ঢাকা ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগর পথে মালয়েশিয়া, ‘কারাগারে বন্দী’ স্বপ্ন

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:১৯:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজারের বাসিন্দা গফুর উদ্দিন। রবিবার (৯ জুন) ভোরে কক্সবাজার পৌঁছে চলে আসেন শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন বিআইডব্লিটিএ’র জেটি ঘাটে। টানা আট মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ছেলে আবদুল হালিম স্বদেশে ফিরছেন। ছেলের জন্য বাবার গফুর উদ্দিনের অপেক্ষা। ছেলে তখনো ঘাটে পৌঁছেনি। এ সময় কথা হয় বৃদ্ধ বাবার সাথে।

তিনি জানালেন, তার ছেলে আবদুল হালিম পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। কাজ করে কোন রকমে তাদের সংসার চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি নিখোঁজ হয় হালিম। কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত রোজার ঈদের পরদিন মিয়ানমার থেকে আচমকা ফোন আসে। ফোনে আমার ছেলে জানায় সে মিয়ানমার কারাগারে আটক রয়েছে। দীর্ঘদিন পর তার বিষয়ে জানতে পারি।

দালাল চক্রের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে সাগর পথে ট্রলার মালয়েশিয়া যাত্রা দিয়েছিলো হালিম। যেখানে আড়াই হাজার এলাকার আরও ৫ জন ছিলো। কিন্তু দালালরা তাদের নিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলো মিয়ানমারে। ওখানে মিয়ানমারের বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে পাঠিয়ে দেয় কারাগারে। এরপর শুরু হয় বন্দী জীবন।

গফুর উদ্দিন আরও বলেন, সরকারের যাচাই-বাছাই শেষে কয়েকদিন আগে জানানো হয় ছেলে আজ (রোববার) দেশে ফিরছে। তাই ছেলেকে নিতে কক্সবাজার আসা। আটমাস পর খুব খুশি লাগছে। সরকারকে অভিনন্দন জানাই। আমার সাথে আমার এলাকার আরও ৫ জন এসেছে। তাদের ছেলেরাও এখানে আছে। ছেলেকে পেলে আমরা কোরবানীর ঈদ খুব আনন্দের সাথে করতে পারবো।

একই কথা জানালেন, কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তরপাড়ার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, তার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছও ১১ মাস পূর্বে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে মিয়ানমারের আটক হয়েছিলো। ছেলে ফিরে আসায় তিনিও খুশি।

ফেরত আসা ৪৫ জনই সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নযাত্রা দিয়েছিলেন। যারা ৮ থেকে ১৫ মাস কারাভোগ শেষে রবিবার (৯ জুন) সকালে দেশে ফিরেছেন। ফেরত আসার পর এসব মানুষগুলো এক কথায় অনুরোধ করেছেন দালালের প্রলোভনে যেনো আর কেউ এমন ভুল পথে যাত্রা না করে। এটা প্রতারণা ছাড়াই আর কিছু না।

মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ৪৫ জন বাংলাদেশি রবিবার (৯ জুন) সকাল ৯টার দিকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাট এসে পৌঁছে।

ফিরে আসা এসব বাংলাদেশিকে নিয়ে বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর একটি ছোট্ট জাহাজে আনা হয় তাদের। ওই সময় আসেন মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে নিয়ে ফেরত যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সাগর পথে মালয়েশিয়া, ‘কারাগারে বন্দী’ স্বপ্ন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:১৯:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজারের বাসিন্দা গফুর উদ্দিন। রবিবার (৯ জুন) ভোরে কক্সবাজার পৌঁছে চলে আসেন শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন বিআইডব্লিটিএ’র জেটি ঘাটে। টানা আট মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ছেলে আবদুল হালিম স্বদেশে ফিরছেন। ছেলের জন্য বাবার গফুর উদ্দিনের অপেক্ষা। ছেলে তখনো ঘাটে পৌঁছেনি। এ সময় কথা হয় বৃদ্ধ বাবার সাথে।

তিনি জানালেন, তার ছেলে আবদুল হালিম পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। কাজ করে কোন রকমে তাদের সংসার চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি নিখোঁজ হয় হালিম। কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত রোজার ঈদের পরদিন মিয়ানমার থেকে আচমকা ফোন আসে। ফোনে আমার ছেলে জানায় সে মিয়ানমার কারাগারে আটক রয়েছে। দীর্ঘদিন পর তার বিষয়ে জানতে পারি।

দালাল চক্রের প্রলোভনে কক্সবাজার থেকে সাগর পথে ট্রলার মালয়েশিয়া যাত্রা দিয়েছিলো হালিম। যেখানে আড়াই হাজার এলাকার আরও ৫ জন ছিলো। কিন্তু দালালরা তাদের নিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলো মিয়ানমারে। ওখানে মিয়ানমারের বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে পাঠিয়ে দেয় কারাগারে। এরপর শুরু হয় বন্দী জীবন।

গফুর উদ্দিন আরও বলেন, সরকারের যাচাই-বাছাই শেষে কয়েকদিন আগে জানানো হয় ছেলে আজ (রোববার) দেশে ফিরছে। তাই ছেলেকে নিতে কক্সবাজার আসা। আটমাস পর খুব খুশি লাগছে। সরকারকে অভিনন্দন জানাই। আমার সাথে আমার এলাকার আরও ৫ জন এসেছে। তাদের ছেলেরাও এখানে আছে। ছেলেকে পেলে আমরা কোরবানীর ঈদ খুব আনন্দের সাথে করতে পারবো।

একই কথা জানালেন, কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তরপাড়ার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, তার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছও ১১ মাস পূর্বে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে মিয়ানমারের আটক হয়েছিলো। ছেলে ফিরে আসায় তিনিও খুশি।

ফেরত আসা ৪৫ জনই সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নযাত্রা দিয়েছিলেন। যারা ৮ থেকে ১৫ মাস কারাভোগ শেষে রবিবার (৯ জুন) সকালে দেশে ফিরেছেন। ফেরত আসার পর এসব মানুষগুলো এক কথায় অনুরোধ করেছেন দালালের প্রলোভনে যেনো আর কেউ এমন ভুল পথে যাত্রা না করে। এটা প্রতারণা ছাড়াই আর কিছু না।

মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ৪৫ জন বাংলাদেশি রবিবার (৯ জুন) সকাল ৯টার দিকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাট এসে পৌঁছে।

ফিরে আসা এসব বাংলাদেশিকে নিয়ে বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর একটি ছোট্ট জাহাজে আনা হয় তাদের। ওই সময় আসেন মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৩৪ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে নিয়ে ফেরত যান।