ঢাকা ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা, খরচ বাড়ছে শিল্পোৎপাদনে

বিশেষ প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৩০:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ৬ ও ৯ সুদহার নীতি ভেঙে স্মার্ট সুদহার নীতি ঘোষণায় আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা । একই সাথে মূল্যস্ফীতির চাপও ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে। নতুন এই স্মার্ট নীতির কারণে প্রতিমাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। অথচ সেই হারে বাড়ছে না ব্যবসায়ীদের আয় ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা । এতে শিল্পোৎপাদনের খরচ বাড়ছে প্রতিনিয়ত; যা ব্যবসাবাণিজ্য বিপর্যস্ত করে ফেলছে ।

ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন কোনো বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। এমনকি শিল্পায়ন তো হচ্ছেই না, বরং উল্টো চলমান শিল্প ইউনিটগুলো টিকিয়ে রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে । এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কর্মসংস্থান; যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আরো গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমটাই মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের হার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে । যা মার্চে ছিলো ১৩ দশমিক ১১। ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ১২ দশমিক ৪৩। জানুয়ারিতে ছিলো ১১ দশমিক ৮৯। ২০২৩ সালের বছরের ডিসেম্বরে ১১ দশমিক ৪৭ ও নভেম্বরে ছিলো ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ । নতুন এই নীতির ফলেই সুদের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা ।

জানা গেছে, বৈশ্বিক সংকট নিরসনের জন্য সুদহার নির্ধারণে বর্তমানে একটি নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক । এর নাম ‘ সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল ’ বা স্মার্ট পদ্ধতি যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে চালু করা হয়েছে । এই পদ্ধতি চালুর চার মাসেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় আগের ৪ মাসের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে । এতে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা ।

ব্যবসায়ীদের মতে, ঋণের সুদহার ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে বিরাজমান কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে ব্যবসায় যোগ হয়েছে আরও দুর্দশা; যা চলমান সংকট আরো ঘনীভূত করছে । এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থায়ী মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না । এটা তো পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নয় যে পরিবারের সবাই কাজ করেন । এখানে ৫ জনের একটা পরিবারে কাজ করেন একজন বা দু’জন । ফলে আয় কম কিন্তু ব্যয় বেশি । এজন্য আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । শিল্পায়নের জন্য সহায়ক সিদ্ধান্ত নিতে হবে । ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সাময়িক কৌশল হতে পারে । তবে এটা একমাত্র কৌশল হতে পারে না । এর সঙ্গে অন্যান্য সুযোগসুবিধা যেমন গ্যাস- বিদ্যুতের সংকট নিরসন করতে হবে । একই সাথে বিদ্যুৎ- গ্যাস ও আনুষঙ্গিক সেবাগুলোর খরচ কমাতে হবে । অন্যথায় ব্যবসাবাণিজ্যের ব্যয় কমানো যাবে না । মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না ।

গৃহীত নতুন এ স্মার্ট নীতির ফলে এরমধ্যে ২০২৩- ২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মোট দেশজ উৎপাদনে( জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। যা এ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল ৬ দশমিক এক শতাংশ । আবার মূল্যস্ফীতির চাপও এখনো ২ অঙ্কের ঘরের কাছাকাছিই রয়েছে । জানা গেছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ফর্মুলা বেছে নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যা তাদের জন্য ভাল ফলও এনে দিয়েছে ।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে একটি মুদ্রানীতির মাধ্যমে নতুন এই সুদহার বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। যা কার্যকর হয় একই বছরের অক্টোবরে । নতুন এই নীতি বাস্তবায়নের ফলে সমস্যা সমাধান হওয়া তো দূরের কথা, সংকট আরো বেড়ে গেছে । অনেক ব্যবসায়ীই নতুন এই সুদহারকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অতিরিক্ত চাপ বলে মনে করছেন । ভবিষ্যতে এই সুদহার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন । ফলে নতুন উদ্যোগ, বিনিয়োগ, শিল্পকারখানা স্থাপনে তারা অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছেন বলে জানিয়েছেন । অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে সুদের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় বাড়ানো হচ্ছে । এতে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যা জিডিপিতে প্রভাব ফেলছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা ।

