মে মাসের শেষদিকে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:২০:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪ ৯৬ বার পড়া হয়েছে
টানা তীব্র তাপপ্রবাহের পর চলতি মাসের শুরু থেকে বৃষ্টিতে ক্রমশঃ স্বস্তি ফিরেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়- বৃষ্টি হচ্ছে । সেই সাথে কেটেছে গরমের দাপট । বৃষ্টিপাতের প্রভাবে গত কয়েকদিনে দেশের কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে ।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলেছেন, আবহাওয়ার স্বস্তিকর এই অবস্থা চলতে পারে আরও অন্তত ৪ দিন । এরপর বৃষ্টির প্রবণতা শিথিল হয়ে বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা । তবে তাপপ্রবাহ মে মাসের চেয়ে কিছুটা কম থাকবে । বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে। মে মাসের শেষদিকে একটি নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা ।
শুক্রবার (১০ মে) আমেরিকা ও ইউরোপিয়ানের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আভাস দিয়েছে । এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে’ রিমাল’ । ওমানের দেওয়া এই আরবী নামের অর্থ হলো-বালু । চলতি মাসের ২০ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আঘাত হানতে পারে ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুইটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে মাসের শেষ দিকে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এই মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে । তবে তা এপ্রিলের মতো অবস্থায় যাবে না ।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্নিঝড় সৃষ্টি হয় মূলত বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বে ও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর । বাংলাদেশের ওপর মৌসুমী বায়ু প্রবাহ শুরু হয় সাধারণত ৩০ মে’র পর থেকে ৭ জুনের মধ্যে । বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম মার্চ মাসে শুরু হলেও শুক্রবার (১০ মে) পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোন ঘূর্ণিঝড়- নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয়নি । তাই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে । সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ২০ মে’র পরে সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এটি খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে । ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টি উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ।
তিনি জানান, আগামী ২০ থেকে ২৭ মে’র মধ্যে শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে । শুক্রবার (১০ মে) আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, রিমাল মে মাসের ২৩- ২৫ এর মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে । সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আঘাত হানতে পারে ।
সম্ভাব্য ঘূর্নিঝড় সম্পর্কে জানা যাচ্ছে যে, ঘূর্নিঝড়টি সৃষ্টির সম্ভাব্য সময় ১৯- ২১ মে । পূর্নিমা রাত ২৩ মে । স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাব্য সময় ২৩- ২৫ মে । স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাব্য স্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী যে কোনো স্থান । আঘাতের সময বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় ১৫০-১৮০ কিলোমিটার, পূর্ব উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় গতি হবে ১৭০- ২০০ কিলোমিটার ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, বর্ষা পূর্ববর্তী সময় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকে । সে হিসেবে চলতি মে মাসের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ।
আবহাওয়া দফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার দিন বৃষ্টি থাকবে, এরপর তাপমাত্রা বাড়বে । ঢাকার তাপমাত্রা থাকবে ৩৬ থেকে ৩৮ সেলসিয়াসের মধ্যে ।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন,বৃষ্টির প্রবণতা চলতি মাসের ১২- ১৩ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে । চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুইটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে । সেই লঘুচাপ থেকে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে আঘাত হানতে পারে ।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, রোববার (১২ মে) থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে থাকবে । ১৫ মে থেকে তাপমাত্রা আরও বাড়বে । তখন ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় হয়তো বৃষ্টি থাকবে। ১৫ মে থেকে পুরো মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ থাকতে পারে ।