ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তনু হত্যা/ বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান পরিবার

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৭৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর পূর্ণ হবে বুধবার (২০ মার্চ)। তবে দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিরা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

এ অবস্থায় তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর পরিবার ও কলেজের সহপাঠীরা। তারা বলছেন, তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া মামলাটির তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি গত আট বছরে দেখেননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছি। প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি। এরই মধ্যে কয়েকবার হাসপাতালেও গেছি। প্রতি মূহুর্তে মনে হয় এই বুঝি মরে গেলাম। আমার বয়স হয়েছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে তনুর খুনিদের বিচারটা দেখে যেতে পারব না। নামাজে প্রতিদিন দোয়া করি, মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার যেন আল্লাহ করেন। আমরা গরিব মানুষ, তাই বিচার পাওয়ার আশা এখন ছেড়েই দিয়েছি। যদি কারোর উসিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেতাম তাহলেও মনে শান্তি পেতাম।

তনুর পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, খুনের আট বছরে চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোনো আশার আলো দেখতে পাননি তারা। শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং ডিবির পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূল-কিনারা পায়নি। সর্বশেষ পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকার সদর দপ্তরে হস্তান্তর করে সিআইডি। বর্তমানে সেখানে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তনুর পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেছেন তারা।

এদিকে তনুর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত সোমবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাব। কিন্তু এখনো খুনিরাই শনাক্ত হলো না। খুনিদের দ্রæত শনাক্ত করে বিচার হোক এটাই আমার কথা। খুনিদের বিচার না হলে মরেও শান্তি পাব না।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রসঙ্গে আনোয়ারা বেগম বলেন, পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে। মামলা কী অবস্থায় আছে সেটাও জানি না আমরা। গরিবের কী বিচার আছে আল্লাহ ছাড়া।

তনু হত্যা মামলাটি বর্তমানে হিমাগারে রয়েছে বলে মন্তব্য করে কুমিল্লার ণারী নেত্রী ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসমা রত্মা বলেন, পুরো জাতি চাঞ্চল্যকর তনু হত্যাকান্ডের বিচার চায়। মানুষের মনে এই ঘটনার রেশ রয়ে গেছে। ২০ মার্চ কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে আছে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে সব তথ্য আর খুনিরা সামনে আসতে এতো সময় লাগার কথা না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সদর দপ্তরের পরিদর্শক মজিবুর রহমান বলেন, মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে তদন্ত করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে।

পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তদন্তভার নেওয়ার পর সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শক্রমে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তনুর পরিবার, স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্তে কোনো অবহেলা করছি না।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তনু। পরে খোঁজাখুঁজি করে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোপের মধ্যে তনুর লাশ পাওয়া যায়। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

তনু হত্যা/ বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান পরিবার

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর পূর্ণ হবে বুধবার (২০ মার্চ)। তবে দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিরা এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

এ অবস্থায় তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর পরিবার ও কলেজের সহপাঠীরা। তারা বলছেন, তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া মামলাটির তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি গত আট বছরে দেখেননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছি। প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি। এরই মধ্যে কয়েকবার হাসপাতালেও গেছি। প্রতি মূহুর্তে মনে হয় এই বুঝি মরে গেলাম। আমার বয়স হয়েছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে তনুর খুনিদের বিচারটা দেখে যেতে পারব না। নামাজে প্রতিদিন দোয়া করি, মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার যেন আল্লাহ করেন। আমরা গরিব মানুষ, তাই বিচার পাওয়ার আশা এখন ছেড়েই দিয়েছি। যদি কারোর উসিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেতাম তাহলেও মনে শান্তি পেতাম।

তনুর পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, খুনের আট বছরে চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোনো আশার আলো দেখতে পাননি তারা। শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং ডিবির পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূল-কিনারা পায়নি। সর্বশেষ পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকার সদর দপ্তরে হস্তান্তর করে সিআইডি। বর্তমানে সেখানে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তনুর পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেছেন তারা।

এদিকে তনুর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত সোমবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাব। কিন্তু এখনো খুনিরাই শনাক্ত হলো না। খুনিদের দ্রæত শনাক্ত করে বিচার হোক এটাই আমার কথা। খুনিদের বিচার না হলে মরেও শান্তি পাব না।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রসঙ্গে আনোয়ারা বেগম বলেন, পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে। মামলা কী অবস্থায় আছে সেটাও জানি না আমরা। গরিবের কী বিচার আছে আল্লাহ ছাড়া।

তনু হত্যা মামলাটি বর্তমানে হিমাগারে রয়েছে বলে মন্তব্য করে কুমিল্লার ণারী নেত্রী ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসমা রত্মা বলেন, পুরো জাতি চাঞ্চল্যকর তনু হত্যাকান্ডের বিচার চায়। মানুষের মনে এই ঘটনার রেশ রয়ে গেছে। ২০ মার্চ কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে আছে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে সব তথ্য আর খুনিরা সামনে আসতে এতো সময় লাগার কথা না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সদর দপ্তরের পরিদর্শক মজিবুর রহমান বলেন, মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে তদন্ত করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে।

পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তদন্তভার নেওয়ার পর সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শক্রমে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তনুর পরিবার, স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্তে কোনো অবহেলা করছি না।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তনু। পরে খোঁজাখুঁজি করে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোপের মধ্যে তনুর লাশ পাওয়া যায়। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।