ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দর

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১১০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটা জাপানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দু’টি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর ২৯ বছর আগে ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু এই বিমানবন্দরটির।

তবে খারাপ সংবাদ বিমানবন্দরটি নিয়ে। কারণ যে দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর বিমানবন্দর তৈরি করা হয়েছে তা ক্রমেই সমুদ্রের নিচে ডুবে যাচ্ছে । এমনকি, মূল ভূখণ্ড থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে এই বিমানবন্দর । এরইমধ্যে দ্বীপের ৩৮ ফুটের বেশি ডুবে গেছে । ২০৫৬ সালের মধ্যে আরও ১৩ ফুট সমুদ্রের নিচে ডুবে যেতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা ।

দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর বিমানবন্দর তৈরি করতে জাপানের খরচ হয়েছিল ১৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি । কৃত্রিম দ্বীপ দুটি নির্মাণ করতে প্রথমে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর ৫ ফুট উচ্চতার মাটি দেওয়া হয় । তার উপর ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২২ লাখ পাইপ ।

জমির ভিত শক্ত করতে পাইপের ওপর মাটির সঙ্গে কাদা এবং বালি মেশানো হয় । ওসাকা বের ওপর তৈরি দুটি কৃত্রিম দ্বীপের জমি ছিল ভেজা স্পঞ্জের মতো । সেই জমি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তারপর শুরু হয় বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ । ষাটের দশকে টোকিয়ো শহরের সঙ্গে কানসাই এলাকার বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে কোবে এবং ওসাকা শহরের কাছাকাছি একটি বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা থেকেই এ বিমানবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ নেয় জাপান সরকার ।

প্রথমে ভাবা হয়েছিল ইটামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনঃনির্মাণ করে আরও বর্ধিত করা হবে । কিন্তু ইটামি এবং টোয়োনাকা শহরের কাছে এত উঁচু আবাসন রয়েছে যে বিমানবন্দর তৈরির জন্য ফাঁকা জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে । এমনকি সেখানকার বাসিন্দারাও আপত্তি জানাতে শুরু করেন । বিমানবন্দর তৈরি হলে শব্দদূষণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি জানান তারা । তাই সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় ।

কোবে শহরে নতুন বিমানবন্দর তৈরির চিন্তাভাবনা করা হলেও সেই চিন্তা থেকে সরে আসে জাপান সরকার । এরপর সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর দুটি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি ।

১৯৮৭ সাল থেকে দ্বীপ নির্মাণের কাজ শুরু হয় । ২৬০০ একর জমির ওপর কৃত্রিম উপায়ে দুটি দ্বীপ তৈরি করে তার ওপর তৈরি হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । ১৯৯০ সালে কৃত্রিম দ্বীপ দুটি তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হয় । সেতু নির্মাণের চার বছর পর সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।

১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ভূমিকম্প হয় জাপানে । ভূমিকম্পের ফলে জাপানের হোনসু দ্বীপে জন মারা যায় । ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয় । কিন্তু কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল সম্পূর্ণ অক্ষত । ১৯৯৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বিমানবন্দরটির কোন ক্ষতি করতে পারেনি ।

তবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, কয়েকটি বিমানের ইঞ্জিনের ভেতর পানি ঢুকে যায় । বিমানবন্দরের ভেতর আটকে পড়েন বহু যাত্রী । যে সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিমানবন্দরের যোগাযোগ ছিল সেই সেতুর ওপর একটি ট্যাঙ্কার আছড়ে পড়ে সেতুর কিছু অংশ ভেঙে পড়ে । দুদিন বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকে বিমানবন্দরে ।

ঘূর্ণিঝড়ের এক মাস পর কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণভাবে চালু হয় । ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিলের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হয় । ২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোট ২ কোটি ৬০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন । সেই সময় জাপানের তৃতীয় ব্যস্ততম এবং এশিয়ার ত্রিশতম ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসেবে নাম লেখায় কানসাই বিমানবন্দর ।

কৃত্রিম দ্বীপটি প্রতিনিয়ত ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চিন্তায় জাপান সরকার । বিমানবন্দরটি কয়েক দশকের মধ্যে সমুদ্রের নিচেডু্ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বিমানবন্দর

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪

কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটা জাপানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দু’টি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর ২৯ বছর আগে ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যাত্রা শুরু এই বিমানবন্দরটির।

তবে খারাপ সংবাদ বিমানবন্দরটি নিয়ে। কারণ যে দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর বিমানবন্দর তৈরি করা হয়েছে তা ক্রমেই সমুদ্রের নিচে ডুবে যাচ্ছে । এমনকি, মূল ভূখণ্ড থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে এই বিমানবন্দর । এরইমধ্যে দ্বীপের ৩৮ ফুটের বেশি ডুবে গেছে । ২০৫৬ সালের মধ্যে আরও ১৩ ফুট সমুদ্রের নিচে ডুবে যেতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা ।

দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর বিমানবন্দর তৈরি করতে জাপানের খরচ হয়েছিল ১৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি । কৃত্রিম দ্বীপ দুটি নির্মাণ করতে প্রথমে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর ৫ ফুট উচ্চতার মাটি দেওয়া হয় । তার উপর ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২২ লাখ পাইপ ।

জমির ভিত শক্ত করতে পাইপের ওপর মাটির সঙ্গে কাদা এবং বালি মেশানো হয় । ওসাকা বের ওপর তৈরি দুটি কৃত্রিম দ্বীপের জমি ছিল ভেজা স্পঞ্জের মতো । সেই জমি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তারপর শুরু হয় বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ । ষাটের দশকে টোকিয়ো শহরের সঙ্গে কানসাই এলাকার বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে কোবে এবং ওসাকা শহরের কাছাকাছি একটি বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা থেকেই এ বিমানবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ নেয় জাপান সরকার ।

প্রথমে ভাবা হয়েছিল ইটামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনঃনির্মাণ করে আরও বর্ধিত করা হবে । কিন্তু ইটামি এবং টোয়োনাকা শহরের কাছে এত উঁচু আবাসন রয়েছে যে বিমানবন্দর তৈরির জন্য ফাঁকা জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে । এমনকি সেখানকার বাসিন্দারাও আপত্তি জানাতে শুরু করেন । বিমানবন্দর তৈরি হলে শব্দদূষণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি জানান তারা । তাই সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় ।

কোবে শহরে নতুন বিমানবন্দর তৈরির চিন্তাভাবনা করা হলেও সেই চিন্তা থেকে সরে আসে জাপান সরকার । এরপর সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর দুটি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি ।

১৯৮৭ সাল থেকে দ্বীপ নির্মাণের কাজ শুরু হয় । ২৬০০ একর জমির ওপর কৃত্রিম উপায়ে দুটি দ্বীপ তৈরি করে তার ওপর তৈরি হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । ১৯৯০ সালে কৃত্রিম দ্বীপ দুটি তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হয় । সেতু নির্মাণের চার বছর পর সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।

১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ভূমিকম্প হয় জাপানে । ভূমিকম্পের ফলে জাপানের হোনসু দ্বীপে জন মারা যায় । ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয় । কিন্তু কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল সম্পূর্ণ অক্ষত । ১৯৯৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বিমানবন্দরটির কোন ক্ষতি করতে পারেনি ।

তবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, কয়েকটি বিমানের ইঞ্জিনের ভেতর পানি ঢুকে যায় । বিমানবন্দরের ভেতর আটকে পড়েন বহু যাত্রী । যে সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিমানবন্দরের যোগাযোগ ছিল সেই সেতুর ওপর একটি ট্যাঙ্কার আছড়ে পড়ে সেতুর কিছু অংশ ভেঙে পড়ে । দুদিন বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকে বিমানবন্দরে ।

ঘূর্ণিঝড়ের এক মাস পর কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণভাবে চালু হয় । ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিলের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হয় । ২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোট ২ কোটি ৬০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন । সেই সময় জাপানের তৃতীয় ব্যস্ততম এবং এশিয়ার ত্রিশতম ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসেবে নাম লেখায় কানসাই বিমানবন্দর ।

কৃত্রিম দ্বীপটি প্রতিনিয়ত ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চিন্তায় জাপান সরকার । বিমানবন্দরটি কয়েক দশকের মধ্যে সমুদ্রের নিচেডু্ে যাবে।