ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরি করেন কুষ্টিয়ায়, রোগী দেখেন রাজশাহী প্রাইভেট হাসপাতালে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪ ১২৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান রাজশাহীতে দিনের পর দিন একটি বেসরকারি প্রাইভেট ডায়গনস্টিক সেন্টারে রোগি দেখছেন। সপ্তাহে একদিন এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে দিয়ে আবার চলে যান।

অফিস ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিধি ভঙ্গ করে রাজশাহীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুপুর থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা রোগী দেখেন। এদিকে, অধ্যক্ষের মেডিকেল কলেজে না আসার সুযোগে রাম রাজত্ব কায়েম করছেন অফিস সহকারি জামান আহমেদ, হোস্টেল অ্যাটেনডেন্ট মারফিজা খাতুন রিতাসহ কয়েক জন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে মাস দু’য়েক আগে যোগদান করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। কুষ্টিয়া জেলায় বদলি হলেও তিনি রাজশাহীর মায়া কোন ভাবেই ত্যাগ করতে পারছেন না। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন। এ কারনে তিনি কুষ্টিয়ায় নিয়মিত অফিস করেন না।

মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে সপ্তাহে এক দিন রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ায় এসে অফিস করেন। এছাড়া রাষ্টীয় কোন অনুষ্ঠান থাকলে তখন আসেন। সে সময় জরুরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে যান।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেলে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল হাজির ব্যবস্থা থাকলে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অন্যরা যেখানে সময়মতো অফিস করেন সেখানে অধ্যক্ষের ডিজিটাল হাজিরা লাগে না। এদিকে দিনের পর দিন ঠিকমতো অফিস না করায় প্রশাসনিক কাজে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।

নানা অনিয়ম দীর্ঘদিন চললেও কোন প্রতিকার হচ্ছে। এদিকে অধ্যক্ষ রাজশাহীতে অবস্থান করায় প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হলেও দেখার কেউ নেই। সরকারি বিধি ভেঙ্গে দিনের পর তিনি রাজশাহীতে অবস্থান ছাড়াও সেখানে রোগী দেখছেন। যা আইনের পরিপস্থী।

অধ্যক্ষের হয়ে সব কিছু সামলান কয়েকজন শিক্ষক, অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মামুন ও অফিস সহকারি জামান। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকরা গেলে মামুন বলেন, স্যার ছুটিতে আছেন। আর অফিস সহকারি বলেন, তিনি বাইরে একটি অনুষ্ঠানে গেছেন। পরে তারা দুইজনই চেপে যান অধ্যক্ষের বিষয়টি নিয়ে।

সপ্তাহে ৫ দিন অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের থিসিস পরীক্ষা নিতে যেতে হয়, এছাড়াও মন্ত্রনালয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজ থাকে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ম্যাক্সিমাম দিনই থাকি। আমি না থাকলে শিক্ষকরা উনাদের মত কাজ করে নিতে পারেন।

একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি অনুপস্থিত থাকে সেই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমার থাকা বা না থাকা কোম বিষয় না। ক্লাস হচ্ছে কিনা, শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছে কিনা, ছাত্র-ছাত্রীদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা এটাই আসল বিষয়। আর আমি উপস্থিত না অনুপস্থিত সে বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন তাদের কাছে জবাবদিহি করব।

আপনি নিয়মিত সপ্তাহে পাঁচ দিন রাজশাহীতে রোগী দেখেন দুপুর আড়াইটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি রাজশাহীতে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রোগী দেখা শুরু করি। কুষ্টিয়াতে আপনার ডিউটি টাইম আড়াাইটা পর্যন্ত তাহলে সাড়ে চারটায় আপনি কিভাবে ওখানে রোগী দেখেন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

চাকরি করেন কুষ্টিয়ায়, রোগী দেখেন রাজশাহী প্রাইভেট হাসপাতালে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান রাজশাহীতে দিনের পর দিন একটি বেসরকারি প্রাইভেট ডায়গনস্টিক সেন্টারে রোগি দেখছেন। সপ্তাহে একদিন এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে দিয়ে আবার চলে যান।

অফিস ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিধি ভঙ্গ করে রাজশাহীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুপুর থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা রোগী দেখেন। এদিকে, অধ্যক্ষের মেডিকেল কলেজে না আসার সুযোগে রাম রাজত্ব কায়েম করছেন অফিস সহকারি জামান আহমেদ, হোস্টেল অ্যাটেনডেন্ট মারফিজা খাতুন রিতাসহ কয়েক জন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে মাস দু’য়েক আগে যোগদান করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। কুষ্টিয়া জেলায় বদলি হলেও তিনি রাজশাহীর মায়া কোন ভাবেই ত্যাগ করতে পারছেন না। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন। এ কারনে তিনি কুষ্টিয়ায় নিয়মিত অফিস করেন না।

মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে সপ্তাহে এক দিন রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ায় এসে অফিস করেন। এছাড়া রাষ্টীয় কোন অনুষ্ঠান থাকলে তখন আসেন। সে সময় জরুরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে যান।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেলে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল হাজির ব্যবস্থা থাকলে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অন্যরা যেখানে সময়মতো অফিস করেন সেখানে অধ্যক্ষের ডিজিটাল হাজিরা লাগে না। এদিকে দিনের পর দিন ঠিকমতো অফিস না করায় প্রশাসনিক কাজে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।

নানা অনিয়ম দীর্ঘদিন চললেও কোন প্রতিকার হচ্ছে। এদিকে অধ্যক্ষ রাজশাহীতে অবস্থান করায় প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হলেও দেখার কেউ নেই। সরকারি বিধি ভেঙ্গে দিনের পর তিনি রাজশাহীতে অবস্থান ছাড়াও সেখানে রোগী দেখছেন। যা আইনের পরিপস্থী।

অধ্যক্ষের হয়ে সব কিছু সামলান কয়েকজন শিক্ষক, অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মামুন ও অফিস সহকারি জামান। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকরা গেলে মামুন বলেন, স্যার ছুটিতে আছেন। আর অফিস সহকারি বলেন, তিনি বাইরে একটি অনুষ্ঠানে গেছেন। পরে তারা দুইজনই চেপে যান অধ্যক্ষের বিষয়টি নিয়ে।

সপ্তাহে ৫ দিন অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের থিসিস পরীক্ষা নিতে যেতে হয়, এছাড়াও মন্ত্রনালয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজ থাকে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ম্যাক্সিমাম দিনই থাকি। আমি না থাকলে শিক্ষকরা উনাদের মত কাজ করে নিতে পারেন।

একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি অনুপস্থিত থাকে সেই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমার থাকা বা না থাকা কোম বিষয় না। ক্লাস হচ্ছে কিনা, শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছে কিনা, ছাত্র-ছাত্রীদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা এটাই আসল বিষয়। আর আমি উপস্থিত না অনুপস্থিত সে বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন তাদের কাছে জবাবদিহি করব।

আপনি নিয়মিত সপ্তাহে পাঁচ দিন রাজশাহীতে রোগী দেখেন দুপুর আড়াইটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি রাজশাহীতে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রোগী দেখা শুরু করি। কুষ্টিয়াতে আপনার ডিউটি টাইম আড়াাইটা পর্যন্ত তাহলে সাড়ে চারটায় আপনি কিভাবে ওখানে রোগী দেখেন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।