পেটে গজ রেখেই সেলাই: মারা গেলেন সেই প্রসূতি
![](https://bangla-times.com/wp-content/themes/Newspaper%20pro/assets/images/reporter.jpg)
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৩০:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ ৬১ বার পড়া হয়েছে
নওগাঁয় এক প্রসূতির সিজারের সময় পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’বার আইসিইউতে থাকার পর মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সুমি খাতুন (৩৫)’র।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি করেছেন প্রতিবেশি ও নিহতের স্বজনরা। এ বিষয়ে চলতি মাসের ২০ মে এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর টনক নড়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে এখনো প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এর মাঝেই না মারা গেলেন প্রসূতি সুমি।
জানা যায়, চলতি মাসের ১৫ মে সকালে প্রসবব্যথা শুরু হলে নওগাঁ শহরের হাসপাতাল রোডে একতা ক্লিনিকে নেয়া হয় ওই প্রসূতিকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি। সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেন ডা. তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. আদনান ফারুক। সিজারের পর ওই সুমি তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডা. তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগীর পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তারপর রাত ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয় সুমিকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতেই পরীক্ষা করে জানা যায়, সুমির পেটে কিছু রয়েছে। পরদিন সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করা হয়। এর ১৩দিন পর মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে মারা গেলেন সুমি। তার এমন মৃত্যুতে শোকের নেছে এসেছে আত্রাই উপজেলার সন্নাসবাড়ী গ্রামে। তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশি ও স্বজনরা।
![](https://i0.wp.com/bangla-times.com/wp-content/uploads/2024/05/Naogaon-1-1024x603.webp?resize=1024%2C603&ssl=1)
প্রতিবেশী ফারজানা খাতুন বলেন, সুমির পেটে ব্যথা উঠলো ভর্তি করা হলো সিজারের জন্য। কিন্তু সিজার করার কারনে কিভাবে প্রসূতি মারা যায়। অবশ্যই ভুল ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তানাহলে কেনো উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে রেফার্ড করা হলো। আর কতো মানুষ অপ-চিকিৎসার কারনে মারা যাবে। দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক এসব চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের।
নিহত সুমি খাতুনের খালা ফাহিমা বেগম বলেন, ভুল চিকিৎসা দিয়ে আমার ভাগিনীকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনটি বাচ্চার এখন কি হবে। সদ্যজাত সন্তান তো পৃথিবীর আলো দেখার পরই মাকে হারিয়ে ফেলেছে। ভুল চিকিৎসার জন্যই সুমির মৃত্যু হয়েছে। এর সাথে জড়িত সবার কঠিণ শাস্তি চাই আমরা।
নিহত সুমির খাতুনের মা রহিমা বেগম বেগম বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্তরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে টাকার অফার দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন প্রথমে সুমিকে দেখেছিলো তখনই বলেছিলো এই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ, নওগাঁয় সঠিকভাবে সিজারিয়ান করা হয়নি। তারপর যখন সেখানে অপারেশন করলো তখন ডাক্তাররা জানায় সুমির পেটে গজ ছিলো। যে কারনে শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। দুইবার আইসিইউতে নেয়ার পরো আমার মেয়েটাকে বাঁচানো পারলাম না। আমার মেয়েটাকে নওগাঁর একতা ক্লিনিকে গরুকে সেলাই করার মতো সেলাই করেছিলো। তাদের ভুল চিকিৎসা ছিল। অভিযুক্ত ডাক্তার, ক্লিনিক মালিক ও এর সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আর যেন আমার সুমির মত কারো ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু না হয়।
অভিযুক্ত ডা. তানিয়া রহমান তনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। প্রয়োজনে ডাক্তারদের সংগঠন বা সিভিল সার্জন এর সাথে কথা বলতে পারেন। আমার যা বলার আমি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছি।
সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক স্যারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।