চেয়ারম্যান ময়নার দুর্নীতি/ খাসপুকুর দখল ও এডিবি প্রকল্পের টাকাও নয়ছয়
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪ ৯১ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রশিদ হায়দার ময়না প্রথমবার নির্বাচিত হয়েই নিজের আখের গুছিয়েছেন। দলীয় প্রভাবে খাসপুকুর দখল ও এডিবি প্রকল্প লোপাটের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় ও নিয়োগ তদবিরসহ তার বিরুদ্ধে নানা কৌশলে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা কামাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। এভাবে টাকা কামিয়ে তিনি গড়েছেন অঢেল সম্পদ। কিন্তু জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি কিছুই বাস্তবায়ন করেননি তিনি। ফলে চেয়ারম্যান ময়নার সফলতার চেয়ে ব্যর্থতায় বেশি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসি অনেকে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাপ পিরিচ প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান ময়না এবারও প্রার্থী হয়েছেন। রাজশাহী-১ আসনের এমপি ফারুক চৌধুরী ও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ময়নাকেই সমর্থন দিয়েছেন। তবে আইনি বাধার কারণে এমপি প্রকাশ্যে পারছেন না ভোট চাইতে।
২০০৩ সালে তানোর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ময়না। এসুবাদে দুইবার কলমা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সাল থেকে তিনি তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। ২০১৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ময়নার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ এলাকার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন বানু।
২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসককে লেখা অভিযোগে তৎকালীন ইউএনও উল্লেখ করেন, প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনতে গেলে ময়না তাতে বাধা দেন। এছাড়া চেয়ারম্যান নিজেই সিন্ডিকেট করে গত কয়েক বছরে সরকারি গুদামে ধান, চাল ও গম সরবরাহ করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন। ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, উপজেলা রাজস্ব উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাস্তা মেরামতের নামে কাজ না করেই ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছাড় করার জন্য ইউএনওর ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন ময়না। এতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেন। একই অর্থবছরে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। চেয়ারম্যান সেই টাকা উত্তোলন করলেও বিতরণ করেননি।
এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য বরাদ্দ আসে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকাও উত্তোলন করে চেয়ারম্যান নিজের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন। তার মেয়াদকালে এভাবে ময়না বিভিন্ন প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকা নামে-বেনামে উত্তোলন করে জমি কেনাসহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন।
নির্বাচনি হলফনামায় নিজের পেশা ঠিকাদারি ও কৃষি বলে উল্লেখ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রশিদ হায়দার ময়না । কৃষি খাত থেকে তার বছরে আয় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র আছে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকার। আর চেয়ারম্যান হিসাবে বছরে সম্মানি পান ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ময়নার নগদ আছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫১ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৪ টাকা। স্থায়ী আমানত আছে ৩০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ১০ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ময়না পৈতৃক সূত্রে ২০ বিঘা জমির মালিক। আর হেবামূলে পেয়েছেন ১২ বিঘা অকৃষি জমি।
এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান ময়না বলেন, নির্বাচনের মাঠে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কুৎসা রটাতে নানা কথা বলে বেড়ায়। কিন্তু আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।