ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যমুনা চরের সালেহা খাতুনদের জীবন-সংগ্রাম

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪ ১৫১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমনি চরের সালেহা খাতুন। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়েই তার সংসার জীবন। স্বামী আলী আকবর ঢাকায় রিক্সা শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার গড়েছেন চার বছর ধরে। সালেহা খাতুনের খোঁজ-খবর ও অর্থসহায়তা বন্ধ করেছেন আকবর আলী। ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষনের পুরো দায়ভার পরে সালেহা বেগম এর উপর।

কিন্তু এতবড় সংসারে পেটের আয় রোজগার করে ভাত কাপড় যোগানোর মতো অর্থ ও সামর্থ্য স্থানীয়ভাবে না থাকায় চরম বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে ধু-ধু বালুর চর থেকে শুকনো খড়কুটো সংগ্রহ করে মেইনল্যান্ডে হোটেল ও হাটবাজারে বিক্রি করেই সালেহা বেগম এর চলছে তিন বেলার খাবারের সংস্থান। সালেহা খাতুনের মতো জরিনা বেওয়া, কুলছুম খাতুন, নুরজাহান, ময়মন বেগম এর মতো হাজারো নারীর জীবনচিত্র একই।

রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর মাঝে ১৬টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৫৬ টি চরে প্রায় সাড়ে ১৬লাখ মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে অর্ধেক মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। মোট মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষি শ্রমজীবী। তবে, সারাবছর কৃষিকাজের উপর নির্ভর করে জীবিকার সংস্থান হয়ে ওঠেনা।

সাঘাটার দিঘলকান্দি চরের মালেকা খাতুন বলেন, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকায় আছে সাত বছর ধরে। এখন সে আর খোঁজ খবরও নেন না। কিন্তু জীবন তো বাঁচাতে হয়। একারণে ভুট্টা গাছ সংগ্রহ করে বিক্রি করি সাঘাটা বাজারে। এদিয়েই চলাতে হচ্ছে সংসারের ব্যয়।

কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার মর্জিনা বেগম জানান, স্বামী আব্দুল হামিদ অসুস্থ, বাধ্য হয়ে নিজেকেই আয়-রোজগারের পথ ধরতে হয়েছে। বিভিন্ন চরে কাশিয়ার গাছ কেঠে স্থানী হাটে বিক্রি করি।

উত্তরাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সাময়িকভাবে মাইগ্রেশনকৃত পুরুষ সদস্যের প্রায় ৬০ শতাংশ দ্বিতীয় বিয়ে করে সেখানেই অবস্থান করেন আরেকটি সংসার গড়ে তোলেন। এতে করে সন্তানদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন গ্রামে থাকা নারীরা।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস সালাম জানান, স্থানীয়ভাবে কাজকর্মের সুযোগ না থাকায় পুরুষ সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গমন করে। সন্তানদের নিয়ে চরম বিরম্বনায় পড়েন নারী ও শিশুরা। পুরো চিন্তার বোঝা ও সংসারের দায়িত্ব বর্তায় নারীদের উপর। প্রথম কয়েকমাস ধারদেনা করে কোনমতে সংসার পরিচালনা করলেও শেষ অর্থযোগানের পথ খুঁজতে থাকেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় খড়কুটো কুড়ি তা বাজারে নিয়ে এসে বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়েই জীবন বাঁচাতে হয় বলে তিনি জানান।

গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম জানান, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা সবচেয়ে দরিদ্রপ্রবণ জেলা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীভ্ঙান, বন্যা ও স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষজন কাজের সন্ধানে অন্যত্র গমন করে আরেকটি সংসার গড়ে। এতে করে নারীরা অসহায় হয়ে পড়ে। এজন্য স্থানীয়ভাবে নারীদের কর্মসংস্থানে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, বর্তমান সরকার নারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। একারণে নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন বলেন চরাঞ্চলে নারীদের অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত করতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

যমুনা চরের সালেহা খাতুনদের জীবন-সংগ্রাম

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমনি চরের সালেহা খাতুন। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়েই তার সংসার জীবন। স্বামী আলী আকবর ঢাকায় রিক্সা শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার গড়েছেন চার বছর ধরে। সালেহা খাতুনের খোঁজ-খবর ও অর্থসহায়তা বন্ধ করেছেন আকবর আলী। ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষনের পুরো দায়ভার পরে সালেহা বেগম এর উপর।

কিন্তু এতবড় সংসারে পেটের আয় রোজগার করে ভাত কাপড় যোগানোর মতো অর্থ ও সামর্থ্য স্থানীয়ভাবে না থাকায় চরম বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে ধু-ধু বালুর চর থেকে শুকনো খড়কুটো সংগ্রহ করে মেইনল্যান্ডে হোটেল ও হাটবাজারে বিক্রি করেই সালেহা বেগম এর চলছে তিন বেলার খাবারের সংস্থান। সালেহা খাতুনের মতো জরিনা বেওয়া, কুলছুম খাতুন, নুরজাহান, ময়মন বেগম এর মতো হাজারো নারীর জীবনচিত্র একই।

রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর মাঝে ১৬টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৫৬ টি চরে প্রায় সাড়ে ১৬লাখ মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে অর্ধেক মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। মোট মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষি শ্রমজীবী। তবে, সারাবছর কৃষিকাজের উপর নির্ভর করে জীবিকার সংস্থান হয়ে ওঠেনা।

সাঘাটার দিঘলকান্দি চরের মালেকা খাতুন বলেন, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকায় আছে সাত বছর ধরে। এখন সে আর খোঁজ খবরও নেন না। কিন্তু জীবন তো বাঁচাতে হয়। একারণে ভুট্টা গাছ সংগ্রহ করে বিক্রি করি সাঘাটা বাজারে। এদিয়েই চলাতে হচ্ছে সংসারের ব্যয়।

কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার মর্জিনা বেগম জানান, স্বামী আব্দুল হামিদ অসুস্থ, বাধ্য হয়ে নিজেকেই আয়-রোজগারের পথ ধরতে হয়েছে। বিভিন্ন চরে কাশিয়ার গাছ কেঠে স্থানী হাটে বিক্রি করি।

উত্তরাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সাময়িকভাবে মাইগ্রেশনকৃত পুরুষ সদস্যের প্রায় ৬০ শতাংশ দ্বিতীয় বিয়ে করে সেখানেই অবস্থান করেন আরেকটি সংসার গড়ে তোলেন। এতে করে সন্তানদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন গ্রামে থাকা নারীরা।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস সালাম জানান, স্থানীয়ভাবে কাজকর্মের সুযোগ না থাকায় পুরুষ সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গমন করে। সন্তানদের নিয়ে চরম বিরম্বনায় পড়েন নারী ও শিশুরা। পুরো চিন্তার বোঝা ও সংসারের দায়িত্ব বর্তায় নারীদের উপর। প্রথম কয়েকমাস ধারদেনা করে কোনমতে সংসার পরিচালনা করলেও শেষ অর্থযোগানের পথ খুঁজতে থাকেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় খড়কুটো কুড়ি তা বাজারে নিয়ে এসে বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়েই জীবন বাঁচাতে হয় বলে তিনি জানান।

গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম জানান, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা সবচেয়ে দরিদ্রপ্রবণ জেলা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীভ্ঙান, বন্যা ও স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষজন কাজের সন্ধানে অন্যত্র গমন করে আরেকটি সংসার গড়ে। এতে করে নারীরা অসহায় হয়ে পড়ে। এজন্য স্থানীয়ভাবে নারীদের কর্মসংস্থানে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, বর্তমান সরকার নারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। একারণে নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন বলেন চরাঞ্চলে নারীদের অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত করতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।