ঢাকা ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৫ বছরের জীবনে ২৫ বছর অসুস্থ, ৬ বছর চার দেয়ালে বন্দী

রুবেল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪ ৮৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জীর্ণশীর্ণ ছোট একচালা ঘরের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা যুবক । বিড়বিড় করে কি যেন একটা বলছেন । এক সময়ের টগবগে যুবক এখন চার দেওয়ালে বন্দি । খুপড়ি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ৬ বছর ধরে শিকলবন্দি । লোহার শিকল বন্দী অবস্থায় দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে । তবুও শিকল থেকে মুক্তি মিলছে না। এভাবেই কাটছে তার শিকলে বাঁধা জীবন ।

আর আদরের সন্তানের চিকিৎসায় সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন দরিদ্র পরিবার । বসতভিটা ছাড়া নিজের বলতে আর কিছুই নেই তাদের । গায়ের মহাজনের কাছে ধার করে চিকিৎসা করিয়েছেন । তবুও সুস্থ্য করা যায়নি ৩৫ বছর বয়সী মিলনকে । প্রাথমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা মিলন আর ৫ শিশুর মতো হাসি- কান্না হই- হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতো সবাইকে । দুষ্টুমির জন্য মায়ের কাছে আসতো হাজারও অভিযোগ । জন্মের ৯ বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের । চিকিৎসা নেওয়ার পরে কিছুদিন সুস্থ হলেও আবার শুরু হয় অসুস্থতা । ৩৫ বছর জীবনে ২৫ বছর অসুস্থ। ছয় বছর চার দেওয়াল আর শিকলই তার সঙ্গী । বৃদ্ধা মা মারা গেলে কে দেখবে তাকে, এ চিন্তায় ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন মা শাহেদা বেগম ।

স্বপ্ন ছিলো মিলন হক পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন । কিন্তু অসুস্থতায় প্রাথমিকেই থমকে গেছে তার জীবন । পরিবারে উপার্জনক্ষম মানুষ না থাকায় হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহর গ্রামের মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির ছেলে মিলন হক। চার সন্তানের মধ্যে সে সবার ছোট ।

বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়েছেন। আর দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে শশুরালয়ে, আরেক মেয়ে কুলছুম বেগম ( ৩৭) স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পর থেকে যোগ হয়েছেন শয্যাশায়ী বাবার পরিবারে । বৃদ্ধা মা শাহেদা বেগম( ৬৫) অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তাই ছেলে- মেয়ে ও স্বামীর মুখে তুলে দেন । এতো কিছুর পরও স্থানীয় চেয়ারম্যান- মেম্বার ও সরকারের পক্ষে থেকে তারা কোন সাহায্য- সহযোগিতা পান না । কয়েকবার সাহায্যের জন্য রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও খালি হাতে ফেরত আসতে হয়েছে দরিদ্র এই বৃদ্ধাকে ।

একদিকে স্বামী মফিজ উদ্দীন( ৭০) শয্যাশায়ী, অন্যদিকে ছেলে শেকলে বাঁধা । তাদের মুখের খাবার জোগাড় করবেন, না চিকিৎসা করাবেন- এ নিয়ে দু:শ্চিন্তায় শাহেদা বেগম । সুচিকিৎসা পেলে ভালো হবে মিলন এমন স্বপ্ন দেখেন তার মা । কিন্তু তার এই স্বপ্নে বাদ সেধেছে টাকা । কারণ টাকা ছাড়া এখন কিছুই মেলে না । তাই ছেলে সুস্থ করতে বিত্তবানদের সাহায্য চান শাহেদা বেগম ।

এসব বিষয়ে রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু ও ইউপি সদস্য তাহেরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তারা কথা বলতে চাননি ।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি সত্যিই হৃদয়বিদারক । যত দ্রুত সম্ভব মিলন হকের খোঁজ- খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

৩৫ বছরের জীবনে ২৫ বছর অসুস্থ, ৬ বছর চার দেয়ালে বন্দী

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

জীর্ণশীর্ণ ছোট একচালা ঘরের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা যুবক । বিড়বিড় করে কি যেন একটা বলছেন । এক সময়ের টগবগে যুবক এখন চার দেওয়ালে বন্দি । খুপড়ি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ৬ বছর ধরে শিকলবন্দি । লোহার শিকল বন্দী অবস্থায় দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে । তবুও শিকল থেকে মুক্তি মিলছে না। এভাবেই কাটছে তার শিকলে বাঁধা জীবন ।

আর আদরের সন্তানের চিকিৎসায় সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন দরিদ্র পরিবার । বসতভিটা ছাড়া নিজের বলতে আর কিছুই নেই তাদের । গায়ের মহাজনের কাছে ধার করে চিকিৎসা করিয়েছেন । তবুও সুস্থ্য করা যায়নি ৩৫ বছর বয়সী মিলনকে । প্রাথমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা মিলন আর ৫ শিশুর মতো হাসি- কান্না হই- হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতো সবাইকে । দুষ্টুমির জন্য মায়ের কাছে আসতো হাজারও অভিযোগ । জন্মের ৯ বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের । চিকিৎসা নেওয়ার পরে কিছুদিন সুস্থ হলেও আবার শুরু হয় অসুস্থতা । ৩৫ বছর জীবনে ২৫ বছর অসুস্থ। ছয় বছর চার দেওয়াল আর শিকলই তার সঙ্গী । বৃদ্ধা মা মারা গেলে কে দেখবে তাকে, এ চিন্তায় ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন মা শাহেদা বেগম ।

স্বপ্ন ছিলো মিলন হক পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন । কিন্তু অসুস্থতায় প্রাথমিকেই থমকে গেছে তার জীবন । পরিবারে উপার্জনক্ষম মানুষ না থাকায় হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহর গ্রামের মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির ছেলে মিলন হক। চার সন্তানের মধ্যে সে সবার ছোট ।

বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়েছেন। আর দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে শশুরালয়ে, আরেক মেয়ে কুলছুম বেগম ( ৩৭) স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পর থেকে যোগ হয়েছেন শয্যাশায়ী বাবার পরিবারে । বৃদ্ধা মা শাহেদা বেগম( ৬৫) অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তাই ছেলে- মেয়ে ও স্বামীর মুখে তুলে দেন । এতো কিছুর পরও স্থানীয় চেয়ারম্যান- মেম্বার ও সরকারের পক্ষে থেকে তারা কোন সাহায্য- সহযোগিতা পান না । কয়েকবার সাহায্যের জন্য রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও খালি হাতে ফেরত আসতে হয়েছে দরিদ্র এই বৃদ্ধাকে ।

একদিকে স্বামী মফিজ উদ্দীন( ৭০) শয্যাশায়ী, অন্যদিকে ছেলে শেকলে বাঁধা । তাদের মুখের খাবার জোগাড় করবেন, না চিকিৎসা করাবেন- এ নিয়ে দু:শ্চিন্তায় শাহেদা বেগম । সুচিকিৎসা পেলে ভালো হবে মিলন এমন স্বপ্ন দেখেন তার মা । কিন্তু তার এই স্বপ্নে বাদ সেধেছে টাকা । কারণ টাকা ছাড়া এখন কিছুই মেলে না । তাই ছেলে সুস্থ করতে বিত্তবানদের সাহায্য চান শাহেদা বেগম ।

এসব বিষয়ে রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু ও ইউপি সদস্য তাহেরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তারা কথা বলতে চাননি ।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি সত্যিই হৃদয়বিদারক । যত দ্রুত সম্ভব মিলন হকের খোঁজ- খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।