ঢাকা ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌপথে অশান্ত মৌসুম, নিরাপদ নৌযাত্রা নিশ্চিত হয়নি

শাহ জালাল, বরিশাল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বরিশালসহ উপকূলভাগ জুড়ে দুর্যোগপূর্ণ অশান্ত মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৫ বছরে সরকারী আর্থিক সহাতায় রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসির জন্য নতুন ১২টি সী-ট্রাক ছাড়াও ৩টি উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ এবং আরো দুটি পুণর্বাসন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

কিন্তু ইজারাদারের মাধ্যমে যথেচ্ছ পরিচালনা এবং সুষ্ঠু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে চরম উদাসীনতাসহ দুর্ণীতির কারণে ‘চলাচল অযোগ্য’ বলে ইতোমধ্যে ৪টি সী ট্রাক বিক্রী করা হয়েছে। অথচ বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর, মির্জাকালু-চরআলেকজান্ডার এবং চরদোয়ানী-বড়মাছুয়া-সন্যাশীর মত অতি জনগুরুত্বপূর্ণ রুট সমুহে নিরাপদ নৌযোগাযোগ অনুপস্থিত।

বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে পরিচালনা ব্যয়ের ওপর ভর্তুকি হিসেবে সরকার প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসিকে ৫০ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করছে। এমনকি উপকূলীয় নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ১৯৯৮ সাল থেকে ১২টি নতুন সী-ট্রাক সংগ্রহে অর্থায়ন করে সরকার।

উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে বেসরকারী সেক্টরের অংশগ্রহন খুব নগণ্য বিধায় সরকার রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠাটিকে নৌযান সংগ্রহ ও পরিচালনে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। সরকারী সিদ্ধান্তানুযায়ী প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ‘অশান্ত মৌসুমে’ দেশের উপকূলভাগকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে ‘বিশেষ কারিগরি ব্যবস্থা সম্বলিত’ নিরাপদ উপকূলীয় নৌযান হিসেবে নিবন্ধিত ছাড়া অন্যসব নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলে সরকারী অর্থে নতুন যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ সহ মেরামত ও পুণর্বাসন করা হলেও ২০১১ সালের মে মাস থেকে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-স›দ্বীপ-চট্টগ্রাম উপকূলীয় রুটে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। ২০০১ সালে চীনা ঋনে ‘এমভি বার আউলীয়া’ সংগ্রহ করা হয়। এমনকি নির্ধারিত সময়ের ৪ বছর পরে ২০২১ সনের শেষভাগে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করা হলেও সংস্থাটি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে আর যাত্রী পরিবহন শুরু করেনি। তুলনামুলকভাবে ছোট মাপের ইঞ্জিন সংযোজন করায় দুটি নৌযানেরই গতি অনেক কম। ফলে তা ভাটি মেঘনা অতিক্রম করে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক বাড়তি সময় ও জ¦ালানীর প্রয়োজন হয় বিধায় ২০২১ সনে ডিসেম্বরে ট্রায়াল ট্রিপের পরে আর বানিজ্যিক পরিচালন সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তি মির্জাকালু-চর আলেকজান্ডার রুটের সী-ট্রাক সার্ভিসগুলিও। বরগুনার চরদোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সন্যাশী পর্যন্ত সী-ট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপকূলীয় এলাকাটির সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবীও দীর্ঘদিনের।

এদিকে সংস্থাটির ১৪টি সী-ট্রাকের ইতোমধ্যে ৪টি বিক্রী হয়ে গেছে। এরমধ্যে বিআইডব্লিউটিসি’র সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ১০টি সী-ট্রাকের মাত্র ৫টি ইজারার মাধ্যমে চলছে। দুটি সংস্থার নিজস্ব ডকইয়ার্ডে এবং অপর ৩টি টেকনাফ ও চট্টগ্রামে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধুমাত্র ‘এসটি খিজির-৫’ ও ‘এসটি খিজির-৮’ ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট এবং ‘এসটি আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ মনপুরা-শশিগঞ্জ, ‘এসটি ভাষা শহিদ জব্বার’ ভাষানচর-বয়ারচর এবং ‘এসটি শেখ ফজলুল হক মনি’ বয়ারচর-হাতিয়া রুটে চলছে।

‘এসটি শেখ রাসেল ও এসটি মিতালী’ দীর্ঘদিন ধরে সংস্থা ১ ও ৩ নম্বর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ ও ‘এসটি ভাষা শহিদ সালাম’ টেকনাফে পড়ে আছে গত ১৫ মার্চ থেকে। অন্য রুটের পরিবর্তে ইজারাদারের ইচ্ছায় এতদিন এ দুটি সী-ট্রাক টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করেছে। ইতোপূর্বে বরিশাল থেকে ইলিশা ঘাট হয়ে মজু চৌধুরীর হাট রুটে সংস্থাটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘এসটি খিজির-৮’ চলাচল করলেও ইজারাদারের কাছে তুলে দেবার পরে তা ইলিশাঘাট ও মজু চৌধুরীর হাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বরিশাল থেকে দ্রæত ও নিরাপদে চট্টগ্রামে পৌঁছার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।

এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপকূলীয় নৌযোগাযোগ আরো নিরাপদ ও সম্প্রসারনে ইচ্ছে থাকলেও নানান সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে ‘নানান সীমাদ্ধতা’ সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। দায়িত্বশীল মহল থেকে ‘অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয়’ বলেও জানান হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

