ঢাকা ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমে উঠেছে ঘোড়ার মেলা, ‘সম্রাট’র দাম ৩ লাখ

আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:১৯:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তীব্র তাপদাহের মধ্যেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা জমে উঠেছে। মাসব্যাপি মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর আনন্দের কমতি নেই। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে লালন করতে পারা সবার দায়িত্ব বলেও মনে করেন এলাকাবাসি ।

ফুলবাড়ী হাট থেকে ৮/৯ কি.মি.দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং বারাই হাট থেকে ৫/৬ কি.মি.দক্ষিণে ২ নম্বর আলাদীপুর ইউনিয়নে ২শ’ বছর ধরে বসে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন মেলা।

প্রতি বছর বাংলা নতুন সন হিসেবে বৈশাখ মাসের ৯/১০ তারিখ থেকে শুরু হয় মাসব্যাপী এই মেলা। বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখ থেকে কেনাবেচার রসিদ কাটা হয় (ছাপা বের হয়)। মূল মেলা একমাস হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন।

ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয় এ মেলায়।তবে এখন গরু-মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মূলত ঘোড়ার মেলা হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধ।

আয়োজকরা বলেন, দেশের অন্যতম ঘোড়া বেচাকেনার মেলা এটি।এই মেলার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে ৮ একর জমি-মাঠ।এখানে মাদরাসা-স্কুলের প্রশস্ত মাঠে যেমন হাট বসে তেমনি তহসিল অফিস,ডাকঘর,সমবায় অফিস,ক্লিনিক,খেলার মাঠ,ইউপি অফিস এসবের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। এ কারণে সারাদেশ থেকে আনা কয়েক শ’ ঘোড়া জড়ো করা হয় এখানে। এটিকে ঘোড়ার মিলনমেলা বললেও অত্যুক্তি হবে না।

দুমকি,সিডর,দুর্বার,বিজলি, কিরন মালা, রানী, সুইটি আরও কত যে বাহারি নাম। ওদের ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকী চলনে বিদ্যুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট। পছন্দের ঘোড়াকে পেতে ক্রেতাদের মধ্যেও চলে রীতিমতো কাড়াকাড়ি আর দর কষাকষি। ক্রেতা বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা । দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।

স্থানীয় ৭৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সাবেক আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মে. দছিম উদ্দীন মন্ডল জানান, এ মেলায় লালমনির হাট,গাইবান্ধা,নীলফামারী,রংপুর,কুড়িগ্রাম,ঠাকুগাঁও, বগুড়া, দিনাজপুর, পাবনা, জয়পুর হাট, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়ার আমদানি হয় এ মেলায়।

নওগাঁর ধামইর হাট থেকে এসেছেন গোলাম মোস্তফা(৫০)। সর্ব্বোচ্চ দামের ঘোড়াটি তিনি বিক্রি করতে এনেছেন। ‘সম্রাট’ নামের ১২ বছর বয়সের লাল ঘোড়ানিয়ে এসেছেন মঙ্গলবার। দাম হাকিয়েছেন ৩ লাখ। ২ লাখ পর্যন্ত করছেন। এটি রেসিং ঘোড়া। দ্রæত দৌঁড়াতে পারে । ঘোড়াটির যত্ন তিনি নিজেই নেন। ৪০ বছর ধরে এ মেলায় আসেন বলে জানালেন।

নওগাঁর সাপাহারথেকে আসা বারেক মোস্তাকিম মিয়া ১২ টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন বুধবার। এখনো বিক্রি করার মত আলাপ করতে পারেননি।তবে বিকেল কিংবা আগামী কালের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করছেন। গাইবান্ধা থেকে আসা সেহাগ,ছমেজ উদ্দীন জানান, তিনি ২৫ বছর ধরে মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন এখানে। এবার তিনি চারটি ঘোড়া এনেছেন, সবগুলো বিক্রি করবেন।

ঘোড় সওয়ারি আলম,সামছুল ,রংপুরের রফিকুল ইসলাম ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আগেও তাদের বাপ-দাদারা এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করতেন, পূর্ব পুরুষের সূত্র ধরে তারাও আগলে রেখেছেন সেই পারিবারিক ঐতিহ্য। আগে ঘোড়ার হাট ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঘোড় দৌড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ থাকলেও বর্তমানে সেই স্থানটি সংকুচিত করা হয়েছে বলে ঘোড়া বেচাকেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

২ নম্বর আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির অন্যতমমো. নাজমুস সাকির বাবলু জানান, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এতো বড় পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই বলেও জানান তিনি।

ফুলবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আবুল হাসান আজাদ জানান, ২শ’ বছরের পুরনো এ মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসত। বর্তমানে সেসব এখন স্মৃতির পাতায় হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান,প্রথমে মেলা অনুমোদন নিয়ে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে মেলায় বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন রয়েছে।

ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মোহা. জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ডিসি অফিস থেকে মেলার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলায় আগামীকাল (২৭ এপ্রিল) থেকে কেনাবেচার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

