ঢাকা ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালুরঘাট সেতুতে গাড়ি চলবে জুন-জুলাইয়ে

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলতি বছরের জুন বা জুলাইয়ে কালুরঘাট সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হতে পারে। সম্প্রতি কালবৈশাখীর তান্ডবে কালুরঘাট সেতুর ৯ ও ১০ নম্বর স্প্যানে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করা লাইটার জাহাজ ধাক্কা দেয়। এতে সেতুর আন্ডার ব্ল্যাং গার্ডার, ওয়াকওয়ে ও রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা সারাতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। সব মিলিয়ে পুরো সংস্কারকাজ শেষ করে গাড়ি চলাচল শুরু করতে দুইমাস লেগে যেতে পারে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বলেন, কোনদিন থেকে গাড়ি চলবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে জুন অথবা জুলাই থেকে গাড়ি চলতে পারে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-৮) আবদুচ ছালাম বলেন, আমার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শেষ হবে। কোরবানির ঈদের আগেই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিলো শতবর্ষী জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। শুরুতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল শুরু করে দেয়া হয়। এরপর দফায় দফায় ঘোষণা দিয়েও সেতুটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এটি নিয়ে খুব একটা ‘মাথাব্যথা’ দেখা যাচ্ছে না সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের।

জানা গেছে, কালুরঘাট সেতুর বিকল্প হিসেবে বর্তমানে দেয়া হয়েছে তিনটি ফেরি। এর মধ্যে একটি বিকল। বাকি দুটির মধ্যে প্রায় সময় অচল হয়ে পড়ে একটি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুপারের চালক-যাত্রীদের। এপার থেকে ওপারে যেতে যেমন সময় বেশি লাগে, ঠিক তেমনি রোদ বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুদফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিলো।

কালুরঘাট রেল সেতু আমলে নির্মিত হয় ১৯৩০ ব্রিটিশ সালে। ১৯৫৮ সালে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় উপজেলা ও কক্সবাজার-বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

ভোক্তাদের জাতীয় সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সময়ক্ষেপণ করা মানে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা উচিত। তারা যদি এভাবে কাজের সময় বাড়াতেই থাকে; তাহলে মানুষের দুর্ভোগের পাল্লাও বাড়বে। এছাড়া সময় যেভাবে বাড়বে তেমনি খরচও বাড়বে। এ প্রকল্পের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করেন; তাহলে জনগণের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রের-সরকারেরও লোকসান হচ্ছে। কেননা, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানে খরচ বেড়ে যাওয়া।

বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, দিনের পর দিন কাজ পেছাচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিকল্প হিসেবে যে ফেরি দেওয়া হয়েছে তাতেও কম ভোগান্তি নেই। প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কালুরঘাট সেতুতে গাড়ি চলবে জুন-জুলাইয়ে

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

চলতি বছরের জুন বা জুলাইয়ে কালুরঘাট সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হতে পারে। সম্প্রতি কালবৈশাখীর তান্ডবে কালুরঘাট সেতুর ৯ ও ১০ নম্বর স্প্যানে কর্ণফুলী নদীতে নোঙর করা লাইটার জাহাজ ধাক্কা দেয়। এতে সেতুর আন্ডার ব্ল্যাং গার্ডার, ওয়াকওয়ে ও রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা সারাতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। সব মিলিয়ে পুরো সংস্কারকাজ শেষ করে গাড়ি চলাচল শুরু করতে দুইমাস লেগে যেতে পারে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বলেন, কোনদিন থেকে গাড়ি চলবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে জুন অথবা জুলাই থেকে গাড়ি চলতে পারে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-৮) আবদুচ ছালাম বলেন, আমার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শেষ হবে। কোরবানির ঈদের আগেই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিলো শতবর্ষী জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। শুরুতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৫ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল শুরু করে দেয়া হয়। এরপর দফায় দফায় ঘোষণা দিয়েও সেতুটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এটি নিয়ে খুব একটা ‘মাথাব্যথা’ দেখা যাচ্ছে না সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের।

জানা গেছে, কালুরঘাট সেতুর বিকল্প হিসেবে বর্তমানে দেয়া হয়েছে তিনটি ফেরি। এর মধ্যে একটি বিকল। বাকি দুটির মধ্যে প্রায় সময় অচল হয়ে পড়ে একটি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুপারের চালক-যাত্রীদের। এপার থেকে ওপারে যেতে যেমন সময় বেশি লাগে, ঠিক তেমনি রোদ বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুদফা সেতু বন্ধ রেখে সংস্কার করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ও অন্যান্য যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছিলো।

কালুরঘাট রেল সেতু আমলে নির্মিত হয় ১৯৩০ ব্রিটিশ সালে। ১৯৫৮ সালে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় উপজেলা ও কক্সবাজার-বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

ভোক্তাদের জাতীয় সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সময়ক্ষেপণ করা মানে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা উচিত। তারা যদি এভাবে কাজের সময় বাড়াতেই থাকে; তাহলে মানুষের দুর্ভোগের পাল্লাও বাড়বে। এছাড়া সময় যেভাবে বাড়বে তেমনি খরচও বাড়বে। এ প্রকল্পের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করেন; তাহলে জনগণের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রের-সরকারেরও লোকসান হচ্ছে। কেননা, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানে খরচ বেড়ে যাওয়া।

বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, দিনের পর দিন কাজ পেছাচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। বিকল্প হিসেবে যে ফেরি দেওয়া হয়েছে তাতেও কম ভোগান্তি নেই। প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।