ঢাকা ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২৩ সালের সীমান্তে সহিংসতার প্রতিবেদন প্রকাশ করলো জেএমবিএফ

শাহানুর ইসলাম সৈকত, ফ্রান্স থেকে
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:২৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪ ৯২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) ২০২৩ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সংঘটিত সহিংসতার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শনিবার (১ জুন) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৫৫টি সহিংস ঘটনায় ৬৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে ফ্রান্স ভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন : চেক প্রতারণা মামলায় ইভ্যালির দম্পতির কারাদণ্ড

২০২৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৫৩টি ঘটনায় ৬৪ জন পুরুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুইটি ঘটনায় নারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যার ফলে দুই জন নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও নারীদের ঘটনা সংখ্যা কম, তবু তারা যে সহিংসতার শিকার হয়েছেন তা সমানভাবে গুরুতর বলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জেএমবিএফ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

২০২৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা ও আহত করা, শারীরিক নির্যাতন করে আহত করা ও বলপূর্বক আটক করার মত সহিংস ঘটনাগুলোর অধিকাংশ ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ জড়িত বলে উক্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি।

আরও পড়ুন : সেতুর নিচে ব্রীফকেসে চার টুকরা মরদেহ, পাটক্ষেতে মাথা, জানা গেলো পরিচয়

২৯টি গুলির ঘটনায় ৩০জন বাংলাদেশীর মৃত্যু, ২২ টি ঘটনায় ২৭ জন আহত, এবং চারটি ঘটনায় ১০ জন বলপূর্বক আটকের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৫২টি ঘটনা সংঘটিত করেছে, যার ফলে ৬৩ জন বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া, ভারতীয় অপরাধীরা দুইটি ঘটনা সংঘটিত করেছে, যার ফলে দুই জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে এবং একটি ঘটনায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ ( বিজিবি)গুলিতে এক জন বাংলাদেশী আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

৪৩টি ঘটনায় সরাসরি বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করা হয়েছে, যার ফলে ৪৭ জন বাংলাদেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচটি ঘটনায় ছয়জন বাংলাদেশীকে শারীরিক নির্যাতন করে আহত করা হয়েছে। চারটি ঘটনায় অতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে ১০ জন নিরহ নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাছাড়া তিনটি ঘটনায় সাউন্ড গ্রেনেড, ককটেল ও গ্রেনেড ব্যবহার করে তিন জন বাংলাদেশিকে আহত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : শপিং করে দেয়ার কথা বলে হোটেলে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সহিংসতায় দিনমজুর, গরু ব্যবসায়ী, কৃষক, মৎস্যজীবী, চোরাকারবারী, ছাত্র এবং গৃহিণী সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

ভারতের সাথে সংযুক্ত অধিকাংশ সীমান্তে সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। সব চেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছে রংপুর বিভাগে। উক্ত বিভাগে রংপুর ৩১টি ঘটনায় ১৬জন নিহত, ১৭ জন আঘাত এবং একজন বলপূর্বক আটক হয়েছে।

খুলনা বিভাগে নয়টি ঘটনায় সাত জন নিহত, আটজন বলপূর্বক আটক এবং অপর একজন আহত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ছয়টি ঘটনায় পাঁচ জণের মৃত্যু এবং একজন আহত হয়েছে। সিলেট বিভাবে ছয়টি ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু ও তিনজন আহত এবং চট্টগ্রাম বিভাগে তিনটি ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম সৈকত ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে সংঘটিত সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “২০২৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সংঘটিত সহিংসতা একটি গুরুতর মানবিক সংকট। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) দ্বারা নিরস্ত্র শ্রমিক, ব্যবসায়ী, কৃষক, ছাত্র ও গৃহিনীদের গুলি করে হত্যা ও আহত করা আন্তর্তজাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনে সুস্পষ্ট লংঘন। যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন এবং অতীতে সংঘটিত সকল ঘটনার জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষে তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন”।

প্রতিবেদনে জেএমবিএফ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। যাতে সকল ব্যক্তির মানবাধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি, জেএমবিএফ ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি সরকারকে সহিংসতার মূল কারণগুলি চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধান করার জন্য দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বপরি, জেএমবিএফ ভারত সরকারকে তাদের সীমান্ত বিষয়ে ব্যাপক নীতিগত সংস্কার, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর নজরদারি বাড়ানোর এবং একটি নিরাপদ ও অধিকতর সম্প্রীতির সীমান্ত অঞ্চল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

