বিজয় এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত: ক্ষতিগ্রস্ত ৩ পরিবারকে পুনর্বাসনের আশ্বাস
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ ১০৪ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লায় আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার অন্তত ১৫ ঘণ্টা পর সোমবার (১৮ মার্চ) ভোর ৫টার দিকে চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেট-জামালপুর-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের অন্তত ১০টি স্থানে স্টেশন ও পথে পথে আটকে থাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীদের রাতভর অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত বগিগুলো রেল লাইনের পাশে এলোমেলোভাবে পড়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত আপ লাইনটি মেরামতের কাজ চলছিল। এদিকে দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ট্রেনের বগি আছড়েপড়ে ৩ হতদরিদ্রের বাড়িঘর ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাঙ্গলকোটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেন তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় গঠিত রেলওয়ের তদন্ত কমিটি রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
জানা গেছে, রোববার (১৭ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর-গুণবতী রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থান তেজের বাজার নামক স্থানে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর-ময়মনসিংহগামী ৭৮৫ নম্বর আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসময় প্রায় আধা-কিলোমিটার রেলপথ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের ৩টি বাড়িঘর। রাতে চট্টগ্রাম, আখাউড়া, লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন, ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট, কুমিল্লা জেলা ও নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসন দুর্ঘটনাস্থলে পৌছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসেন রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাতের অন্ধকারে লাইট জ্বালিয়ে রেলওয়ের শতাধিক শ্রমিক উদ্ধার তৎপরতা চালায়। দীর্ঘ প্রায় ১৫ ঘন্টা পর সোমবার ভোর ৫টার দিকে ডাউন লাইনে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করে।
এদিকে এ দুর্ঘটনার ফলে লালমাই স্টেশনে কর্ণফুলী, লাকসামে পাহাড়িকা, সাগরিকা, কুমিল্লায় চট্টলা, শশীদলে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়ে। এছাড়া আপ ডাউন লাইনে চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম থেকে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। এতে রোজার মাসের এ রাতভর শত শত নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ ও শিশুসহ ট্রেন যাত্রীকে বিভিন্ন স্টেশনে ও পথে পথে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এতে এ দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কেও রাতে যানবাহনে যাত্রীর চাপ বাড়ে।
এদিকে সোমবার (১৮ মার্চ) দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিছুর রহমানসহ কমিটির কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বিকালে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জামাল উদ্দিন জানান, সোমবার ভোর ৫টা থেকে ডাউন লাইন দিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রাতের মধ্যে ভারী ক্রেন লাগিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত বগিগুলোকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত আপ লাইনটি মেরামতের জন্য সোমবার বিকাল ৪টা থেকে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত (রাত ৭টা) বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে স্থানীয়রা বলেন, আপ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাইনটির ¯িøপার লাইনের আশপাশে পড়ে আছে। কিছু অংশে রেললাইনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এলাকাবাসী বলছেন, নি¤œমানের ¯িøপার দেওয়া, নাট-বল্টু ঠিক না থাকার কারণে ত্রæটি ছিল লাইনে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। একই এলাকায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সোনার বাংলা ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। ওই দুর্ঘটনাতেও বগি লাইনচ্যুত হয়। আহত হন অনেকে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেন জানান, বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার এলাকায় দুর্ঘটনা কবলিত হলে পাশে থাকা ২টি বসতবাড়িতে গিয়ে আঘাত লেগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদের মধ্যে স্বপন মিয়া, মরিয়ম বেগম ও চাঁন মিয়া-মনোয়ারা দম্পতিকে তাদের ঘর মেরামত করার জন্য ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে। তিনি আরো জানান, সেই লক্ষ্যে সোমবার বিকালে ফের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকাসহ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করা হয়েছে।