তিন বছরে দুই সিটির ময়লাবাহী গাড়ি চাপায় ১৩ জনের মৃত্যু
![](https://bangla-times.com/wp-content/themes/Newspaper%20pro/assets/images/reporter.jpg)
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেপরোয়া ময়লার গাড়ি কেড়ে নলো আরও এক মেধাবী স্কুলছাত্রের প্রাণ। নিহত মাহিন আহমেদ (১৩) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলো।
রাজধানীল মদিনাবাগ বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আহত হয় মাহিন। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ নিয়ে গত তিন বছরে ঢাকার দুই সিটির ময়লাবাহী গাড়ি চাপায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর বুহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) নিহত শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদের বাসায় যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের পাশে থাকা এবং দুর্ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন মেয়র।
এ সময় তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত চালক গাড়িটি চালাচ্ছিলো না। অন্যকে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি দেয়া হয়েছে। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না।
জানা গেছে, নিহত মাহিন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাসুম মিয়ার ছেলে। সে পরিবারের সাথে মুগদা মামা ভাগিনা গলি এলাকায় থাকতো। মাহিন তিন ভাইবোনের মধ্যে মেঝো।
নিহতের বড় ভাই মাহফুজ আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মাহিন বাসা থেকে বেরিয়ে এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিলো। এ সময় মদিনাবাগ বাজার এলাকায় সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় সে। প্রথমে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে ঢামেকে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২ টায় মারা যায় সে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
তিন বছরে ১৩ জনের প্রাণহানি : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় গত তিন বছরে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়ি চাপায় গুলিস্তানে প্রাণ হারায় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান।
এর পরদিন ২৫ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের মৃত্যু হয়। সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমের মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলো শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী ২০২৩ সালের ৬ মার্চ গাড়িচাপায় মারা যান একজন কাপড় ব্যবসায়ী। নিহতের নাম -আবু তৈয়ব (২৬) । ময়লার গাড়ি দুর্ঘটনায় ২০২২ সালে অন্তত ৪ জন মারা যান। একই বছরের দুই এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক নারী নিহত হন। তার নাম-নাসরিন খানম।
রাজধানীর মহাখালীর উড়াল সড়কের কাছে ২৩ জানুয়ারি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যু হয়। নিহতের নাম-শিখা রানী ঘরামি। তিনি ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন।
একই বছরের জুলাইয়ে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের সামনে ময়লার গাড়ির চাপায় সাব্বির আহমেদ নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়। ওই বছরের ৩১ মে রাতে মুগদার টিটিপাড়া মোড়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় এক পথচারী নারীর মৃত্যু হয়। তার নাম-নাজমা বেগম।
২০২১ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় ৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এরমধ্যে জানুয়ারিতে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দয়াগঞ্জ মোড়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) টেলিফোন বিভাগের কর্মী খালিদ। এপ্রিল মাসে যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচায় দক্ষিণ সিটির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় মারা যান এক রিকশাচালক। তখন ক্ষুব্ধ লোকজন ময়লার গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
এছাড়া ২০২১ সালের মে মাসে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় ময়লার গাড়ির চাপায় একজন মারা যান। ৯ আগস্ট রাজধানীল শ্যামপুরের দোলাইরপাড় এলাকায় এক পোশাক কর্মী মারা যান। একদিনের ব্যবধানে মারা যান নাঈম হাসান ও আহসান কবির খান। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ারী এলাকায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। তার নাম-স্বপন কুমার সরকার।