২০২৩ সালের সীমান্তে সহিংসতার প্রতিবেদন প্রকাশ করলো জেএমবিএফ

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:২৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) ২০২৩ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সংঘটিত সহিংসতার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শনিবার (১ জুন) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৫৫টি সহিংস ঘটনায় ৬৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে ফ্রান্স ভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন : চেক প্রতারণা মামলায় ইভ্যালির দম্পতির কারাদণ্ড

২০২৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৫৩টি ঘটনায় ৬৪ জন পুরুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুইটি ঘটনায় নারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যার ফলে দুই জন নারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও নারীদের ঘটনা সংখ্যা কম, তবু তারা যে সহিংসতার শিকার হয়েছেন তা সমানভাবে গুরুতর বলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জেএমবিএফ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

২০২৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা ও আহত করা, শারীরিক নির্যাতন করে আহত করা ও বলপূর্বক আটক করার মত সহিংস ঘটনাগুলোর অধিকাংশ ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ জড়িত বলে উক্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি।

আরও পড়ুন : সেতুর নিচে ব্রীফকেসে চার টুকরা মরদেহ, পাটক্ষেতে মাথা, জানা গেলো পরিচয়

২৯টি গুলির ঘটনায় ৩০জন বাংলাদেশীর মৃত্যু, ২২ টি ঘটনায় ২৭ জন আহত, এবং চারটি ঘটনায় ১০ জন বলপূর্বক আটকের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৫২টি ঘটনা সংঘটিত করেছে, যার ফলে ৬৩ জন বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া, ভারতীয় অপরাধীরা দুইটি ঘটনা সংঘটিত করেছে, যার ফলে দুই জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে এবং একটি ঘটনায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ ( বিজিবি)গুলিতে এক জন বাংলাদেশী আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

৪৩টি ঘটনায় সরাসরি বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করা হয়েছে, যার ফলে ৪৭ জন বাংলাদেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচটি ঘটনায় ছয়জন বাংলাদেশীকে শারীরিক নির্যাতন করে আহত করা হয়েছে। চারটি ঘটনায় অতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে ১০ জন নিরহ নাগরিককে আটক করা হয়েছে। তাছাড়া তিনটি ঘটনায় সাউন্ড গ্রেনেড, ককটেল ও গ্রেনেড ব্যবহার করে তিন জন বাংলাদেশিকে আহত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : শপিং করে দেয়ার কথা বলে হোটেলে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সহিংসতায় দিনমজুর, গরু ব্যবসায়ী, কৃষক, মৎস্যজীবী, চোরাকারবারী, ছাত্র এবং গৃহিণী সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

ভারতের সাথে সংযুক্ত অধিকাংশ সীমান্তে সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। সব চেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছে রংপুর বিভাগে। উক্ত বিভাগে রংপুর ৩১টি ঘটনায় ১৬জন নিহত, ১৭ জন আঘাত এবং একজন বলপূর্বক আটক হয়েছে।

খুলনা বিভাগে নয়টি ঘটনায় সাত জন নিহত, আটজন বলপূর্বক আটক এবং অপর একজন আহত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ছয়টি ঘটনায় পাঁচ জণের মৃত্যু এবং একজন আহত হয়েছে। সিলেট বিভাবে ছয়টি ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু ও তিনজন আহত এবং চট্টগ্রাম বিভাগে তিনটি ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম সৈকত ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে সংঘটিত সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “২০২৩ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সংঘটিত সহিংসতা একটি গুরুতর মানবিক সংকট। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) দ্বারা নিরস্ত্র শ্রমিক, ব্যবসায়ী, কৃষক, ছাত্র ও গৃহিনীদের গুলি করে হত্যা ও আহত করা আন্তর্তজাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনে সুস্পষ্ট লংঘন। যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন এবং অতীতে সংঘটিত সকল ঘটনার জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষে তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন”।

প্রতিবেদনে জেএমবিএফ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। যাতে সকল ব্যক্তির মানবাধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি, জেএমবিএফ ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি সরকারকে সহিংসতার মূল কারণগুলি চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধান করার জন্য দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বপরি, জেএমবিএফ ভারত সরকারকে তাদের সীমান্ত বিষয়ে ব্যাপক নীতিগত সংস্কার, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর নজরদারি বাড়ানোর এবং একটি নিরাপদ ও অধিকতর সম্প্রীতির সীমান্ত অঞ্চল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।