নৌপথে অশান্ত মৌসুম, নিরাপদ নৌযাত্রা নিশ্চিত হয়নি

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

বরিশালসহ উপকূলভাগ জুড়ে দুর্যোগপূর্ণ অশান্ত মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৫ বছরে সরকারী আর্থিক সহাতায় রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসির জন্য নতুন ১২টি সী-ট্রাক ছাড়াও ৩টি উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ এবং আরো দুটি পুণর্বাসন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

কিন্তু ইজারাদারের মাধ্যমে যথেচ্ছ পরিচালনা এবং সুষ্ঠু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে চরম উদাসীনতাসহ দুর্ণীতির কারণে ‘চলাচল অযোগ্য’ বলে ইতোমধ্যে ৪টি সী ট্রাক বিক্রী করা হয়েছে। অথচ বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর, মির্জাকালু-চরআলেকজান্ডার এবং চরদোয়ানী-বড়মাছুয়া-সন্যাশীর মত অতি জনগুরুত্বপূর্ণ রুট সমুহে নিরাপদ নৌযোগাযোগ অনুপস্থিত।

বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে পরিচালনা ব্যয়ের ওপর ভর্তুকি হিসেবে সরকার প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসিকে ৫০ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করছে। এমনকি উপকূলীয় নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ১৯৯৮ সাল থেকে ১২টি নতুন সী-ট্রাক সংগ্রহে অর্থায়ন করে সরকার।

উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে বেসরকারী সেক্টরের অংশগ্রহন খুব নগণ্য বিধায় সরকার রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠাটিকে নৌযান সংগ্রহ ও পরিচালনে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। সরকারী সিদ্ধান্তানুযায়ী প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ‘অশান্ত মৌসুমে’ দেশের উপকূলভাগকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে ‘বিশেষ কারিগরি ব্যবস্থা সম্বলিত’ নিরাপদ উপকূলীয় নৌযান হিসেবে নিবন্ধিত ছাড়া অন্যসব নৌযানের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলে সরকারী অর্থে নতুন যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ সহ মেরামত ও পুণর্বাসন করা হলেও ২০১১ সালের মে মাস থেকে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-স›দ্বীপ-চট্টগ্রাম উপকূলীয় রুটে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। ২০০১ সালে চীনা ঋনে ‘এমভি বার আউলীয়া’ সংগ্রহ করা হয়। এমনকি নির্ধারিত সময়ের ৪ বছর পরে ২০২১ সনের শেষভাগে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করা হলেও সংস্থাটি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে আর যাত্রী পরিবহন শুরু করেনি। তুলনামুলকভাবে ছোট মাপের ইঞ্জিন সংযোজন করায় দুটি নৌযানেরই গতি অনেক কম। ফলে তা ভাটি মেঘনা অতিক্রম করে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক বাড়তি সময় ও জ¦ালানীর প্রয়োজন হয় বিধায় ২০২১ সনে ডিসেম্বরে ট্রায়াল ট্রিপের পরে আর বানিজ্যিক পরিচালন সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তি মির্জাকালু-চর আলেকজান্ডার রুটের সী-ট্রাক সার্ভিসগুলিও। বরগুনার চরদোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সন্যাশী পর্যন্ত সী-ট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপকূলীয় এলাকাটির সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবীও দীর্ঘদিনের।

এদিকে সংস্থাটির ১৪টি সী-ট্রাকের ইতোমধ্যে ৪টি বিক্রী হয়ে গেছে। এরমধ্যে বিআইডব্লিউটিসি’র সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ১০টি সী-ট্রাকের মাত্র ৫টি ইজারার মাধ্যমে চলছে। দুটি সংস্থার নিজস্ব ডকইয়ার্ডে এবং অপর ৩টি টেকনাফ ও চট্টগ্রামে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধুমাত্র ‘এসটি খিজির-৫’ ও ‘এসটি খিজির-৮’ ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট এবং ‘এসটি আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ মনপুরা-শশিগঞ্জ, ‘এসটি ভাষা শহিদ জব্বার’ ভাষানচর-বয়ারচর এবং ‘এসটি শেখ ফজলুল হক মনি’ বয়ারচর-হাতিয়া রুটে চলছে।

‘এসটি শেখ রাসেল ও এসটি মিতালী’ দীর্ঘদিন ধরে সংস্থা ১ ও ৩ নম্বর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ ও ‘এসটি ভাষা শহিদ সালাম’ টেকনাফে পড়ে আছে গত ১৫ মার্চ থেকে। অন্য রুটের পরিবর্তে ইজারাদারের ইচ্ছায় এতদিন এ দুটি সী-ট্রাক টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করেছে। ইতোপূর্বে বরিশাল থেকে ইলিশা ঘাট হয়ে মজু চৌধুরীর হাট রুটে সংস্থাটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘এসটি খিজির-৮’ চলাচল করলেও ইজারাদারের কাছে তুলে দেবার পরে তা ইলিশাঘাট ও মজু চৌধুরীর হাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বরিশাল থেকে দ্রæত ও নিরাপদে চট্টগ্রামে পৌঁছার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।

এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপকূলীয় নৌযোগাযোগ আরো নিরাপদ ও সম্প্রসারনে ইচ্ছে থাকলেও নানান সীমাবদ্ধতায় তা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে ‘নানান সীমাদ্ধতা’ সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। দায়িত্বশীল মহল থেকে ‘অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয়’ বলেও জানান হয়েছে।