এমপি আনোয়ারুল খুন/ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঘিরে রহস্য
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:২৮:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
চিকিৎসা করাতে কলকাতায় গিয়ে হত্যার শিকার হলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করছে রহস্য। তদন্তে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকাণ্ডে প্রথম থেকেই আনোয়ারুলের মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছিলো।
দেশটির পুলিশ সূত্রে খবর, শেষবার আনোয়ারুলের মোবাইল ফোনের লোকেশন ছিলো উত্তরপ্রদেশ। হত্যার পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতেই তার মোবাইলটি উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। এবার প্রকাশ্যে এসেছে আনোয়ারুলের শেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ।
চলতি মাসের ১২ মে কলকাতায় যান এমপি আনোয়ারুল। সেখানে উঠেন বরানগরে পুরনো বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। ‘বিশেষ কাজে দিল্লি পৌঁছলাম। তোমাদের আমাকে ফোন করার দরকার নেই। আমিই ফোন করে নেব।’ গোপাল বিশ্বাস, নিজের মেয়ে ও ব্যক্তিগত সহকারীকে হোয়াটসঅ্যাপে এই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন আনোয়ারুল। এই মেসেজ ও মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরেই রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। আততায়ীদের একজন আনোয়ারুলকে হত্যার পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতে তার মোবাইলটি উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যায় বলে সন্দেহ পুলিশের। হত্যার পর হত্যাকারী ওই এমপির মোবাইল থেকেই হোয়াটস অ্যাপ করেছিলো। এমনটাই সন্দেহ করছে পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের ১৩ মে বরানগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় এমপি আনোয়ারুল বলেছিলেন, তিনি ওইদিনই বরানগরে ফিরে আসবেন। কিন্তু সেদিন গোপালকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে তিনি জানিয়েছিলেন, বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছেন। তিনি দিল্লি পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। এর দুইদিন পর ১৫ মে সকাল ১১টা ২১ মিনিটের দিকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে আনোয়ারুল জানান , তিনি দিল্লি পৌঁছে গেছেন। তার সাথে কয়েকজন ভিআইপিও রয়েছেন। তাই তাকে ফোন করার প্রয়োজন নেই। বন্ধু গোপালের সাথে ওই একই মেসেজ তিনি তার বাড়িতে ও ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠান।
পুলিশ তদন্ত জানতে পেরেছে, উত্তরপ্রদেশের মুজফফরপুরে মোবাইলের শেষ টাওয়ার ছিলো। মাঝে মাঝে মোবাইল খোলা হচ্ছিলো। তবে বেশিরভাগ সময়ের জন্যই বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো মোবাইলটি।
জানা গেছে, ১৬ মে সকালে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে একটি ফোন আসে তার ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইলে। আবার অন্য ফোনটি আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে। কিন্তু এমন সময় ফোন করা হয়, দুই জনের কেউই ফোন ধরতে পারেননি। এরপর যখন আনোয়ারুলের ফোনে ব্যক্তিগত রিং ব্যাক করেন, তখন আর তার সাথে আর যোগাযোগ করা যায়নি। তখনই তার মনে হয়েছিলো যে, কেউ ব্ল্যাকমেল করেছে।
কিন্তু হত্যার বিষয়টি সামনে আসার পর পুলিশের ধারণা, হত্রার পর খুনিরা মোবাইলটি নিয় যায়। এরপর প্রমাণ লোপাট করতেই মোবাইলটি নিয়ে বিহার হয়ে উত্তরপ্রদেশে চলে যায় আতাতায়ী। সেখান থেকে সে দিল্লি যায়, এমন সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না।
পুলিশের মতে, যে সাংসদের পরিবারের লোকেদের বিভ্রান্ত করতে মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে, সে বাংলাদেশিও হতে পারে। আবার বাংলাদেশি আততায়ীদের এই রাজ্যের লিঙ্কম্যানও হতে পারে সে। এমনও হতে পারে।
এদিকে, আনোয়ারুলকে কীভাবে খুন করা হয়, তা নিয়ে ক্রমশ রহস্য জমাট বাঁধছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় আনোয়ারুলকে। হত্যার পর টুকরো টুকরো করে কাটা হয় শরীর। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে দেহাংশ সরিয়ে ফেলা হয়। দেহের কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা রয়েছে। এমনকি ফ্ল্যাট থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে।