদের কোনো দিন দেখা যায়নি, তারা সামনে চলে আসছেন । হঠাৎ করে ওই ব্যক্তিগুলো মিডিয়ায় সামনের পেজে চলে আসছেন ।
তাদের বক্তব্য, থিওরি প্রচার করছেন । আমি কারো নাম বলতে চাই না । আমার মনে হয়, এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো বিষয় নয় ।
দুই দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দলীয় এক কর্মসূচিতে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবি এবং দখলদারির বিষয়ে কথা বলেন । ওই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি আগেই বলেছি, এটা সুপরিকল্পিত একটা চক্রান্ত । কারণ আমরা তো এক- এগারোর কথা ভুলে যাইনি । যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা- ভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না । সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য । সেটার জন্যই তো নির্বাচন । এটা তো আমাদের অধিকার । আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এত দিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি ।
জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, এমন বক্তব্য না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান বিএনপির মহাসচিব ।
জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হলো, তার জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি । ওই দলগুলোর অনেককে আন্দোলনে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে । এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । এখন ওই আন্দোলনকে, ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এই মুহূর্তে করব না ।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে একটি আন্দোলন- বিপ্লবের মধ্য দিয়ে । অবশ্যই এই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে । তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি, করব, যত দিন সরকার সঠিক পথে থাকবে ।
কারো নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ আমি যদি মনে করি, একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে; আমার ওই চিন্তা সঠিক হবে না । জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কিভাবে চলবে । সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি । আমরা ৩১ দফা দিয়েছি । ৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে । এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি । আমরা তো সংস্কার চাই । তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে ।
অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ‘ যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি । সেই যৌক্তিক সময় কতটা, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ জন্যই আলোচনা দরকার । যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে । আমরা কী চাই, উনারা কী চান, জনগণ কী চায়, একটা আলাপ- আলোচনা তো হতে হবে । সে জন্য বলেছি, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতিদ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার । খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি । নইলে ভুল- বোঝাবুঝি তৈরি হয় ।
সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, এ নিয়ে একজন সাংবাদিক প্রতিক্রিয়া জানতে চান । জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই, সে যে দলই হোক । আমাদের সংবিধানে যেকোনো ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সংগঠন করার । কিন্তু স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে । আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, সে ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না । কিন্তু আমরা মনে করি, মানুষের অধিকার আছে একটা সংগঠন তৈরি করার, রাজনীতি করার ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ছাত্র- জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লব নস্যাৎ করার জন্য এবং বিএনপির অবদান খাটো করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে । এই বিপ্লব ব্যর্থ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র আছে । আপনারা দেখবেন, বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে এমন কতগুলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে । বাংলাদেশে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেটা তারা নস্যাৎ করতে চায় । কতগুলো রাজনৈতিক ইস্যুকে তারা সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানাতে চায়, যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, প্রথম দিকে তারা যে সংখ্যালঘু নির্যাতনে প্রচার চালিয়েছিল, এর বোধ হয় ১- ২ পারসেন্টও সঠিক নয় । দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দখলদারি । এগুলো কিন্তু অপপ্রচার । আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আবার আগের মতো এক- এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে এই কাজগুলো করা হচ্ছে । এটা অত্যন্ত অন্যায় । আমরা ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য । মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ।