ঢাকা ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরির লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করেন তারা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৩৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪ ৯০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তাদের টার্গেট হতদরিদ্র মানুষ। তারপর এইসব মানুষগুলোকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নেওয়া হয় ভারতে। সেখানে নিয়ে জিম্মি করে কৌশলে হাতিয়ে নেয়া হয় কিডনি। তবে হাতিয়ে নেয়া এসব কিডনির গ্রহীতারা বাংলাদেশি।

এরইমধ্যে কিডনি হাতিয়ে নেওয়া চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধানমণ্ডি থানায় রবিন নামে এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শনিবার (১১ মে) ধানমণ্ডি ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এবং বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো.রাজু হাওলাদার (৩২), মো.আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮) ও শাহেদ উদ্দীন (২২। তবে এই চক্রের সদস্য শাহীন (৩৫), মো.মাছুম (২৭) ও সাগর মোস্তফাসহ (৩৭) পলাতক।

ধানমণ্ডি থানা পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্র দেশের হতদরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করে দেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ নেয়া হয়। এরপর তাকে কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাকে ৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে। কিন্তু তাকে দেয় মাত্র তিনলাখ টাকা।

রোববার (১২ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন ও তার এক বন্ধু চা পান করছিলেন। এসময় পাশে থাকা ওই চক্রের সদস্য মাছুম বলেন, ভারতে তার ব্যবসা আছে। একপর্যায়ে মাছুমের সাথে পরিচিত হয়ে ফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাঝেমধ্যে কথাও হতো তাদের। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হয়ে যায় রবিন। মাছুম রবিনকে বলে, ভারতে চাকরির জন্য যেতে হলে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে রবিনকে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে রবিনের সাথে রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে তারা রবিনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেন ভারতের ভিসার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ভারতে ভিসার পর মাছুম ও রাজু ভুক্তভোগী রবিনকে চক্রের আরো দুই সদস্য শাহেদ উদ্দিন ও আতাহার হোসেন বাপ্পীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় রবিনকে। সেখানে থাকা শাহীন ও সাগর নামে দুইজন রবিনের পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে তাকে ফরিদাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়।

খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, একপর্যায়ে রবিনের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেয়ার জন্য প্ররোচিত করে মাছুম ও ওই চক্রের সদস্যরা। রবিন রাজি না হওয়ায় তােকে ভয়ভীতি দেখেনো হয়। পরে রবিনকে নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়। এর কিছুদিন পর রবিনকে ভারতের গুজরাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বাসায় তাকে রাখা হয়।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, চলতি বছরের ৪ মার্চ ভারতের গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রবিনের একটি কিডনি নেয়া হয়। চারদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও মুক্ত হতে পারেননি রবিন। এরপর তাকে ১০ থেকে ১১ দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়। হাসপাতালে থাকাকালীন রবিন জানতে পারেন, তার কিডনি ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা রবিনের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জানতে পেরেছি চক্রটি এই পর্যন্ত ১০ জনের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের পাইপলাইনে আরও ৫ থেকে ৬ জন রয়েছেন বলে এমন তথ্য জানতে পেরেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

চাকরির লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করেন তারা!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৩৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

তাদের টার্গেট হতদরিদ্র মানুষ। তারপর এইসব মানুষগুলোকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নেওয়া হয় ভারতে। সেখানে নিয়ে জিম্মি করে কৌশলে হাতিয়ে নেয়া হয় কিডনি। তবে হাতিয়ে নেয়া এসব কিডনির গ্রহীতারা বাংলাদেশি।

এরইমধ্যে কিডনি হাতিয়ে নেওয়া চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধানমণ্ডি থানায় রবিন নামে এক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শনিবার (১১ মে) ধানমণ্ডি ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে এবং বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো.রাজু হাওলাদার (৩২), মো.আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮) ও শাহেদ উদ্দীন (২২। তবে এই চক্রের সদস্য শাহীন (৩৫), মো.মাছুম (২৭) ও সাগর মোস্তফাসহ (৩৭) পলাতক।

ধানমণ্ডি থানা পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্র দেশের হতদরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করে দেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ নেয়া হয়। এরপর তাকে কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাকে ৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে। কিন্তু তাকে দেয় মাত্র তিনলাখ টাকা।

রোববার (১২ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন ও তার এক বন্ধু চা পান করছিলেন। এসময় পাশে থাকা ওই চক্রের সদস্য মাছুম বলেন, ভারতে তার ব্যবসা আছে। একপর্যায়ে মাছুমের সাথে পরিচিত হয়ে ফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাঝেমধ্যে কথাও হতো তাদের। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হয়ে যায় রবিন। মাছুম রবিনকে বলে, ভারতে চাকরির জন্য যেতে হলে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে রবিনকে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে রবিনের সাথে রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে তারা রবিনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেন ভারতের ভিসার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ভারতে ভিসার পর মাছুম ও রাজু ভুক্তভোগী রবিনকে চক্রের আরো দুই সদস্য শাহেদ উদ্দিন ও আতাহার হোসেন বাপ্পীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় রবিনকে। সেখানে থাকা শাহীন ও সাগর নামে দুইজন রবিনের পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে তাকে ফরিদাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়।

খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, একপর্যায়ে রবিনের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেয়ার জন্য প্ররোচিত করে মাছুম ও ওই চক্রের সদস্যরা। রবিন রাজি না হওয়ায় তােকে ভয়ভীতি দেখেনো হয়। পরে রবিনকে নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়। এর কিছুদিন পর রবিনকে ভারতের গুজরাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বাসায় তাকে রাখা হয়।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, চলতি বছরের ৪ মার্চ ভারতের গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রবিনের একটি কিডনি নেয়া হয়। চারদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও মুক্ত হতে পারেননি রবিন। এরপর তাকে ১০ থেকে ১১ দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়। হাসপাতালে থাকাকালীন রবিন জানতে পারেন, তার কিডনি ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা রবিনের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জানতে পেরেছি চক্রটি এই পর্যন্ত ১০ জনের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের পাইপলাইনে আরও ৫ থেকে ৬ জন রয়েছেন বলে এমন তথ্য জানতে পেরেছি।