জানা গেছে, বর্তমানে আমানতের হার ৬ থেকে ৭ এবং ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত । এখানে পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে ৬ শতাংশ; যা দেশের ব্যাংকিং খাতে এক অসমতার সৃষ্টি করছে । এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে এরইমধ্যে কাঁচামালের দাম বেড়েছে । সেই সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্যবসার খরচ এবং শ্রমিক ব্যয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক ঋণের ক্রমবর্ধমান সুদহার ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে ।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, ব্যবসা শুরুর সময় আমরা যে ঋণ নিয়েছিলাম ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে, এখন সেই ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে । কোথা থেকে আসবে এই বাড়তি টাকা? এটাকে ভ্রান্ত নীতি হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী ।

জানা গেছে, প্রতিমাসের শেষ অথবা প্রথম দিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্মার্ট সুদের হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পরবর্তী মাসে বিতরণ করা নতুন ঋণের জন্য প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ ডিসেম্বরে ঘোষিত স্মার্ট সুদের হার জানুয়ারির জন্য প্রযোজ্য হয়। তবে প্রতি মাসে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার পরিবর্তন করা হয় না । একজন গ্রাহক যে মাসে ঋণ নেন তখনকার প্রচলিত সুদের হার পরবর্তী ৬ মাসের জন্য কার্যকর হয় ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস- ২০২৩ সালের জুলাই ও আগস্টে ঋণের সুদহার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১০ ও ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ । এরপর সেই বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সুদহার বাড়িয়ে যথাক্রমে ৭ দশমিক ২০ ও ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ করা হয় । নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২০২৩- এ এটি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭২ ও ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ করা হয় ।

২০২৪ সালের জানুয়ারির শেষে বেঞ্চমার্ক সুদের হার ছিলো ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ । ফেব্রুয়ারিতে তা ছিলো নয় দশমিক ৬১ শতাংশ। মার্চে তা লাফিয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয় । ব্যাংকগুলোকে তাদের ঋণের সুদ নির্ধারণের জন্য স্মার্ট হারের সাথে আরো তিন শতাংশ পর্যন্ত যোগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে । আগে ব্যাংকগুলোকে বেঞ্চমার্ক হারের সাথে তিন দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল ।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক এক শতাংশে নেমে আসতে পারে। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক( এডিবি) । তবে আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে এডিবি ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা, খরচ বাড়ছে শিল্পোৎপাদনে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৩০:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ৬ ও ৯ সুদহার নীতি ভেঙে স্মার্ট সুদহার নীতি ঘোষণায় আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা । একই সাথে মূল্যস্ফীতির চাপও ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে। নতুন এই স্মার্ট নীতির কারণে প্রতিমাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। অথচ সেই হারে বাড়ছে না ব্যবসায়ীদের আয় ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা । এতে শিল্পোৎপাদনের খরচ বাড়ছে প্রতিনিয়ত; যা ব্যবসাবাণিজ্য বিপর্যস্ত করে ফেলছে ।

ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন কোনো বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। এমনকি শিল্পায়ন তো হচ্ছেই না, বরং উল্টো চলমান শিল্প ইউনিটগুলো টিকিয়ে রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে । এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কর্মসংস্থান; যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আরো গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমটাই মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের হার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে । যা মার্চে ছিলো ১৩ দশমিক ১১। ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ১২ দশমিক ৪৩। জানুয়ারিতে ছিলো ১১ দশমিক ৮৯। ২০২৩ সালের বছরের ডিসেম্বরে ১১ দশমিক ৪৭ ও নভেম্বরে ছিলো ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ । নতুন এই নীতির ফলেই সুদের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা ।

জানা গেছে, বৈশ্বিক সংকট নিরসনের জন্য সুদহার নির্ধারণে বর্তমানে একটি নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক । এর নাম ‘ সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল ’ বা স্মার্ট পদ্ধতি যা ২০২৩ সালের অক্টোবরে চালু করা হয়েছে । এই পদ্ধতি চালুর চার মাসেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় আগের ৪ মাসের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে । এতে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা ।

