ঢাকা ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘হে আল্লাহ তুমি আমারে না নিয়া আমার পুতেরে কেন নিলা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩০:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪ ৭১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকার বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই’ নামে একটি রেঁস্তোরায় আগুন লেগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ার ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারসহ তার পরিবারের ৫জনই নিহত হওয়ার কথা শুনে বার বারই জ্ঞান হারাচ্ছেন মোবারকের বৃদ্ধা মা হেলেনা বেগম।

তার কান্না কিছুতেই থামছেনা। কোন শান্তনাতেই তাঁকে থামানো যাচ্ছেনা। জ্ঞান ফিরে আসলেই মুখে তার একটি কথা আমি তো আমার ছেলে ও তার পরিবারের কারো মুখ দেখতে পাব না।

হেলেনা বেগম সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ার মৃত সৈয়দ আবুল কাশেমের স্ত্রী। হেলেনা বেগমের ৩ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার দ্বিতীয় সন্তান।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় “কাচ্চি ভাই” নামে একটি রেঁস্তোরায় আগুন লেগে হেলেনা বেগমের ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতনি ও এক নাতিসহ সবাই নিহত হয়েছেন।

এরা হলেন হেলেনা বেগমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার-(৪২), পুত্রবধূ স্বপ্না বেগম-(৩৮), দুই নাতনি সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া-(১৭) ও সৈয়দা নূর-(১৫) এবং একমাত্র নাতি সৈয়দ আবদুল্লাহ-(৭)।

বৃহস্পতিবার রাতেই পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি জানলেও সৈয়দ মোবারকের মা হেলেনা বেগম অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে জানানো হয় মোবারক অসুস্থ। বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা দেখে ও মায়ের মন ঠিকই তিনি বুঝে গেছেন তার ছেলে আর বেঁচে নেই।

রাত থেকেই তিনি বিলাপ করতে থাকেন। যাকে সামনে পান তাকেই বলেন, আমার ছেলেরে কেউ আইন্না দেউ। কেউ আমার ছেলেরে আইন্না দিতার বা। আমার ত সব শেষ। ছেলে, বৌ, নাতি-নাতিন কেউ নাই। আমি অহন কেমনে বাঁচুম। তোমডা কেউ হেরারে আইন্না দেও। হে আল্লাহ তুমি আমারে না নিয়া আমার পুতেরে কেন নিলা। মায়ের এই হৃদয় বিদারক বিলাপে পুরো আকাশ বাতাস যেন বারি হয়ে উঠছে।

স্বজনরা বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নিহত ৫জনের লাশ বাড়িতে এসে আসলে বাড়িতে ভীড় জমে হাজারো শোকার্ত মানুষের।

লাশ আসার খবর পেয়ে হেলেনা বেগমের বিলাপ আরো বেড়ে যায়। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার পুতসহ পুরো পরিবার আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আমি বেঁচে থেকে আর কি করুম। আমার ছেলেকে রেখে আল্লাহ আমারে নিয়ে যাইত গা। আমি এই শোক সইব কি করে?

এদিকে অগ্নিকান্ডে নিহত সৈয়দ মোবারক হোসেন ও তার স্ত্রী সন্তানদের লাশ দাফন করার জন্য বাড়ির পাশেই পাশাপালি খোড়া হয়েছে ৫টি কবর। বাদ আছর বাড়ির পাশের মসজিদ মাঠে নামাজে জানাযা শেষে তাদের লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।

প্রবাসী মোবারক হোসেন কাউছারের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ায় হলেও তার পরিবার ঢাকার মগ বাজার এলাকায় বসবাস করতো।

সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের আত্মীয় নেসার আহমেদ জানান, প্রায় ১০ বছর আগে মোবারক হোসেন ইতালিতে চলে যান। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। সেখানে তার চারটি কসমেটিকসের দোকান আছে। মোবারক হোসেন ইতালিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। তাই স্ত্রী ও সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের ইতালিতে যাওয়ার ভিসাও হয়ে গিয়েছিল। দেড় মাস আগে ছুটি নিয়ে তিনি ইতালি থেকে দেশে ফিরেন তার স্ত্রী-সন্তানকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের ইতালি আর যাওয়ার কথা ছিলো। শুক্রবার (আজ) তাদের গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিলো। তবে তারা আসছেন লাশ হয়ে।

সৈয়দ মোবারকের চাচাতো ভাই মোস্তাফিজ ও ফয়সাল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সৈয়দ মোবারক তার স্ত্রী স্বপ্নাসহ ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসা থেকে বের হন “কাচ্চি ভাই” নামে রেস্তোরায় ডিনার করতে। পরে সেখানে অগ্নিকান্ড হলে সবাই মারা গেছেন।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল আলম ভ‚ইয়া জানান, বিষয়টি তিনি শুনে শুক্রবার সকালে এসিল্যান্ডকে নিহতদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারকে বলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার চাইলে সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে।

