ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সায়হাম পরিবারের কাছে জিম্মি উপজেলা পরিষদ, পালন হয়না রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি

ত্রিপুরারী দেবনাথ তিপু, হবিগঞ্জ
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ৪৯ কিলোমিটার দূরে মাধবপুর উপজেলা। ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা সড়ক, রেল ও নৌ পথ সমৃদ্ধ উন্নত যোগাযোগের একটি প্রশাসনিক উপজেলা। ঐতিহ্য এবং ব্যবসায়িক অঞ্চল হিসেবে এর রয়েছে বিশাল সুনাম।

তিন লাখ ৯১ হাজার ভোটারের ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলার জনগণ পাচ্ছে না উপজেলা পরিষদের সেবা।১৯৮৫-২০২৪ পর্যন্ত মোট ৩৮ বছরে মধ্যে মাত্র ১০ বছর দায়িত্ব ছিল মনিরুল বর চৌধুরী এবং জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম। বাকি ২৮ বছরই এ পরিষদের দায়িত্ব সায়হাম পরিবারের হাতে। অর্থবিত্তে এবং ক্ষমতায় অনেক দাপটে হওয়ায় এ পরিবারের হাত থেকে কেউ এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি নিতে পারছে না।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম একবার চেয়ারম্যান হলেও তাদের ষড়যন্ত্র এবং অর্থ বৃত্তের নিকট টিকে থাকতে পারেনি।

বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকা মার্কা নিয়ে তার সাথে প্রার্থী হলেও অর্থবৃত্ত এবং ষড়যন্ত্রের নিকট পরাজিত হয়েছে। আপন বড় ভাই কায়সার যুদ্ধাপরাধী রাজাকার হিসেবে ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আরেক ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নেতা এবং জেলা সভাপতি।

জানা যায়, প্রতিটি নির্বাচনে বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ করে সায়হাম পরিবার তার ভাই শাহজাহানকে এই পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়ে রাখে। অনেক বড় শিল্পপতি এবং ঢাকায় বসবাস করার কারণে জনগণ তার সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারে না। জনসাধারণ কোন কাজে গেলে তিনি বলে দল ক্ষমতায় নাই আমার কথা কেউ শোনে না। এসব কথা বলে সাধারণ জনগণকে দূরে রাখে। কিন্তু সায়হাম পরিবারের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা তিনি ভোগ করেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি কাজে লাগিয়ে নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা, সুবিধাজনক ব্যবসা, জায়গা সম্পত্তির সংরক্ষণ এবং অন্যান্য সুবিধা তিনি ঠিকই ভোগ করছেন। অনেকে মনে করেন তিনি দীর্ঘদিন এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকায় এটি এখন জামাত বিএনপির নীতি নির্ধারণ কেন্দ্র স্থলে পরিণত হয়েছে । সামাজিক বিচার-আচার, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়ায় উপজেলার মামলা মোকাদ্দামা বৃদ্ধি পেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম ৭ই মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্ট শোক দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অংশগ্রহণ করেন না তিনি।

দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন তালুকদার ওয়াসিম বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জাতীয় দিবস গুলোতে অংশ গ্রহণ করেন না এটি আমাদের জন্য কলঙ্ক। তাকে বার বার অনুরোধ করেছি তিনি অংশ গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা হলে যেন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি আমাদের কোনো দায়িত্ব দেন নি।

আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গভীর ভাবে লক্ষ করেছি তিনি জাতীয় দিবসে অংশ গ্রহণ করেন না। তিনি আরও বলেন জাতীয় প্রোগ্রাম এড়িয়ে চলেন। উপজেলায় বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরও জানা যায়, তার পরিষদেই দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করে জেল খেটেছেন বিএনপির আরেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ। বর্তমানে মাত্র দুইজন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান বাকি চেয়ারম্যান বিএনপি প্রার্থী এমনকি পৌরসভার মেয়র বিএনপির।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সায়হাম পরিবারের কাছে জিম্মি উপজেলা পরিষদ, পালন হয়না রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪

হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ৪৯ কিলোমিটার দূরে মাধবপুর উপজেলা। ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা সড়ক, রেল ও নৌ পথ সমৃদ্ধ উন্নত যোগাযোগের একটি প্রশাসনিক উপজেলা। ঐতিহ্য এবং ব্যবসায়িক অঞ্চল হিসেবে এর রয়েছে বিশাল সুনাম।

তিন লাখ ৯১ হাজার ভোটারের ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলার জনগণ পাচ্ছে না উপজেলা পরিষদের সেবা।১৯৮৫-২০২৪ পর্যন্ত মোট ৩৮ বছরে মধ্যে মাত্র ১০ বছর দায়িত্ব ছিল মনিরুল বর চৌধুরী এবং জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম। বাকি ২৮ বছরই এ পরিষদের দায়িত্ব সায়হাম পরিবারের হাতে। অর্থবিত্তে এবং ক্ষমতায় অনেক দাপটে হওয়ায় এ পরিবারের হাত থেকে কেউ এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদটি নিতে পারছে না।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম একবার চেয়ারম্যান হলেও তাদের ষড়যন্ত্র এবং অর্থ বৃত্তের নিকট টিকে থাকতে পারেনি।

বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকা মার্কা নিয়ে তার সাথে প্রার্থী হলেও অর্থবৃত্ত এবং ষড়যন্ত্রের নিকট পরাজিত হয়েছে। আপন বড় ভাই কায়সার যুদ্ধাপরাধী রাজাকার হিসেবে ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আরেক ভাই কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নেতা এবং জেলা সভাপতি।

জানা যায়, প্রতিটি নির্বাচনে বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ করে সায়হাম পরিবার তার ভাই শাহজাহানকে এই পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়ে রাখে। অনেক বড় শিল্পপতি এবং ঢাকায় বসবাস করার কারণে জনগণ তার সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারে না। জনসাধারণ কোন কাজে গেলে তিনি বলে দল ক্ষমতায় নাই আমার কথা কেউ শোনে না। এসব কথা বলে সাধারণ জনগণকে দূরে রাখে। কিন্তু সায়হাম পরিবারের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা তিনি ভোগ করেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি কাজে লাগিয়ে নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা, সুবিধাজনক ব্যবসা, জায়গা সম্পত্তির সংরক্ষণ এবং অন্যান্য সুবিধা তিনি ঠিকই ভোগ করছেন। অনেকে মনে করেন তিনি দীর্ঘদিন এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকায় এটি এখন জামাত বিএনপির নীতি নির্ধারণ কেন্দ্র স্থলে পরিণত হয়েছে । সামাজিক বিচার-আচার, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়ায় উপজেলার মামলা মোকাদ্দামা বৃদ্ধি পেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম ৭ই মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্ট শোক দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অংশগ্রহণ করেন না তিনি।

দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন তালুকদার ওয়াসিম বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জাতীয় দিবস গুলোতে অংশ গ্রহণ করেন না এটি আমাদের জন্য কলঙ্ক। তাকে বার বার অনুরোধ করেছি তিনি অংশ গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা হলে যেন আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি আমাদের কোনো দায়িত্ব দেন নি।

আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গভীর ভাবে লক্ষ করেছি তিনি জাতীয় দিবসে অংশ গ্রহণ করেন না। তিনি আরও বলেন জাতীয় প্রোগ্রাম এড়িয়ে চলেন। উপজেলায় বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি দেখে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরও জানা যায়, তার পরিষদেই দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করে জেল খেটেছেন বিএনপির আরেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ। বর্তমানে মাত্র দুইজন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান বাকি চেয়ারম্যান বিএনপি প্রার্থী এমনকি পৌরসভার মেয়র বিএনপির।