ব্যবসায়ীদের মতে, ঋণের সুদহার ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে বিরাজমান কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে ব্যবসায় যোগ হয়েছে আরও দুর্দশা; যা চলমান সংকট আরো ঘনীভূত করছে । এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থায়ী মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না । এটা তো পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নয় যে পরিবারের সবাই কাজ করেন । এখানে ৫ জনের একটা পরিবারে কাজ করেন একজন বা দু’জন । ফলে আয় কম কিন্তু ব্যয় বেশি । এজন্য আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । শিল্পায়নের জন্য সহায়ক সিদ্ধান্ত নিতে হবে । ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সাময়িক কৌশল হতে পারে । তবে এটা একমাত্র কৌশল হতে পারে না । এর সঙ্গে অন্যান্য সুযোগসুবিধা যেমন গ্যাস- বিদ্যুতের সংকট নিরসন করতে হবে । একই সাথে বিদ্যুৎ- গ্যাস ও আনুষঙ্গিক সেবাগুলোর খরচ কমাতে হবে । অন্যথায় ব্যবসাবাণিজ্যের ব্যয় কমানো যাবে না । মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না ।

গৃহীত নতুন এ স্মার্ট নীতির ফলে এরমধ্যে ২০২৩- ২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মোট দেশজ উৎপাদনে( জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। যা এ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল ৬ দশমিক এক শতাংশ । আবার মূল্যস্ফীতির চাপও এখনো ২ অঙ্কের ঘরের কাছাকাছিই রয়েছে । জানা গেছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ফর্মুলা বেছে নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যা তাদের জন্য ভাল ফলও এনে দিয়েছে ।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে একটি মুদ্রানীতির মাধ্যমে নতুন এই সুদহার বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। যা কার্যকর হয় একই বছরের অক্টোবরে । নতুন এই নীতি বাস্তবায়নের ফলে সমস্যা সমাধান হওয়া তো দূরের কথা, সংকট আরো বেড়ে গেছে । অনেক ব্যবসায়ীই নতুন এই সুদহারকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অতিরিক্ত চাপ বলে মনে করছেন । ভবিষ্যতে এই সুদহার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন । ফলে নতুন উদ্যোগ, বিনিয়োগ, শিল্পকারখানা স্থাপনে তারা অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছেন বলে জানিয়েছেন । অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে সুদের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় বাড়ানো হচ্ছে । এতে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যা জিডিপিতে প্রভাব ফেলছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা ।

জানা গেছে, বর্তমানে আমানতের হার ৬ থেকে ৭ এবং ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত । এখানে পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে ৬ শতাংশ; যা দেশের ব্যাংকিং খাতে এক অসমতার সৃষ্টি করছে । এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে এরইমধ্যে কাঁচামালের দাম বেড়েছে । সেই সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্যবসার খরচ এবং শ্রমিক ব্যয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক ঋণের ক্রমবর্ধমান সুদহার ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে ।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, ব্যবসা শুরুর সময় আমরা যে ঋণ নিয়েছিলাম ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে, এখন সেই ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে । কোথা থেকে আসবে এই বাড়তি টাকা? এটাকে ভ্রান্ত নীতি হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী ।

জানা গেছে, প্রতিমাসের শেষ অথবা প্রথম দিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্মার্ট সুদের হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পরবর্তী মাসে বিতরণ করা নতুন ঋণের জন্য প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ ডিসেম্বরে ঘোষিত স্মার্ট সুদের হার জানুয়ারির জন্য প্রযোজ্য হয়। তবে প্রতি মাসে গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার পরিবর্তন করা হয় না । একজন গ্রাহক যে মাসে ঋণ নেন তখনকার প্রচলিত সুদের হার পরবর্তী ৬ মাসের জন্য কার্যকর হয় ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস- ২০২৩ সালের জুলাই ও আগস্টে ঋণের সুদহার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১০ ও ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ । এরপর সেই বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সুদহার বাড়িয়ে যথাক্রমে ৭ দশমিক ২০ ও ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ করা হয় । নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২০২৩- এ এটি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭২ ও ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ করা হয় ।

২০২৪ সালের জানুয়ারির শেষে বেঞ্চমার্ক সুদের হার ছিলো ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ । ফেব্রুয়ারিতে তা ছিলো নয় দশমিক ৬১ শতাংশ। মার্চে তা লাফিয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয় । ব্যাংকগুলোকে তাদের ঋণের সুদ নির্ধারণের জন্য স্মার্ট হারের সাথে আরো তিন শতাংশ পর্যন্ত যোগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে । আগে ব্যাংকগুলোকে বেঞ্চমার্ক হারের সাথে তিন দশমিক ৫০ শতাংশ যোগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল ।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক এক শতাংশে নেমে আসতে পারে। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক( এডিবি) । তবে আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে এডিবি ।