উল্লেখ্য, বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

‘হে আল্লাহ তুমি আমারে না নিয়া আমার পুতেরে কেন নিলা’

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩০:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪

ঢাকার বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই’ নামে একটি রেঁস্তোরায় আগুন লেগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ার ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারসহ তার পরিবারের ৫জনই নিহত হওয়ার কথা শুনে বার বারই জ্ঞান হারাচ্ছেন মোবারকের বৃদ্ধা মা হেলেনা বেগম।

তার কান্না কিছুতেই থামছেনা। কোন শান্তনাতেই তাঁকে থামানো যাচ্ছেনা। জ্ঞান ফিরে আসলেই মুখে তার একটি কথা আমি তো আমার ছেলে ও তার পরিবারের কারো মুখ দেখতে পাব না।

হেলেনা বেগম সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ার মৃত সৈয়দ আবুল কাশেমের স্ত্রী। হেলেনা বেগমের ৩ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার দ্বিতীয় সন্তান।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় “কাচ্চি ভাই” নামে একটি রেঁস্তোরায় আগুন লেগে হেলেনা বেগমের ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতনি ও এক নাতিসহ সবাই নিহত হয়েছেন।

এরা হলেন হেলেনা বেগমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার-(৪২), পুত্রবধূ স্বপ্না বেগম-(৩৮), দুই নাতনি সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া-(১৭) ও সৈয়দা নূর-(১৫) এবং একমাত্র নাতি সৈয়দ আবদুল্লাহ-(৭)।

বৃহস্পতিবার রাতেই পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি জানলেও সৈয়দ মোবারকের মা হেলেনা বেগম অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে জানানো হয় মোবারক অসুস্থ। বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা দেখে ও মায়ের মন ঠিকই তিনি বুঝে গেছেন তার ছেলে আর বেঁচে নেই।

রাত থেকেই তিনি বিলাপ করতে থাকেন। যাকে সামনে পান তাকেই বলেন, আমার ছেলেরে কেউ আইন্না দেউ। কেউ আমার ছেলেরে আইন্না দিতার বা। আমার ত সব শেষ। ছেলে, বৌ, নাতি-নাতিন কেউ নাই। আমি অহন কেমনে বাঁচুম। তোমডা কেউ হেরারে আইন্না দেও। হে আল্লাহ তুমি আমারে না নিয়া আমার পুতেরে কেন নিলা। মায়ের এই হৃদয় বিদারক বিলাপে পুরো আকাশ বাতাস যেন বারি হয়ে উঠছে।

স্বজনরা বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নিহত ৫জনের লাশ বাড়িতে এসে আসলে বাড়িতে ভীড় জমে হাজারো শোকার্ত মানুষের।

লাশ আসার খবর পেয়ে হেলেনা বেগমের বিলাপ আরো বেড়ে যায়। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার পুতসহ পুরো পরিবার আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আমি বেঁচে থেকে আর কি করুম। আমার ছেলেকে রেখে আল্লাহ আমারে নিয়ে যাইত গা। আমি এই শোক সইব কি করে?

এদিকে অগ্নিকান্ডে নিহত সৈয়দ মোবারক হোসেন ও তার স্ত্রী সন্তানদের লাশ দাফন করার জন্য বাড়ির পাশেই পাশাপালি খোড়া হয়েছে ৫টি কবর। বাদ আছর বাড়ির পাশের মসজিদ মাঠে নামাজে জানাযা শেষে তাদের লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।

প্রবাসী মোবারক হোসেন কাউছারের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকারপাড়ায় হলেও তার পরিবার ঢাকার মগ বাজার এলাকায় বসবাস করতো।

সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের আত্মীয় নেসার আহমেদ জানান, প্রায় ১০ বছর আগে মোবারক হোসেন ইতালিতে চলে যান। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। সেখানে তার চারটি কসমেটিকসের দোকান আছে। মোবারক হোসেন ইতালিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। তাই স্ত্রী ও সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের ইতালিতে যাওয়ার ভিসাও হয়ে গিয়েছিল। দেড় মাস আগে ছুটি নিয়ে তিনি ইতালি থেকে দেশে ফিরেন তার স্ত্রী-সন্তানকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাদের ইতালি আর যাওয়ার কথা ছিলো। শুক্রবার (আজ) তাদের গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিলো। তবে তারা আসছেন লাশ হয়ে।

সৈয়দ মোবারকের চাচাতো ভাই মোস্তাফিজ ও ফয়সাল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সৈয়দ মোবারক তার স্ত্রী স্বপ্নাসহ ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসা থেকে বের হন “কাচ্চি ভাই” নামে রেস্তোরায় ডিনার করতে। পরে সেখানে অগ্নিকান্ড হলে সবাই মারা গেছেন।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাউল আলম ভ‚ইয়া জানান, বিষয়টি তিনি শুনে শুক্রবার সকালে এসিল্যান্ডকে নিহতদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারকে বলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার চাইলে সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে।

উল্লেখ্য, বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।