দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদ
ইউপি চেয়ারম্যান শামসুর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:২৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান মল্লিক তার দূর সম্পর্কের ভাইপো ও জামাতার ব্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে পরিষদের সদস্যসহ ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
এছাড়া নানা প্রকল্পে চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ২নং ওয়াডের ইউপি সদস্য মো. আজিম মোল্লা নানা অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই মাস অতিক্রম হলেও আলোর মুখ দেখেনি।
জানা গেছে, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান মল্লিক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার আমলে টিআর, ভিজিডি, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, এডিবি, এলজিএসপি, লজিক, ইজিপিপি, পরিষদের রাজস্ব খোযাড়-খেয়া ইজারার অর্থ, ননওয়েজ, ইউপি ট্যাক্স, জন্ম- মৃত্যু নিবন্ধন ফি নিজের খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করে থাকেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সদস্যের সঙ্গে আলোচনা না করে নিজের ইচ্ছামতো খরচ করেন।এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের দূর সম্পর্কের ভাইপো সূজন ও জামাতা হাফিজুল ইসলাম সবুজ এর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় পরিষদের বিভিন্ন কাজে সংশ্লিষ্ট থেকে অনিয়ম ও দুনীতির মাধ্যমে অল্লদিনে তারা লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেছেন। তারা প্রত্যেই ৪ লাখ টাকার মটর সাইকেল, দুই লাখ টাকার আইফোন, প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বাড়ি করেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের নং ওয়াডের ইউপি সদস্য মো. আজিম মোল্লা বলেন, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর আমরা শপথ গ্রহন করার পর থেকে চেয়ারম্যান শামদুর রহমান মল্লিক তার একান্ত ঘনিষ্ট ও সহযোগী ইউপি সদস্য আছাদুজ্জামান আহাদ, মাসুদ পারভেজ সাগর, সুজন মল্লিক, গ্রাম পুলিশ আবজাল ও চেয়ারম্যানের জামাতা সবুজ-দের সহায়তায় বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনয়িম শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মিত্র ডাঙ্গা গ্রামের ৩ লাখ টাকার দু’টি প্রকল্পের সংস্কার কাজ বরাদ্দ হয়। এ জায়গায় কিছু ধুলো বালি ও অন্য জায়গায় ২০ হাত ইটের কাজ করে ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। চেয়ারম্যান এর ভাতিজা সুজন স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের কাজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ট্রাংকি দিয়েছে। ওয়ারেশ কায়েম সনদ বাবদ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, প্রত্যয়ন পত্র বাবদ ৮০ টাকা গ্রহন করে। সে সময় ইউপি সদস্যরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হুমকী ধামকী দেয়। চেয়ারম্যানের ও তার লোকজনের ভয়ে আমরা কেউ মুখ খুলতে সাহস পাই না। চেয়ারম্যান সাধারন জনগনের কাছ থেকে দিনমজুর, ভিক্ষুক ও সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ট্রাক্স গ্রহন করেন। যারা ট্রাক্স দিতে অপারোগতা প্রকাশ করে তারা নাগরিকতা সনদ, ওয়ারেশ কায়েম সনদসহ ইউপির সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি বলেন, মাসিক সভার খাতায় ইউপি সদস্যরা ফাকা রেজুলেশন স্বাক্ষক করতে বাদ্য করে। পরে ফাকা রেজুলেশনে নিজের মত করে রেজুলেশন লিখে নেয়। ইউনিয়ন পরিষদের আয় ব্যায়, বরাদ্দ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করলে তিনি কোন প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নয় বলে জানায়।
এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী বরাবর আবেদন করেও কোন সুরাহ পাইনি।
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য কারিমা সুলতানা বলেন, যেখানে ইউপি সদস্যরা বসার জায়গা পায়না সেখানে দূর সম্পর্কের ভাইপো সূজনের জন্য চেয়ারম্যানের পাশের রুম ব্যবহার করতে দিয়েছে। সে তো পরিষদের কোন কর্মচারী না।
মটির রাস্তা সংস্কার প্রসঙ্গে মিত্র ডাঙ্গা গ্রামের সালমা বেগম বলেন, আমাদের এই রাস্তায় শুনেছি এক লাখ টাকা বরাদ্ব হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বৃষ্টির সময় রাস্তায় কাদার কারনে চলাফেরা করতে পারিনা ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।
একই গ্রামের শিউলি বেগম বলেন, গত দুই বছর ধরে এই রাস্তায় কখনো কাজ হয়নি চলা ফেরা করেতে খুব কষ্ট হয়।
এ দিকে মিত্র ডাঙ্গা এলাকার ইটের সোলিং সংস্কার প্রসঙ্গে কৃষক মিশর হাওলাদার বলেন, আমাদের এই রাস্তায় ২ লক্ষ টাকা বরাদ্ব হলেও দুই হাজার টাকার কাজ করায়নি। দুই দিন তিন জন লোক এনে কাজ করিয়েছে।
মিত্রডাঙ্গা গ্রামের গৃহিনী বিউটি রানী মন্ডল বলেন, আমার একটা রেশন কাড ছিল তা চেয়ারম্যান কেটে দিয়েছে এখন অমি অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছি।
রহিমা খাতুন বলেন, আমি ও আমার স্বামী মানুষের বাড়ী ক্জা করে খাই চেয়ারম্যান আমার রেশন কাডটি কেটে দিয়েছে। এখন আমরা খুব কষ্টে আছি।
দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কিসলুর রহমান খোকন বলেন, চেয়ারম্যানের অত্যাচার চলছে তা সাধারন জনগন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি অতিরিক্ত ট্রাক্স আদায় করছে। ইউপি সদস্য আসাদের মাধ্যমে ৫/৭ হাজার টাকা করে পানির টেংকি বিক্রি করেছে। তার ভাইপো ও তার মটর সাইকেল বহনকারী সুজন মল্লিক এক সময় ছাগল বেচাকেনা করে সংসার চালাতো। এখন সুজন ৪ লাখ টাকার বাইক, ২ লাখ টাকার আইফোন, ৩০ লাখ টাকার বাড়ী করেছে এটা কি করে সম্ভব। তিনি এধরনের দূনীতির সাথে যারা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের বিচার দাবি করেন।
দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান মল্লিক প্রায় তিন বছর চেয়ারম্যান হয়েছে এই তিন বছরের মধ্যে এমপি মহদয়ের বরাদ্দ কৃত টাকার কোথায় কি রাস্তা, ঘাট, পোল কালভাট কোথায় কিভাবে করেছে তা আমরা জানতে পারিনি। তিনি পকেট কমিটি করে কোন কাজ না করে এসব বাদ্বকৃত টাকা আত্মসাদ করেছে ।
এদিকে, চেয়ারম্যানের মটর সাইকেল চালক ও ভাইপো সুজন মল্লিক বলেন, আমার বিরুদ্বে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন ভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন। আমি ২০০৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চিটাগং এ আমি একটি কোরিয়ান কম্পানিতে জব করতাম সেখানে আমার প্রায় ৭০হাজার টাকা বেতন ছিল। আমি কোন দূর্নীতি করিনি। শামসুর রহমান মল্লিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে তার সাথে আছি।
এ বিষয়ে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান মল্লিক বলেন, আমার বিরুদ্বে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পুর্ন ভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি মহল আমাকে হেয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কুতসা রটাচ্ছে। চেয়ারম্যানের একার কিছু করার সুযোগ নেই। কমিটির মাধ্যমে সকল কাজ করতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস, এম, তারেক সুলতানের সাথে একাধিক ভাবে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেনি।