ঢাকা ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে আত্মহত্যা করলো অবন্তিকা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪ ১২১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও এলাকার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে অবন্তিকা তার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।

এতে তিনি লিখেছেন ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করে ও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।

আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতিয় গালিগালাজ করে—। সে আরও লিখেছে ‘আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার।

জানা যায়, কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, তার স্ত্রী তাহমিনা শবনম, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ও একমাত্র ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী জাবিদ জাওয়াদ অপূর্বকে নিয়ে ৪ জনের ছোটখাটো সাজানো সংসার ছিল ওই কলেজ শিক্ষকের। শহরের শাসনগাছা এলাকায় পৈত্রিক নিবাস হলেও তারা নগরীর উত্তর বাগিচাগাঁও এলাকার ফায়ার সার্ভিস সড়কের পিসি পার্ক অরণি নামের বাসায় থাকেন। দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অবন্তিকা ছিল মেধাবী। উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি লাভের পর তিনি বিমান বাহিনীতে চাকুরীতে যোগদান করেন। একপর্যায়ে হাঁটুতে ব্যথাজনিত কারণে চাকুরি ছেড়ে জবিতে মাস্টার্সে ভর্তি হন।

এরপর ২০২২ সাল থেকে তার জীবনে নেমে আসে নানান ঘটনা-দুর্ঘটনা। তার মৃত্যুর পর শনিবার সকালে তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচে পুলিশের পাহারা এবং তাদের দ্বিতীয় তলার বাসায় উৎসুক জনতার ভিড়। এছাড়া নিচেও রয়েছে জটলা বেধে অসংখ্য মানুষ। সকালে জগন্নাথ বিশ্বিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগের শিক্ষক মেজবাউল হাসান, নুরুন নাহার মজুমদার, মনিরা জাহান সুমিসহ ৩৫ জন শিক্ষার্থী এসেছেন অবন্তিকাদের বাসায়। এছাড়া অবন্তিকার বাবার সহকর্মী কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. বাহাদুর হোসেন, শিক্ষক আনোয়ারুল হক, রইস মিয়া, নুরুর রহমান খান, মিজানুর রহমান, ইকরাম হোসেনও এসেছেন ওই বাসায়। এসময় অবন্তিকার মা, ভাই ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম আহাজারী করে বলেন, কোথাও বিচার পায়নি আমার মেয়ে। কারণে-অকারণে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ২০২২ সাল থেকে আমার মেয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তিনি বলেন, জবি প্রশাসনের ডাকে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে গিয়ে ছিলাম, বিচার তো পাইনি উল্টো তারা (জবি প্রশাসন) আমাদের আরও মানসিকভাবে হয়রানী করেছে। কখনো থানায় জিডি ও পুলিশ-মামলার হুমকি দেয়া হতো মেয়েকে।

অবন্তিকার একমাত্র ভাই জাবিদ জাওয়াদ অপুর্ব বলেন, আপুু ঢাকা থেকে আসলে বিশ^বিদ্যালয়ের এসব বিষয় সবার সাথে শেয়ার করতেন। বাবা-মা শিক্ষক ছিলেন, তাই তারা চাইতেন বিষয়টি সহজেই সমাধান হউক। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোন সহায়তা না করায় আমার আপুকে মৃত্যুর দিকে যেতে হয়েছে। আপুর মৃত্যুর পেছনে যারা জড়িত, আমি তাদের ফাঁসি চাই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর মুনিরা জাহান সুমি বলেন, অবন্তিকা আমাদের প্রিয় ছাত্রী ছিলেন। একজন ছাত্রীকেও যদি ভাইবা পরীক্ষায় ভাল নম্বর দেয়ার জন্য চাইতাম, সেখানে অবন্তিকার নাম চলে আসতো। তার এভাবে মৃত্যু হবে এটা কখনো চিন্তাও করিনি। এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়েছে। যে শিক্ষকের নাম এসেছে তাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষককে (দ্বীন ইসলাম) একাডেমিক কার্যক্রম থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রশাসনিক সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে। আমাদের ভিসি আপা খুবই সোচ্চার। অভিযোগের বিষয়ে বিগত সময়েও যদি কোন গাফিলতি থাকে, এক্ষেত্রে ভিসি আপা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবেন।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন শনিবার দুপুরে ঘন্টাব্যাপী অবন্তিকাদের বাসায় অবস্থান করেন এবং ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এসময় তারা পরিবার, স্বজন-সহপাঠি ও তার শিক্ষকদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে অবন্তিকার মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১টার দিকে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় বাসার সামনে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সযোগে অবন্তিকার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এসময় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে সেখান থেকে অবন্তিকার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে। বিকাল ৩টায় প্রথম জানাজা শেষে অবন্তিকার মরদেহ সদরের শাসনগাছা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকাল ৪টার দিকে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, অবন্তিকার বাবা মো. জামাল উদ্দিন মৃত্যুর আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল রোজার সময় তিনি মারা যান। জামাল উদ্দিনকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার সময় কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরতলীর শাসনগাছা মহাজন বাড়ি এলাকায়। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স উচ্চবিদ্যালয়ের খডকালীন শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি উপস্থাপনা করতেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

যে কারণে আত্মহত্যা করলো অবন্তিকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও এলাকার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে অবন্তিকা তার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।

এতে তিনি লিখেছেন ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করে ও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।

আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতিয় গালিগালাজ করে—। সে আরও লিখেছে ‘আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার।

জানা যায়, কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, তার স্ত্রী তাহমিনা শবনম, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ও একমাত্র ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী জাবিদ জাওয়াদ অপূর্বকে নিয়ে ৪ জনের ছোটখাটো সাজানো সংসার ছিল ওই কলেজ শিক্ষকের। শহরের শাসনগাছা এলাকায় পৈত্রিক নিবাস হলেও তারা নগরীর উত্তর বাগিচাগাঁও এলাকার ফায়ার সার্ভিস সড়কের পিসি পার্ক অরণি নামের বাসায় থাকেন। দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অবন্তিকা ছিল মেধাবী। উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি লাভের পর তিনি বিমান বাহিনীতে চাকুরীতে যোগদান করেন। একপর্যায়ে হাঁটুতে ব্যথাজনিত কারণে চাকুরি ছেড়ে জবিতে মাস্টার্সে ভর্তি হন।

এরপর ২০২২ সাল থেকে তার জীবনে নেমে আসে নানান ঘটনা-দুর্ঘটনা। তার মৃত্যুর পর শনিবার সকালে তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচে পুলিশের পাহারা এবং তাদের দ্বিতীয় তলার বাসায় উৎসুক জনতার ভিড়। এছাড়া নিচেও রয়েছে জটলা বেধে অসংখ্য মানুষ। সকালে জগন্নাথ বিশ্বিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগের শিক্ষক মেজবাউল হাসান, নুরুন নাহার মজুমদার, মনিরা জাহান সুমিসহ ৩৫ জন শিক্ষার্থী এসেছেন অবন্তিকাদের বাসায়। এছাড়া অবন্তিকার বাবার সহকর্মী কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. বাহাদুর হোসেন, শিক্ষক আনোয়ারুল হক, রইস মিয়া, নুরুর রহমান খান, মিজানুর রহমান, ইকরাম হোসেনও এসেছেন ওই বাসায়। এসময় অবন্তিকার মা, ভাই ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম আহাজারী করে বলেন, কোথাও বিচার পায়নি আমার মেয়ে। কারণে-অকারণে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ২০২২ সাল থেকে আমার মেয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তিনি বলেন, জবি প্রশাসনের ডাকে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে গিয়ে ছিলাম, বিচার তো পাইনি উল্টো তারা (জবি প্রশাসন) আমাদের আরও মানসিকভাবে হয়রানী করেছে। কখনো থানায় জিডি ও পুলিশ-মামলার হুমকি দেয়া হতো মেয়েকে।

অবন্তিকার একমাত্র ভাই জাবিদ জাওয়াদ অপুর্ব বলেন, আপুু ঢাকা থেকে আসলে বিশ^বিদ্যালয়ের এসব বিষয় সবার সাথে শেয়ার করতেন। বাবা-মা শিক্ষক ছিলেন, তাই তারা চাইতেন বিষয়টি সহজেই সমাধান হউক। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোন সহায়তা না করায় আমার আপুকে মৃত্যুর দিকে যেতে হয়েছে। আপুর মৃত্যুর পেছনে যারা জড়িত, আমি তাদের ফাঁসি চাই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর মুনিরা জাহান সুমি বলেন, অবন্তিকা আমাদের প্রিয় ছাত্রী ছিলেন। একজন ছাত্রীকেও যদি ভাইবা পরীক্ষায় ভাল নম্বর দেয়ার জন্য চাইতাম, সেখানে অবন্তিকার নাম চলে আসতো। তার এভাবে মৃত্যু হবে এটা কখনো চিন্তাও করিনি। এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়েছে। যে শিক্ষকের নাম এসেছে তাকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষককে (দ্বীন ইসলাম) একাডেমিক কার্যক্রম থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রশাসনিক সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে। আমাদের ভিসি আপা খুবই সোচ্চার। অভিযোগের বিষয়ে বিগত সময়েও যদি কোন গাফিলতি থাকে, এক্ষেত্রে ভিসি আপা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবেন।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন শনিবার দুপুরে ঘন্টাব্যাপী অবন্তিকাদের বাসায় অবস্থান করেন এবং ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এসময় তারা পরিবার, স্বজন-সহপাঠি ও তার শিক্ষকদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে অবন্তিকার মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১টার দিকে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় বাসার সামনে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সযোগে অবন্তিকার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এসময় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে সেখান থেকে অবন্তিকার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে। বিকাল ৩টায় প্রথম জানাজা শেষে অবন্তিকার মরদেহ সদরের শাসনগাছা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকাল ৪টার দিকে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, অবন্তিকার বাবা মো. জামাল উদ্দিন মৃত্যুর আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল রোজার সময় তিনি মারা যান। জামাল উদ্দিনকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার সময় কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরতলীর শাসনগাছা মহাজন বাড়ি এলাকায়। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স উচ্চবিদ্যালয়ের খডকালীন শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি উপস্থাপনা করতেন।