অশ্রু-আলিঙ্গনে মুক্তির আনন্দ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:১১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
দুঃখ বা আনন্দের সময়ে আমরা প্রায়ই প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করে সান্ত¡না খুঁজি। মা-বাবা, ভাইবোন বা সঙ্গী যেই হোক না কেন, জীবনের নানা ক্ষেত্রে তাদের আলিঙ্গন করে সবাই শান্তি খোঁজেন। আলিঙ্গন মানসিক কষ্ট কমায় এবং মনে স্বস্তি দেয়। এমনই এক দৃশ্য দেখা গেলো যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়। বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে পিরে এলে ফিলিস্তানিদের স্বজনদের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আবেগাপ্লæত আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা মুক্ত ফিলিস্তিনিদের কাউকে কাউকে কাঁধেও তুলে নেন। কারো চোখে পানি, আবার কেউ করছেন কোলাকুলি।
টানা ১৫ মাসের বন্দীজীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার খবর শুনে বন্ধুদের সাথে এসেছেন ২০ বছর বয়সী মুহাম্মদ। কিছু দিন আগেও তিনি নিজেও ইসরায়েলের ওফার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, কারাগারে অনেক নির্দোষ মানুষ, শিশু ও নারী বন্দি রয়েছেন। পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার এই মুহূর্ত অত্যন্ত আনন্দের। গত রোববার অবরুদ্ধ গাজায় কার্যকর হয় বহুল প্রত্যাশিত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে বন্দি থাকা ৯০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় রাত ১টায় রেড ক্রসের বাসে করে তাদের কারাগার থেকে রামাল্লায় নিয়ে আসা হয়। ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্যাপন নিষিদ্ধ করার সতর্কতা সত্তে¡ও এ সময় হাজারো মানুষ তাদের উষ্ণ সংবর্ধনা জানান। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৯ জন নারী ও ২১ জন কিশোর ছিল, যাদের কারও কারও বয়স মাত্র ১২ বছর। তারা অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের বাসিন্দা। এরমধ্যে একজন ৬২ বছর বয়সী খালিদা জাররার। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের একজন শীর্ষ নেতা তিনি। তাকে ৬ মাস ধরে ইসরায়েলি প্রশাসন বিনা বিচারে নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে বন্দিরা পৌঁছানোর পর, তাদের অনেককেই কাঁধে তুলে নেন উল্লসিত জনতারা। উল্লাসে চিৎকার ও শিঙা বাজান অন্যরা।
সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই ফাতাহ, হামাস, প্যালেস্টাইনি ইসলামিক জিহাদ এবং অন্যান্য সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীর পতাকা বহন করছিল। এর সাত ঘণ্টা আগে, গাজা থেকে তিনজন ইসরায়েলি নারী বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়, যাদের বয়স ২০ ও ৩০ এর মাঝামাঝি। ফিল্লিস্তিনি সাংবাদিক বুশরা আল-তাওয়িলকে ২০২৪ সালের মার্চে ইসরায়েলি বাহিনী বন্দি করে।
তাওয়িল জানান, গত রোববার ভোর ৩টায় তার মুক্তির যাত্রা শুরু হয়। তাকে প্রথমে অন্য আরেকটি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আরও কিছু বন্দি ফিলিস্তিনদের সাথে মিলিত হন তিনি। অপেক্ষাটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমরা জানতাম যে, যে কোনও সময় আমরা মুক্তি পাব। তার বাবা, যিনি এখনও ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি, শীঘ্রই মুক্তি পাবেন।
২৩ বছর বয়সী আমান্ডা আবু শারখ মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের অভ্যর্থনা জানাতে রামাল্লায় হাজির হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছি এই মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করতে এবং সেই আবেগ অনুভব করতে, যেমন বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা আজ তাদের মুক্তির দিন অনুভব করছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়া সকল বন্দি আমাদের পরিবারের মতো। রক্তের সম্পর্কের না হলেও তারা আমাদের অংশ। বন্দীদের মুক্তি পাওয়ার খবর শুনে বন্ধুদের সাথে এসেছেন ২০ বছর বয়সী মুহাম্মদ। কিছু দিন আগেও তিনি নিজেও ইসরায়েলের ওফার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারে অনেক নির্দোষ মানুষ, শিশু ও নারী বন্দি রয়েছেন। পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার এই মুহূর্ত অত্যন্ত আনন্দের। এ বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শুরু হলো। চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৪২ দিনের মধ্যে মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি দেবে। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা দুই সপ্তাহ পর শুরু হবে। তবে চুক্তির আওতায় ঠিক কত ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন, তার সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে এ সংখ্যা হতে পারে ১ থেকে ২ হাজার। শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলা ও উচ্ছেদের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ। খালিদা, বুশরাসহ গভীর রাতে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ৯০ নারী-শিশু দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় এসে পৌঁছালে আবেগাপ্লæত আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা মুক্ত ফিলিস্তিনিদের কাউকে কাউকে কাঁধেও তুলে নেন; কারো চোখে পানি, চলছে কোলাকুলি। থেকে থেকে পাওয়া যাচ্ছে চিৎকার, কেউ বাজাচ্ছেন শিস। উপস্থিত অনেকের হাতে এসময় ফাতাহ, হামাস, প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া গোষ্ঠীগুলোর পতাকাও ছিল।
এদিকে, আল জাজিরা জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এবারই প্রথম বন্দি বিনিময় হলো। এবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ঠিক কত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সংখ্যাটা এক হাজার থেকে দুই হাজারের কাছাকাছি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহে হামাস মোট ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শনিবার জিম্মি মুক্তির পরবর্তী দিন। দুই সপ্তাহের মধ্যে চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৫ মাসে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তেল আবিবের হামলা ও বাড়ি ছাড়ার নির্দেশনায় গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশকে হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত।