রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার উদ্দেশ্যেই লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানা
![](https://bangla-times.com/wp-content/themes/Newspaper%20pro/assets/images/reporter.jpg)
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:০৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ৫১ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজারের উখিয়ায় গহীন পাহাড়ের আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট শেল নিয়ে আরসা প্রধানসহ দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতাররা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার উদ্দেশ্যেই অস্ত্রগুলো মিয়ানমার থেকে এনে পাহাড়ে মজুদ করেছিলো বলে র্যাব জানায়। বুধবার (১৫ মে) ভোরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড় থেকে এসব আগ্নেয়াস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত হলো- মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ও তার সহযোগি মো. রিয়াজ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশী রিভলবার, ৯ রাউন্ড ৯গগ পিস্তলের এ্যামুনিশন, একটি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলেনে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, বেশকিছু দিন ধরে ক্যাম্পে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে র্যাব ক্যাম্পে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় উখিয়ার ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার আস্তানা অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
অভিযানকালে পাহাড়ি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট শেল উদ্ধার করা হয়। অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। আর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করতে সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়েছিল। পরে বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কক্সবাজার হতে অনুমতি গ্রহণপূর্বক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কর্তৃক এগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানাগেছে, গ্রেফতারকৃতরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক। গ্রেফতারকৃত মোঃ শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্প-১৫ এ বসবাস শুরু করে। সে পার্শ্ববর্তী দেশে থাকাকালীন সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগদান করে।
আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের উপর পারদর্শী। প্রাথমিকভাবে ক্যাম্প-১৫ এর কমান্ডার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আরসা নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়ায় সে বাংলাদেশে আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়। পার্শ্ববর্তী দেশে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে লুটকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যম হতে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে। যার ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রীক মারামারি, সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।
বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে আরসা’র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। এই আরসা সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর প্রভাব খাটায়। কেউ আরসার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরোধিতা করলে কিংবা তাদের কথা না শুনলে তারা বেশিরভাগই অপহরণ ও হত্যা শিকার হয়। রোহিঙ্গা নাগরিক প্রর্ত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ২০২১ সালে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ আরসার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছিল।
এছাড়াও ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একজন র্যাব সদস্য গুরুত্বর আহত হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে অদ্যাবধি পর্যন্ত ১৬ জন নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূলে র্যাব-১৫, কক্সবাজার শুরু থেকেই বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী চালু রেখেছে। র্যাব বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মোঃ আবু সালাম চৌধুরী।