জমে উঠেছে ঘোড়ার মেলা, ‘সম্রাট’র দাম ৩ লাখ

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:১৯:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র তাপদাহের মধ্যেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা জমে উঠেছে। মাসব্যাপি মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর আনন্দের কমতি নেই। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে লালন করতে পারা সবার দায়িত্ব বলেও মনে করেন এলাকাবাসি ।

ফুলবাড়ী হাট থেকে ৮/৯ কি.মি.দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং বারাই হাট থেকে ৫/৬ কি.মি.দক্ষিণে ২ নম্বর আলাদীপুর ইউনিয়নে ২শ’ বছর ধরে বসে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন মেলা।

প্রতি বছর বাংলা নতুন সন হিসেবে বৈশাখ মাসের ৯/১০ তারিখ থেকে শুরু হয় মাসব্যাপী এই মেলা। বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখ থেকে কেনাবেচার রসিদ কাটা হয় (ছাপা বের হয়)। মূল মেলা একমাস হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন।

ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয় এ মেলায়।তবে এখন গরু-মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় মূলত ঘোড়ার মেলা হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধ।

আয়োজকরা বলেন, দেশের অন্যতম ঘোড়া বেচাকেনার মেলা এটি।এই মেলার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে ৮ একর জমি-মাঠ।এখানে মাদরাসা-স্কুলের প্রশস্ত মাঠে যেমন হাট বসে তেমনি তহসিল অফিস,ডাকঘর,সমবায় অফিস,ক্লিনিক,খেলার মাঠ,ইউপি অফিস এসবের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। এ কারণে সারাদেশ থেকে আনা কয়েক শ’ ঘোড়া জড়ো করা হয় এখানে। এটিকে ঘোড়ার মিলনমেলা বললেও অত্যুক্তি হবে না।

দুমকি,সিডর,দুর্বার,বিজলি, কিরন মালা, রানী, সুইটি আরও কত যে বাহারি নাম। ওদের ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকী চলনে বিদ্যুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট। পছন্দের ঘোড়াকে পেতে ক্রেতাদের মধ্যেও চলে রীতিমতো কাড়াকাড়ি আর দর কষাকষি। ক্রেতা বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা । দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।

স্থানীয় ৭৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সাবেক আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মে. দছিম উদ্দীন মন্ডল জানান, এ মেলায় লালমনির হাট,গাইবান্ধা,নীলফামারী,রংপুর,কুড়িগ্রাম,ঠাকুগাঁও, বগুড়া, দিনাজপুর, পাবনা, জয়পুর হাট, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়ার আমদানি হয় এ মেলায়।

নওগাঁর ধামইর হাট থেকে এসেছেন গোলাম মোস্তফা(৫০)। সর্ব্বোচ্চ দামের ঘোড়াটি তিনি বিক্রি করতে এনেছেন। ‘সম্রাট’ নামের ১২ বছর বয়সের লাল ঘোড়ানিয়ে এসেছেন মঙ্গলবার। দাম হাকিয়েছেন ৩ লাখ। ২ লাখ পর্যন্ত করছেন। এটি রেসিং ঘোড়া। দ্রæত দৌঁড়াতে পারে । ঘোড়াটির যত্ন তিনি নিজেই নেন। ৪০ বছর ধরে এ মেলায় আসেন বলে জানালেন।

নওগাঁর সাপাহারথেকে আসা বারেক মোস্তাকিম মিয়া ১২ টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন বুধবার। এখনো বিক্রি করার মত আলাপ করতে পারেননি।তবে বিকেল কিংবা আগামী কালের মধ্যে হয়ে যাবে বলে আশা করছেন। গাইবান্ধা থেকে আসা সেহাগ,ছমেজ উদ্দীন জানান, তিনি ২৫ বছর ধরে মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন এখানে। এবার তিনি চারটি ঘোড়া এনেছেন, সবগুলো বিক্রি করবেন।

ঘোড় সওয়ারি আলম,সামছুল ,রংপুরের রফিকুল ইসলাম ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আগেও তাদের বাপ-দাদারা এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করতেন, পূর্ব পুরুষের সূত্র ধরে তারাও আগলে রেখেছেন সেই পারিবারিক ঐতিহ্য। আগে ঘোড়ার হাট ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঘোড় দৌড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ থাকলেও বর্তমানে সেই স্থানটি সংকুচিত করা হয়েছে বলে ঘোড়া বেচাকেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

২ নম্বর আলাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির অন্যতমমো. নাজমুস সাকির বাবলু জানান, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এতো বড় পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই বলেও জানান তিনি।

ফুলবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আবুল হাসান আজাদ জানান, ২শ’ বছরের পুরনো এ মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসত। বর্তমানে সেসব এখন স্মৃতির পাতায় হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান,প্রথমে মেলা অনুমোদন নিয়ে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে মেলায় বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন রয়েছে।

ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) মোহা. জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ডিসি অফিস থেকে মেলার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুড়াচিন্তামন ঘোড়ার মেলায় আগামীকাল (২৭ এপ্রিল) থেকে কেনাবেচার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।